কুবিতে দেড় বছরেও চালু হয়নি ডরমিটরি গেস্ট হাউজ

মুরাদুল মুস্তাকীম, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত: জুন ২৮, ২০২৪, ০৪:৫৬ পিএম
কুবিতে দেড় বছরেও চালু হয়নি ডরমিটরি গেস্ট হাউজ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ৮ কোটি ১৬ লক্ষ ৯৭ হাজার টাকা ব্যয়ে শিক্ষক ডরমিটরি ও গেস্ট হাউজ নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু স্থাপনা দুটি উদ্বোধনের প্রায় দেড় বছর পার হয়ে গেলেও অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। এজন্য কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, নিরাপত্তা ঝুঁকি ও পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার অভাবকে দায়ী করছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।

আবার সরেজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘদিন যাবত ভবনগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকায় ধুলাবালি ও পোকামাকড়ের আক্রমণে নষ্ট হওয়ার পথে প্রায় অর্ধকোটি টাকার আসবাবপত্র। এমনকি কিছু রুমে পাইপের পানি প্রবেশ করে কয়েকটি আলমারিতে ধরেছে পচন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডরমিটরি ও গেস্ট হাউজ উদ্বোধন করেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

পরবর্তীতে একই বছরের আগস্ট মাসে নতুন এই ডরমিটরিতে শিক্ষকদের সিট বরাদ্দ বাবদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রশাসন। এতে ৩৯ সিটের বিপরীতে ১০ জন শিক্ষক আবেদন করলেও বর্তমানে ৫ জন আবেদন থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত গেস্ট হাউজটিও রয়েছে অব্যবহৃত অবস্থায়।

ডরমিটরিতে না থাকতে চাওয়ার বিষয়ে কয়েকজন শিক্ষকের সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। তারা জানান, নতুন ডরমিটরিটি আউটসাইডে হওয়ার কারণে শিক্ষকদের বিড়ম্বনায় পড়তে হবে। এছাড়াও অনেক শিক্ষককে রান্না করে খেতে হয়। কিন্তু ডর্মে ব্যক্তিগতভাবে রান্না করার সুযোগ না থাকায় শিক্ষকদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে। এলাকাটি পাহাড়ি হওয়ায় সেখানে সাপের উপদ্রব রয়েছে। তাই সমস্যা বিবেচনায় সেখানে যেতে চান না তারা। তাদের মতে, নতুন ডর্মে আরোপিত ভাড়ার পরিমাণও তুলনামূলক বেশি।

এদিকে আবেদন করেও পরবর্তীতে নাম প্রত্যাহার করার বিষয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পার্থ সরকার জানান, সহকর্মীদের অনাগ্রহের কারণে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এছাড়াও নতুন ডরমিটরি পুরোদমে চালু হওয়ার আগে সেখানে নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করছেন এ শিক্ষক।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ডরমিটরিতে আবেদনকারী শিক্ষকদের মধ্যে মাত্র ৩ জন শিক্ষক বিছানাপত্র নিয়ে উঠলেও নির্জনতার কারণে রাত্রি যাপন করছেন না কেউই। আবার পাশে থাকা গেস্ট হাউজটিতে গেস্টরা থাকতে না পারলেও সেখানে থাকছেন আনসার সদস্যরা। গেস্ট হাউজের গ্রাউন্ড ফ্লোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৫ জন আনসার সদস্য বর্তমানে থাকছেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার প্রধান সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ ছাদেক হোসেন মজুমদার বলেন, আনসার সদস্যদের আবাসন সংকট থাকায় মৌখিক নির্দেশনার ভিত্তিতে বর্তমানে তারা গেস্ট হাউজে থাকছেন। প্রশাসন নির্দেশনা দিলে তারা সেখান থেকে চলে যাবেন।

এসব বিষয়ে এস্টেট শাখার পরিচালক ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. মিজানুর রহমান জানান, গেস্ট হাউজ শিগগিরই ব্যবহার উপযোগী করে চালু করা হবে।

ডরমিটরির বিষয়ে তিনি বলেন, শিক্ষকরা নিরাপত্তা ঝুঁকি ও ভাড়া বেশিসহ আরও যেসব অভিযোগ করছেন তা ঠিক নয়। আমরা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সামঞ্জস্যতা রেখে তুলনামূলক কম ভাড়া নির্ধারণ করেছি। ওনাদের নিরাপত্তার জন্য সকল ধরনের ব্যবস্থাও করেছি। তারপরও যদি ওনারা আবেদনই না করেন তাহলে আমরা কাদের জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবো?

তিনি আরও বলেন, ভবনটি নতুন নকশা অনুযায়ী বানানোয় প্রতিটি রুমে আলাদা চুলা দেওয়া হয়নি, তবে প্রতি ফ্লোরে দু’টি চুলার ব্যবস্থা রয়েছে।

আসবাবপত্র নষ্ট হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আসবাবপত্র যত দামই হোক, কেউ ব্যবহার না করলে তা নষ্ট হবেই। শিক্ষকরা না আসলে আমরা কি-ই বা করতে পারি!  

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, শিক্ষকদের নতুন ডরমিটরি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য প্রায় দুই কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। যার মধ্যে চলতি অর্থ বছরে অর্ধেক বরাদ্দ পেয়েছি আমরা। শিগগিরই তার কাজ শুরু হয়ে যাবে।

প্রতি রুমে চুলার বিষয়ে তিনি বলেন, ডরমিটরি অক্ষত রেখে যদি চুলার ব্যবস্থা করা যায় তাও করে দেয়া হবে। এছাড়াও উপাচার্যের সাথে কথা বলে দ্রুত গেস্ট হাউজ ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দিবেন বলেও তিনি জানান।

ইএইচ