রাজধানী ঢাকার উপকণ্ঠ সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে (গবি) আয়োজিত হয়েছে পঞ্চম বারের মতো বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্য ধারণে পিঠা উৎসবের মহাযজ্ঞ অনুষ্ঠান।
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আয়োজনে এ পিঠা উৎসবের উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট সমাজসেবক মুহাম্মদ লুৎফর রহমান।
উৎসবে শিক্ষার্থীরা নানা নামের বাহারি নকশার মুখরোচক পিঠা নিয়ে হাজির হন। নারকেল পুলি, ইলিশ পিঠা, দুধ পুলি, ভাপা, পোয়া, পাটিসাপটা, ঘর কন্যা, কুটুম, হাতকুলিসহ মেলায় বাহারি পিঠার পাশাপাশি হরেক রকমের মিষ্টি, কেক, চা ও লাড্ডু বিক্রি করা হয়। এছাড়া চুড়ি, ফিতা এবং গোলাপ ফুলও বিক্রি হয়।
এসময় পিঠা উৎসবের স্টল প্রদর্শনীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন কৃষি অনুস, দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে ভেটেনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদ এবং তৃতীয় স্থান অধিকার করে যথাক্রমে সমাজ বিজ্ঞান ও সমাজকর্ম বিভাগ ও বাংলা বিভাগ। শেষে অতিথিবৃন্দ একে একে বিজয়ীদেরকে পুরস্কৃত করেন।
বিশেষ অতিথি মুহাম্মদ লুৎফর রহমান বলেন, ‘গণ বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের সম্পদ, এই এলাকার সম্পদ এবং দেশের সম্পদ। আপনারা এসেছেন এখানে পড়াশোনা করতে তাই লেখাপড়ার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করবেন। তিনি গণ বিশ্ববিদ্যালয় একদিন আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হবে এই আশাবাদও ব্যক্ত করেন।
পিঠা উৎসবের বিশেষ আকর্ষণ ছিল বিভিন্ন স্টলের সামনে সেলফি স্ট্যান্ড। খাতামুল খালিদ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘শহরের যান্ত্রিকতা ও ব্যস্ততার কারণে গ্রামীণ পিঠা হারিয়ে যাচ্ছে। সব স্টল এতো সুন্দর করে সাজানো হয়েছে মনে হচ্ছে এখন গ্রামেই আছি। এই উৎসবে নানাবাড়ি, দাদাবাড়ির সেই গ্রামের পিঠা খাওয়ার আমেজ ফিরে পেলাম।’
শিক্ষার্থীদের সাধুবাদ জানিয়ে সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন বলেন, ‘গণ বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরার ধারাবাহিকতায় আজকের এই পিঠা উৎসব। শিক্ষার্থীরা এতো কম সময়ে এই পিঠা উৎসবের আয়োজন করেছে তার জন্য কমিটির সদস্যসহ সকলকে ধন্যবাদ জানাই। গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।’
কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে প্রত্যেকটা স্টলের নামও ছিল বাহারি। টোনাটুনির পিঠাঘর, ঢেঁকির বৈঠকখানা, নাইওর, পিঠা জাদুঘর, পৌষের প্রেমসহ ২৭টি স্টল। শিক্ষার্থীরা বাঁশের চাটাই, খড়কুটো, কলাগাছ দিয়ে স্টলগুলো সাজিয়ে গ্রামীণ পরিবেশের আবহের সৃষ্টি করেছেন। আলপনা, বেলুন, প্ল্যাকার্ড আর ফেস্টুনে সাজানো হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ।
অনুষ্ঠানজুড়ে ছিল পিঠা প্রদর্শনী, গ্রামীণ খেলাধুলা, ডিবেট ক্লাবের আয়োজনে আঞ্চলিক বিতর্ক অনুষ্ঠান, সেরা স্টল নির্বাচন এবং পুরস্কার বিতরণ। বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও মিউজিক সোসাইটির পরিবেশনায় নৃত্য ও লোকগান পরিবেশন করা হয়।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. সিরাজুল ইসলাম, রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ এস তাসাদ্দেক আহমেদ, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. আবু হারিস, বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (গবিসাস) উদ্যোগে প্রথমবারের মতো পিঠা উৎসব হয়। এরপর ২০১৭ ও ২০২০ সালে এ উৎসবের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ। সর্বশেষ, গত বছর গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে এ আয়োজন সম্পন্ন হয়।
এআরএস