নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ ত্রুটিপূর্ণ বলছে ইউজিসি, উপাচার্যের নাকচ

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি: প্রকাশিত: মে ১৫, ২০২৪, ০১:১১ পিএম
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ ত্রুটিপূর্ণ বলছে ইউজিসি, উপাচার্যের নাকচ

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হল সুপারভাইজার পদে নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করে নিয়োগকে ত্রুটিপূর্ণ আখ্যা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। অন্যদিকে ইউজিসির অভিযোগ নাকচ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর জানিয়েছে নিয়োগে কোনো ত্রুটি নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়টির হল সুপারভাইজার পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি চাওয়া হয় তিন বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা। গত বছরের ২৯ আগস্ট লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ১৪ জন চাকুরীপ্রার্থীর মাঝে ত্রিশালের গুজিয়াম আলীম মাদ্রাসা থেকে  খণ্ডকালীন কাজের অভিজ্ঞতার সনদ দেখিয়ে নিয়োগ পান সোহেল রানা নামের এক ব্যক্তি। নিয়োগের পর সোহেল রানার অভিজ্ঞতা সনদ ও যোগ্যতা নিয়ে উঠে প্রশ্ন।

এরপর হল সুপারভাইজার নিয়োগে অনিয়ম নিয়ে আরেক চাকরিপ্রার্থী জাহানারা মুক্তা লিখিত অভিযোগ নিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে গেলেও তাকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরের সাথে দেখা করতে দেওয়া হয়নি এবং তার অভিযোগ পত্রও গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ তুলেন তিনি। পরে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। নিয়োগের তথ্য চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেও তথ্য পাননি বলে আমার সংবাদকে জানায় এ ভুক্তভোগী চাকরিপ্রার্থী । নিয়োগে অনিয়মের সাথে উপাচার্য জড়িত বলে অভিযোগ তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপও কামনা করেন ওই অভিযোগকারী চাকরিপ্রার্থী।

পরে গত বছরের ২৬ অক্টোবর নিয়োগে অনিয়মের কথা জানিয়ে বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসিতে লিখিত অভিযোগ করেন মুক্তা।

অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্তে নামে ইউজিসি।  তদন্ত শেষে প্রতিবেদনে ইউজিসি জানায়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং গুজিয়াম আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হতে বিভিন্ন সময় প্রেরিত তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী  ‍‍`হল সুপারভাইজার‍‍` পদে নিয়োগটি ত্রুটিপূর্ণ। অভিজ্ঞতা সনদে উল্লিখিত মাদ্রাসার অধ্যক্ষের ব্যক্তিগত খাত থেকে বেতন-ভাতাদি পেতেন সোহেল রানা। এমন খণ্ডকালীন কাজের অভিজ্ঞতার সনদের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত/স্থায়ী পদে নিয়োগ প্রদান নিয়েও প্রতিবেদনটিতে প্রশ্ন তুলেছে ইউজিসি। তাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন্ন সিন্ডিকেটে বিষয়টি উপস্থাপন করে সিদ্ধান্ত ও যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসিকে লিখিতভাবে অবহিত করতে বলা হয়েছে ওই প্রতিবেদনটিতে।

এ ব্যাপারে গুজিয়াম আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সোহেল রানাকে খণ্ডকালীন নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছিল। যে কাজ করানো হতো সেই উৎস থেকে তাকে পারিশ্রমিক দেওয়া হতো। এ সময় তার কাছে হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে তিনি জানান, খণ্ডকালীন কর্মচারীর জন্য হাজিরা খাতার প্রয়োজন নেই। এমনকি তাকে দেওয়া অর্থের কোনো প্রমাণ তিনি দেখাতে পারেননি। বেতন ভাতা নিয়ে সর্বশেষ সংশোধিত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদ্রাসা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ অনুযায়ী, অনুমোদিত জনবল  কাঠামোর অতিরিক্ত শিক্ষক কর্মচারী নিয়োজিত রাখলে তাদের বেতন-ভাতা ও আনুষঙ্গিক সুবিধা শতভাগ দিবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।   অর্থাৎ সোহেল রানার নিয়োগের ক্ষেত্রে মানা হয়নি কোনো বিধিই।

ভুক্তভোগী চাকরিপ্রার্থী জাহানারা মুক্তা বলেন, নিয়োগের ফলাফলের পর থেকেই উপাচার্যের সাথে দেখা করে অভিযোগ দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোনোভাবেই উপাচার্য সৌমিত্র শেখর স্যারের সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। সবক্ষেত্রে এ ব্যাপারে  নীরবতায় বুঝাচ্ছে যে এই অনিয়মটা উপাচার্যের সজ্ঞানেই হয়েছে।

এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবির জানায়,  সোহেল রানার আবেদন যাচাই-বাছাই করে অভিজ্ঞতা সনদ এবং অন্যান্য কাগজপত্র সঠিক পেয়েছি। আমাদের দৃষ্টিতে ইউজিসির কথাটা সঠিক নয়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, নিয়োগে কোনো ত্রুটিপূর্ণ হয়নি। তারপরও ইউজিসি বলেছে এটি সিন্ডিকেটে নিয়ে যেতে, ইউজিসির কথা মতো আমরা সিন্ডিকেটে নিয়ে যাবো। সিন্ডিকেট সদস্যদের মতামত অনুযায়ী যদি তাতে কারো চাকরি থাকে থাকবে, না থাকলে থাকবে না। কারও প্রতি আমাদের আলাদা পক্ষপাত নেই।

বিআরইউ