নারী-পুরুষ সমতা নয়, ন্যায্যতা দিতে হবে: সাদেকা হালিম

জবি প্রতিনিধি প্রকাশিত: মার্চ ১১, ২০২৪, ০৭:০৩ পিএম
নারী-পুরুষ সমতা নয়, ন্যায্যতা দিতে হবে: সাদেকা হালিম

শিক্ষা, সংস্কৃতি ও খেলাধুলায় বাংলাদেশের মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের নারীর প্রতি মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে, নারীকে মানুষ ভাবতে হবে। আর নারী-পুরুষ সমতা নয়- ন্যায্যতা দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম।

উপাচার্য বলেন, আমাদের জিডিপিতে নারীর অবদান মাত্র ২০ শতাংশ। কিন্তু নারীরা গৃহে যে কাজ করে সেটাকে যদি আমরা স্যাটেলাইট কাউন্টে আনি তাহলে নারীদের জিডিপিতে অবদান হবে ৪৮ শতাংশ। আমাকে আবার সুযোগ দেয়া হলে আমি নারী হয়েই জন্মাতে চাই।

সোমবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে একাত্তরের গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির ভাস্কর্য চত্বরে আয়োজিত আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

উপাচার্য বলেন, আমাদের এই সিভিলাইজেশনই হতো না যদি নারীরা না থাকতো। নারী পুরুষ সবাই মিলেই ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। বঙ্গবন্ধু নারীদের অনেক সম্মান করতেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে নির্যাতিতা নারীদের জাতির পিতা বীরাঙ্গনা উপাধি দিয়েছিলেন। সেই নারীদের পরিবার ঠিকানা কিছুই ছিল না বঙ্গবন্ধু বঙ্গমাতাকে সাথে নিয়ে তাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছিলেন। নারীর উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর আদর্শই আমার দর্শন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৮ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী, চল্লিশ শতাংশ নারী শিক্ষক। আমি আমার শিক্ষার্থীদের বলি নারীকে মানুষ ভাবতে শেখো। বাংলাদেশের মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে, তাদেরকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না।

এদিন আলোচনার শুরুতেই চারজন মহীয়সী নারীকে স্মরণ করা হয়।

অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে বরেণ্য অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম জাহান বলেন, এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য অনুযায়ী নারীতে বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রগতি ত্বরান্বিত হবে। নারীতে বিনিয়োগ কখনো বিফলে যায় না। নারীতে বিনিয়োগযোগ্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে-নারীর সমতা, স্বক্ষমতা ও সুযোগের গুরুত্ব দেয়া। আবার শুধুমাত্র নারীতে বিনিয়োগ করলেই হবে না, পুরুষও বিনিয়োগ করতে হবে। আর এভাবেই বিনিয়োগের অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের মেয়েরা কয়েকদিন আগে সাফ চ্যাম্পিয়ন হলো। কিন্তু আমরা পত্রিকার পাতায় তাদের বেতনের সঙ্গে পুরুষদের বেতন বৈষম্যের খবর দেখতে পাই। আমরা বলি নারীরা অর্ধেক আকাশ ধরে আছে। নারীকে অর্ধেক আকশ ধরতে না দিয়ে পুরো আকাশ ধরতে দিন। আমরা পুরুষরা ও নারীরা সেই আকাশের নিচে ভালো থাকব।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. হুমায়ুন কবীর চৌধুরী।

তিনি বলেন, এখান থেকে আট হাজার বছর আগে পৃথিবী নারীরাই শাসন করতো। পরবর্তীতে যখন শক্তির শাসন, মাসলের শাসন চলে আসলো তখন পুরুষের শাসন আসলো। কিন্তু চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে মাসলের প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন মেধার। নারী শাসন যে সমাগত আমি কনজিউমার সাইকোলজির ছাত্র হিসেবে এটা বিশ্বাস করি। এখন থেকে ৫০/১০০ বছর পর যদি আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস বলে কোনো দিবস হয় আমি তাতে আশ্চর্য হবো না।

সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক ড. বুশরা জামান ও সংগীত বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুল হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন অনুষ্ঠান উদযাপন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ঝুমুর আহমেদ এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন। এছাড়া আরো বক্তব্য প্রদান করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. জাকির হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ড. শেখ মাশরিক হাসান।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্যায়ে সংগীত বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

ইএইচ