দেড় বছর পর শনিবার বিদ্যালয়ে ক্লাস, সন্তুষ্ট নয় শিক্ষকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: মে ৩, ২০২৪, ০৯:২০ পিএম
দেড় বছর পর শনিবার বিদ্যালয়ে ক্লাস, সন্তুষ্ট নয় শিক্ষকরা

এক সময় শিক্ষার্থীদের মুখে মুখে ছিল, বৃহস্পতিবার হাফ, শুক্রবার মাফ, শনিবার বাপরে বাপ। বিদুৎ সাশ্রয়ের অংশ হিসেবে এই ধারা থেকে ২০২২ সালের আগস্ট মাসে বেরিয়ে আসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। হাফের পরিবর্তে সপ্তাহে দুদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়। খুশি হন শিক্ষকরা। এটাকে স্বাগত জানান। তীব্র তাপপ্রবাহে কারণে ফের শনিবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যদিও এ সিদ্ধান্ত স্থায়ী নয় বলে জানিয়েছে শিক্ষামন্ত্রী। এরপরও সন্তুষ্ট নয় শিক্ষকরা। তারা বলছেন, সরকার শিখন ঘাটতির কথা বললেও প্রকৃত পক্ষে বিদ্যালয়ে শিখন ঘাটতি নেই।

জানা গেছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সপ্তাহে দুদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটির আভাস দেন । এটি ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু আগস্টে দেশে ডলার ও জ্বালানি সংকট দেখা দিলে বিদুৎ সাশ্রয়ে সপ্তাহে দুদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করা হয়। পূর্বের বৃহস্পতিবার হাফ ক্লাস বাদ দেয়া হয়। 
সম্প্রতি তাপ প্রবাহে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রায় দুই সপ্তাহের মতো বন্ধ রাখতে হয়।  এ কারণে শিক্ষার্থীদের ঘাটতি হয়েছে বলে মনে করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ফলে অস্থায়ীভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শনিবার খোলা রাখা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ সিদ্ধান্ত অসন্তুষ্টির কথা জানিয়ে মাধ্যমিকের সহকারী শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম বিপ্লব বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোথায় শিখন ঘাটতি? আমরা বিদ্যালয় পরিচালনা করে ঘাটতি দেখি না, আর ওনারা ঘাটতি দেখেন। তাপপ্রবাহের কারণে যে ঘাটতির কথা বলা হচ্ছে, সেটা আমরা রমজানে পূরণ করেছি। দুইদিন ছুটি থাকা শিক্ষকদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সপ্তাহে দুদিন আমাদের পারিবারিক ও বিভিন্ন প্রয়োজন থাকে। একদিনে এগুলো পূরণ করা যায় না।

এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটির নেতারা জানান, কোনো দুর্যোগ শিক্ষক কিংবা শিক্ষার্থী সৃষ্ট নয়। পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাময়িক বন্ধ হতেই পারে। পূর্বেও হয়েছে। সে কারণে নির্ধারিত ছুটি কমিয়ে দেয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। এর নজির বিগত সরকার আমলে দেখি নাই। মন্ত্রণালয়ের এহেন সিদ্ধান্তে শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত বৈ কিছু নয়। কারণ নির্ধারিত ও সাপ্তাহিক ছুটিতে শিক্ষার্থীরা পাঠসংশ্লিষ্ট ‍‍`বাড়ির কাজ‍‍` সম্পন্ন করতে পারেন। অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক চিকিৎসা নেয়া, আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়ানো, আচার- অনুষ্ঠান ও বিশ্রামসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন। ছুটি-ছাটা নিয়ে আচমকা সিদ্ধান্ত নেয়ায় স্বাভাবিক জীবন-যাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে সামাজিক, শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতিরও সম্মুখীন হয়।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, জাতীয় দিবসগুলোতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবস্থান নিতে হচ্ছে, অথচ সে দিন অন্যদের ছুটি। শুধু তাই নয়, শিখন ঘাটতি পূরণ করতে গত বছরের গ্রীষ্মকালীন ছুটি ও শীতকালীন ছুটি বাতিল করা হয়েছে। চলতি বছরে রমজানের ছুটি কমানো হয়েছে যা মোটেই সুবিবেচনাপ্রসূত হয়নি। এসব সিদ্ধান্ত নির্লিপ্ততারই বহিঃপ্রকাশ।

নাঈমুল/ইএইচ