কোটা বাতিলের দাবিতে চলছে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: জুলাই ৭, ২০২৪, ০৫:২২ পিএম
কোটা বাতিলের দাবিতে চলছে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের চার দফা দাবিতে ফের শাহবাগ অবরোধ করেছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা। রোববার (৭ জুলাই) বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।

এর আগে শনিবার সারা দেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম। সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল ও ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দফা দাবিতে সারা দেশে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা।

কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে শনিবার নাহিদ ইসলাম বলেন, আগামীকাল ‘বাংলা ব্লকেড’ শুধু শাহবাগ নয়। রাজধানীর সাইন্সল্যাব, মতিঝিল, নীলক্ষেত, চানখারপুল, কাটাবনসহ প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আমরা অবস্থান করব। আন্দোলন সফল করতে আপনারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নেমে আসুন। যারা ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় আছেন তারা মহাসড়ক অবরোধ করবেন।

হরতালের হুশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, আমরা দুই তিনদিন রাস্তা অবরোধ করে ঘরে ফিরে যাব সরকারের এই ধারণা ভুল। আমরা এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি। প্রয়োজনে আমরা সারা দেশে হরতাল কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।

এদিকে রোববার দুপুর দুইটা থেকেই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর ব্যানারে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থগারের সামতে জড়ো হতে থাকেন। দুপুর তিনটার আগেই কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে হাজারো শিক্ষার্থীর জনসমাগমে রূপ নেয়। ঠিক তিনটায় শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন শাহবাগের উদ্দেশ্যে। শুধু ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেই শাহবাগ মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিলে— কোটা না মেধা, মেধা মেধা; কোটা প্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক; আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই; আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম; হাইকোর্ট না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ; দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ ইত্যাদি স্লোগান দেন ও প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। 

শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবিগুলো হলো: 

১/ ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা।
২/ ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সকল গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া এবং সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা।
৩/ সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া।
৪/ দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।

নারী শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য

কোটাবিরোধী আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। প্রতিদিনই নারী শিক্ষার্থীরা তাদের হল থেকে আলাদা করে বড় একটি মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হন। মিছিলের প্রথম সারিতেই মেয়েরা অবস্থান নেয় প্রতিদিন। শাহবাগেও কোটাবিরোধী স্লোগান, বিদ্রোহী গান, কবিতা আবৃত্তিতে মেয়েদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। আন্দোলনের নেতৃত্ব স্থানীয়রা বলেন, মেয়েদের হলগুলো থেকে প্রথম দুইদিন শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ কম ছিল। তারা ভয়ে শুরুতে আসত না। কিন্তু এখন মেয়েদের সবগুলো হল থেকেই উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ হচ্ছে। 

আরএস