মাত্র ১২ জন শিক্ষার্থী নিয়ে চলছে ফেনীর জঙ্গলঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য রয়েছেন ৫ জন শিক্ষক। সরেজমিনে জেলার পরশুরাম উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের এই বিদ্যালয়টিতে গিয়ে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়টি শুরুতে ছাত্র-ছাত্রীদের পদচারণায় মুখরিত থাকলেও বর্তমানে অনেকটা নির্জীব।
স্থানীয়দের অভিযোগ প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক পারভীন আক্তারের নানা অনিয়মের কারণে এটি এখন অনেকটা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে। তাঁদের দাবি এ শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ২০২২ সালে স্থানীয় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
এছাড়া কাগজে-কলমে বিদ্যালয়টিতে ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা ৫৫ থেকে ৬০ জন হলেও উপস্থিত সংখ্যা প্রথম শ্রেণিতে একজন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে একজন, তৃতীয় শ্রেণিতে একজন, চতুর্থ শ্রেণিতে একজন, পঞ্চম শ্রেণিতে ৮ জন পাওয়া গেছে।
এব্যাপারে প্রধান শিক্ষক পারভীন আক্তারের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা কাগজে-কলমে যা আছে সেটা সঠিক। তবে,কিছু ছাত্র-ছাত্রী পাশের মাদরাসায় পড়ে। দুই দিন আমার এখানে পড়ে, তিন দিন মাদরাসায় পড়ে। যারা নিয়মিত আসে না তাদের মাঝে মাঝে বাড়িতে গিয়ে আনতে হয়। শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি জানান, সবাই উপবৃত্তি পায়, একজনও বাদ নেই।
এলাকাবাসীর প্রশ্ন যে প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রী ১২ জন। উপবৃত্তি পায় ৫৫ জন! তাহলে বাকি শিক্ষার্থীদের টাকা যায় কার পকেটে? তাঁরা জানান, এ ছাড়াও সরকার প্রতিবছর টিফিন বক্সের জন্য ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। ভাউচার জমা দিলে পাওয়া যায় বরাদ্দের টাকা। এভাবে নানান অনিয়মের মধ্য দিয়ে চলছে জঙ্গলঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
অনিয়মের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক জানান, চাকরি বহু বছর করেছি। আর না হলেও কিচ্ছু হবে না। আর কত করমু। বদলির জন্য চেষ্টা করছি। সুযোগ হাইলে চলে যামু।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ের সাবেক সহসভাপতি খোকা মেম্বার জানান, নানান অনিয়মে জর্জরিত জঙ্গলঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বারবার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে অভিযোগ দিলেও নেই কোনো প্রতিকার। তাই স্থানীয়রা কেউ বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামাতে চায় না। সব অনিয়মের মূল হোতা প্রধান শিক্ষক পারভীন আক্তার। তিনি নির্দিষ্ট সময়ে স্কুলে আসেন না। ক্লাসও হয় না ঠিক মতো। স্কুলের পশ্চিম পাশে তাঁর বাবার বাড়ি। সকালে হাজিরা খাতায় সাক্ষর করে তিনি বাবার বাড়ি গেলে সারা দিন আর আসেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই উপজেলার এক সহকারী শিক্ষক জানান, প্রধান শিক্ষকের আচার-আচরণ ভালো না। তার আচার-আচরণের কারণে ২০১৪ সালে বদলি হয়ে চলে আসি। তখন ছাত্র-ছাত্রী ছিল ১৫৫ জন। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের অদক্ষতার কারণে আজ প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে।
স্থানীয় আলমগীর হোসেন নামে এক ব্যক্তি জানান, সকল অনিয়মে জন্য প্রধান শিক্ষক দায়ী। সকল অনিয়মের মূলহোতা তিনি। এই প্রতিষ্ঠানে এ প্রধান শিক্ষকের স্বামী মোস্তফা মাস্টারও দীর্ঘদিন সভাপতি ছিলেন। তখন থেকেই মূলত এ অনিয়ম শুরু হয়েছে। ফলে এখন কেউ আর এই প্রতিষ্ঠান নিয়ে মাথা ঘামাতে চায় না। কারণ কয়েকবার উপজেলা শিক্ষা অফিসে এসব বিষয়ে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় নি। এ প্রধান শিক্ষকের অপসারণ চায় স্থানীয়রা।
বিদ্যালয়টির বর্তমান সভাপতি মনোয়ার হোসেন জানান, প্রধান শিক্ষক পারভীন আক্তারের স্বামী মোস্তফা মাস্টার দীর্ঘদিন সভাপতি ছিলেন। সেই থেকে একমাত্র প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম, দুর্নীতি, আচার-আচরণ খারাপ থাকার কারণে স্কুলটি এখন অনেকটা বন্ধের পথে।
পরশুরাম উপজেলা প্রাইমারি সহকারী শিক্ষা অফিসার শহিদুল্লাহ হাজারী জানান, প্রধান শিক্ষক পারভীন আক্তারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের কথা শুনতে পেয়েছি। লিখিত অভিযোগ পেলে সরেজমিন তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এআরএস