নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের ভর্তি পরীক্ষা বন্ধের আল্টিমেটাম

জাবি প্রতিনিধি প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৪, ০৮:৩৬ পিএম
নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের ভর্তি পরীক্ষা বন্ধের আল্টিমেটাম

সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) সংঘটিত সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় চলমান আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ। পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় দাবিগুলোর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন না হলে ২২ ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা বন্ধের আল্টিমেটাম দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষক—শিক্ষার্থীরা। 

আজ শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকাল সাড়ে তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তারা।  

লিখিত বিবৃতিতে আন্দোলনকারীরা জানান, মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করাসহ মাদক সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য প্রশাসন কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপগুলো অপর্যাপ্ত, অদক্ষ ও অগ্রহণযোগ্য। মাদক সরবরাহকারীদের আটক করা হলেও মাদক বিপণন ও ব্যবসার সাথে যুক্তদের চিহ্নিত করা ও কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। এসকল দায়সারা গোছের কাজ প্রশাসনের সদিচ্ছাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। যৌন নিপীড়ক শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির বিচার ও ধর্ষণকান্ডে প্রক্টর এবং মীর মশাররফ হলের প্রভোস্টের সম্পৃক্ততা তদন্তের দাবিতেও প্রশাসনের আশ্বাসকে সন্দেহের মুখে ফেলে দেয়।

সংবাদ সম্মেলনে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে তারা জানান, ২২ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য ভর্তি পরীক্ষার পূর্বেই আমাদের দাবি বাস্তবায়নের স্বার্থে অফিস কার্যক্রম পরিচালনার জন্য চলমান প্রতীকী অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করছে। দাবি বাস্তবায়নে কোনোপ্রকার গড়িমসি আমাদের কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য করবে। এতে যদি আসন্ন ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন কোনভাবে বাধাগ্রস্ত হয় তবে এর দায়ভার একমাত্র প্রশাসনকেই নিতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি ধর্ষণের ঘটনায় যারা সহযোগিতা করেছেন তারা নির্বিঘ্নে বিশ^বিদ্যালয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমতাবস্থায় যদি ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হয় তাহলে যারা ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসবে তাদের নিরাপত্তা কোথায়? এই ক্যাম্পাস বর্তমানে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ নয়। আমাদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য তাদের ভোগান্তি নয়, পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থেই আমরা আন্দোলন জারি রাখছি। আর বর্তমানে যে পরিস্থিতি তার দায় প্রশাসন কোনভাবেই এড়াতে পারে না।

প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, আগামী ২০ তারিখের সিন্ডিকেট মিটিংয়ে যদি আশানুরূপ কোন সিদ্ধান্ত না আসে তাহলে আমরা আমাদের আন্দোলন জারি রাখবো এবং আন্দোলনের ফলে যদি ভর্তি পরীক্ষা ব্যাহত হয় তাহলে এর দায় প্রশাসনকেই নিতে হবে। 

সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুসারে অছাত্রদের হল থেকে বের করা এবং তাদের তালিকা প্রকাশ করার দাবি ছিল। কিন্তু তারা আমাদেরকে অছাত্রদের কোন তালিকা দিতে পারে নি। এখানে প্রশাসনের গড়িমসি ও শৈথিল্য প্রকাশ পেয়েছে। ধর্ষণকাণ্ডে সহায়তাকারীদের পলায়নের দায় প্রক্টর কোনভাবেই এড়াতে পারে না। যেখানে র‌্যাব এবং বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন প্রশাসনকে দায়ী করেছেন সেটি উপাচার্যকে বোঝা উচিত। এই ঘটনায় সুষ্ঠ তদন্তের স্বার্থে প্রক্টর এবং প্রভোস্টকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়ার কোন সদিচ্ছা আমরা দেখতে পাইনি।

ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার বলেন, আমরা সুস্পষ্ট বার্তার মাধ্যমে জানিয়ে দিতে চাই, বিশ্ববিদ্যালয় চলমান পরিস্থিতির সুষ্ঠু বিচার না হয়ে দায়সারাভাবে চলতে থাকলে আমরা আসন্ন ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে দিতে পারি না। কারণ আমাদের যে পাঁচ দফা দাবি ছিল তার কোনটারই দৃশ্যমান ফলাফল আমরা দেখতে পাইনি। যেখানে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুসারে পাঁচ কর্ম দিবসের মধ্যে অছাত্রদের বের করার বাস্তবায়নও আমরা দেখতে পাইনি।  

বিশ^বিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক জামাল উদ্দিন বলেন, বর্তমানে বিশ^বিদ্যালয়ে বিচারহীনতার যে লং টার্ম সিস্টেম চলছে এই সকল অনাচারের বিরুদ্ধে আমাদের এ আন্দোলন। কিন্তু বিচার তো আর আমাদের হাতে নেই প্রশাসন সেটি করবে বলে আমাদের বিশ^াস। আমরা চাই সেই বিচার যেন সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়, তা না হলে আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।

সংবাদ সম্মেলনে আগামীকাল বেলা ১ টায় বিক্ষোভ সমাবেশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে ভাস্কর্যের সামনে নিপীড়কের কুশপুত্তলিকা দাহ করার ঘোষণা করেন। 

এইচআর