জাবি ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি-অসদাচরণ

৬ জনের উত্তরপত্র বাতিল, গ্রেফতার ১

জাবি প্রতিনিধি: প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৪, ০৫:৩৩ পিএম
৬ জনের উত্তরপত্র বাতিল, গ্রেফতার ১

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় শ্রুতি লেখক পরিবর্তনের মাধ্যমে অসদুপায় অবলম্বন করে ৫ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করার ফলে তাদের ভর্তি পরীক্ষার উত্তরপত্র ও রোল নম্বর বাতিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

একই ঘটনায় ১জন শ্রুতি লেখককে মোবাইল কোর্টে শাস্তি অনুযায়ী গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত ওই শ্রুতি লেখকের নাম সাগর হোসেন রোহান। তার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায়। ঢাকার একটি কলেজে ইতিহাস বিভাগে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি।

ঢাকার আশুলিয়া সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আশরাফুর রহমান তাকে পাবলিক পরীক্ষা আইন ১৯৮০ এর ৩ (খ) ধারা অনুযায়ী ১ (এক) বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ২০০ টাকা জরিমানা করেন। পরে আশুলিয়া থানা পুলিশের কাছে তাকে সোপর্দ করা হয়।

ভর্তি পরীক্ষার উত্তরপত্র ও রোল নম্বর বাতিল করা পরীক্ষার্থীরা হলেন- মো. দেলোয়ার হোসেন, রাজু আহমেদ, মো. টুটুল হাসান, মো. মেহেদী হাসান ও আওয়াল হোসেন আরাফাত।

এদের সবার ‍‍`সি‍‍` ইউনিট (কলা ও মানবিকী অনুষদ) এর ভর্তি পরীক্ষার উত্তরপত্র বাতিল করা হয়। এছাড়া মো. মেহেদী হাসান ও আওয়াল হোসেন আরাফাতের আগামী বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠাতব্য ‍‍`বি‍‍` ইউনিট (সমাজ বিজ্ঞান অনুষদ ও আইন অনুষদ) এর এবং রাজু আহমেদের  ‍‍`ই‍‍` ইউনিট (বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ) এর ভর্তি পরীক্ষার রোল নম্বরও বাতিল ঘোষণা করা হয়।

এছাড়া পরীক্ষা দিতে এসে অশোভনীয় আচরণ করায় সাজিদ হাসান নামের ভর্তিচ্ছুর পরীক্ষার উত্তরপত্র ও রোল নম্বর বাতিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাছাড়াও আগামী বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠাতব্য ‍‍`বি‍‍` ইউনিটের (সমাজ বিজ্ঞান অনুষদ ও আইন অনুষদ) ভর্তি পরীক্ষার জন্যও তার রোল নম্বর বাতিল ঘোষণা করা হয়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখা সূত্রে জানায়, পরীক্ষার উত্তরপত্র বাতিলকৃত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে সাজিদ হাসান পরীক্ষার আগে পরীক্ষা কেন্দ্রের শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা এক রোভার স্কাউট সদস্যের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। বাকি পাঁচজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে শ্রুতি লেখক সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়ে এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক অনুমোদিত শ্রুতি লেখক পরিবর্তন করে অন্য শ্রুতিলেখক নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। 

শ্রুতিলেখক সাগর হোসেনকে গ্রেফতারের বিষয়ে ঢাকার আশুলিয়া সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আশরাফুর রহমান বলেন, তাকে পাবলিক পরীক্ষা আইন ১৯৮০ এর ৩ (খ) ধারা অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, ‘আমরা যাদের বিরুদ্ধে শ্রুতিলেখক পরিবর্তন করে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অভিযোগ পেয়েছি তাদেরকে  বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী শাস্তি দিয়েছি। যারা এই চক্রের সঙ্গে জড়িত রয়েছে তাদেরকে খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষার্থী এর সঙ্গে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে নিয়ম মোতাবেক পদক্ষেপ নেব।

এদিকে এ ঘটনায় উত্তরপত্র বাতিল হওয়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা আক্ষেপ করে জানান, ‘সৃষ্টিকর্তা আমাদের অন্ধ করে পাঠিয়েছেন যার কারণে আমাদের শুধু মানুষেরা আমাদের সাথে যা করে তা সয়ে যাওয়া লাগে। আমাদের বেশিরভাগই গ্রাম থেকে উঠে আসা। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় বলছে দশম শ্রেণির বা আমাদের থেকে অ্যাকাডেমিক দিক দিয়ে কমপক্ষে দুই বছরের জুনিয়ররা শ্রুতিলেখক হতে পারবেন।

অথচ গ্রামাঞ্চলে শিক্ষার মানে ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। সেখানে এমন দশম বা ইন্টার পাশ এমন শিক্ষার্থী অনেক আছে যারা ইংরেজি ভালোভাবে পড়তে পারে না। আবার যাদের অনেকে পারে তাদের গার্ডিয়ানরা আমাদের সাথে শ্রুতিলেখক হিসেবে পাঠাতে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন। এরকম পরিস্থিতিতে যারা ইংরেজি পারে না বা ভালোভাবে উচ্চারণ করে রিডিং পড়তে পারেনা তাদের উপর ১ ঘণ্টার এই জীবন পরিবর্তনকারী পরীক্ষায় কীভাবে আমরা ভরসা রাখতে পারি এই প্রশ্ন রেখে গেলাম আপনাদের কাছে।’

এসময় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষায় কেন্দ্রীয়ভাবে ব্রেইল সিস্টেমে ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম গ্রহণ করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে তারা মত প্রকাশ করেন।

বিআরইউ