ভর্তি বাতিল হওয়ায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ১৬৯ শিশু শিক্ষার্থী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে বলে জানিয়েছেন তাদের অভিভাবকরা। বয়সজনিত সমস্যায় ভর্তি বাতিল হওয়া এসব শিক্ষার্থীর অনেকে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি উল্লেখ করে শিশুদের মানসিক দিক বিবেচনায় ভর্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে দাবি জানিয়েছেন তারা।
শনিবার (১৬ মার্চ) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান ভর্তি বাতিল হওয়া শিশুদের অভিভাবকরা। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকারের সর্বোচ্চ মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা।
তারা বলেন, আড়াই মাস স্কুলে ক্লাস করার পর হঠাৎ ভর্তি বাতিল ও স্কুলে যাওয়া বন্ধ হওয়ায় শিশুরা এখন মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছে। অনেকে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। কেউ আবার স্কুল ড্রেস পরে সারাক্ষণ বসে থাকছে, কাঁদছে। এসব শিশু শিক্ষার্থী মন-মননে তাদের স্কুলকে ধারণ করে নিয়েছে। কোন অপরাধে তাদের এখন ভিকারুননিসা স্কুল ছেড়ে যেতে হবে?
অভিভাবকরা জানান, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে ১৬৯ জনের ভর্তি বাতিল করে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ। তারা বেইলি রোডের মূল শাখা, আজিমপুর, ধানমন্ডি ও বসুন্ধরা শাখার শিক্ষার্থী। ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা অনুসরণ না করে ১ জানুয়ারি ২০১৭ সালের পূর্বে জন্মগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানো হয়— এমন অভিযোগ তুলে হাইকোর্টের রিট করেন দুজন অভিভাবক। এরপর তাদের ভর্তি বাতিল করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। যদিও এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন অভিভাবকরা।
সংবাদ সম্মেলনে এর ব্যাখ্যা দেন এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক কায়সার হোসাইন। তিনি বলেন, বয়সসীমার যে কথা এখন বলা হচ্ছে, সেটা ভর্তির সময় বলা হয়নি। আমরা সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে অনলাইন আবেদন করে ভর্তি করিয়েছি। মাউশির লটারির ফলাফলেও তাদের নাম ছিল। সেই তালিকা থেকেই ভিকারুননিসা স্কুল বাচ্চাদের ভর্তি করানো হয়েছে। তিন মাস পর কেন ভর্তি বাতিল করা হলো? শিশুদের অনেকে ভিকারুননিসা ছাড়া রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার ও সাউথ পয়েন্ট স্কুলসহ বিভিন্ন স্কুলের ভর্তির সুযোগ পেয়েছিল। তখন এ বয়সের বিষয়টি বলা হলে বাচ্চাদের অন্য স্কুলে ভর্তি করাতাম।
রওশন আরা আফরোজ নামে অপর অভিভাবক বলেন, তিন মাস পর হঠাৎ করে ভর্তি বাতিল করা হয়েছে। এখন এ বাচ্চাদের আমরা কোথায় ভর্তি করাবো? ঈদের পর অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা। এছাড়া বাচ্চাদের ভর্তি বাতিল হওয়ার পর স্কুলে যেতে পারছে না। তারা এক ধরনের মানসিক যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। অনেক বাচ্চা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বন্ধুদের সঙ্গে স্কুলে যেতে না পেরে অনেক পড়ালেখা করতে চাচ্ছে না।
প্রভাব খাটানো ও দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে মমতাজুর রায়হান বলেন, সব জায়গা থেকে বলা হচ্ছে এ বাচ্চাদের নাকি প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে, টাকার বিনিময়ে ভর্তি করানো হয়েছে। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। কারণ প্রথম শ্রেণিতে কেন্দ্রীয় লটারির মাধ্যমে ভর্তির যোগ্যদের তালিকা করা হয়। সেই তালিকা স্কুল কর্তৃপক্ষকে পাঠায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর। তাই ভর্তিতে কোনো অনিয়ম করার সুযোগ নেই, এটা সবাই জানে। তারপরও আমাদের ওপর অভিযোগ আনা হচ্ছে, যা খুবই দুঃখজনক।
এ সময় অভিভাবকরা শিশুদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে এ সমস্যার সমাধানে সরকারের সর্বোচ্চ মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
আরএস