সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিম’ প্রত্যাহার এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবিতে নবম দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষকেরা।
সোমবার (৭ জুলাই) বেলা ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনের সামনে এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা।
কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, সরকার শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে চিন্তিত নন বরং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে চিন্তিত। এগুলো শিক্ষকদের জন্য হতাশাজনক। এই আন্দোলন শিক্ষকদের ব্যক্তিগত কোনো আন্দোলন নয়। তারা এ আন্দোলন করছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য যারা এ মহান পেশায় আসতে চাই।
কর্মসূচিতে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মোজাম্মেল হোসেন বকুল বলেন, `এই যে আমাদের পাশে শিক্ষার্থীদের কোটা বিরোধী আন্দোলন চলছে পাশাপাশি শিক্ষকদের আন্দোলন চলছে। সরকার শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে চিন্তিত নন বরং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে চিন্তিত। এগুলো আমাদের হতাশ করে। কারণ আপনি যখন একটা রাষ্ট্রকে গড়ে তুলতে চাচ্ছেন, রাষ্ট্রকে স্বনির্ভর এবং উন্নত করে তুলতে চাচ্ছেন তখন সেটা শিক্ষকদের খাটো করে কখনো করা সম্ভব নয়। আজকে যারা রাষ্ট্র চালাচ্ছে তারা অবশ্যই মেধাবী। রাষ্ট্রের আমলাতন্ত্রে বা সরকারে যারা আছেন তারা অবশ্যই মেধাবী। এই জায়গায় যে মানুষগুলো যাচ্ছে তাদের শিক্ষকরাই তৈরি করে পাঠাচ্ছে। যদি সোনার বাংলা গড়তে হয় তাহলে প্রথমে শিক্ষকদের মর্যাদার আসনে বসাতে হবে। সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম থেকে শিক্ষকদের নাম প্রত্যাহার করে স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন করতে হবে।`
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, `আমাদের উপর নিয়মতান্ত্রিকভাবে যে মানসিক নির্যাতন তারা করে যাচ্ছে। একটার পর একটা যে আঘাত আমাদের দিয়ে যাচ্ছে, আমরা তার অবসান চাই। অনেক জায়গায় কিছু মানুষ বলে যাচ্ছেন শিক্ষকদের গায়ে যখন আঘাত লাগে ঠিক তখনই তারা কথা বলে। হয়তো কিছুটা সত্য থাকতেও পারে। এটা যদি আংশিক সত্য হয় তাহলেও আমাদের ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। এই আন্দোলন শিক্ষকদের ব্যক্তিগত কোন আন্দোলন নয়। তারা এ আন্দোলন করছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য যারা এ মহান পেশায় আসতে চাই।`
তিনি আরো বলেন, `বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের সাথে আলোচনাকালে যদি শুধু প্রত্যয় স্কিম থেকে শিক্ষকদের নাম প্রত্যাহার করে তবেও আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে যতদিন পর্যন্ত না আমাদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন হবে। এটাও আমাদের অন্যতম মূল দাবি।`
প্রসঙ্গত, গত ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেখানে বলা হয়, চলতি বছরের ১ জুলাইয়ের পর থেকে স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার চাকরিতে যারা নতুন যোগ দেবেন, তারা বিদ্যমান ব্যবস্থার মতো আর অবসরোত্তর পেনশন-সুবিধা পাবেন না। তার পরিবর্তে নতুনদের বাধ্যতামূলক সর্বজনীন পেনশনের আওতাভুক্ত করা হবে। এটি প্রত্যাহারের দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণও লাগাতার কর্মসূচি করে আসছেন।
কর্মসূচিটি সঞ্চালনা করেন দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আফরোজা সুলতানা চূড়া। এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধিকর্তা এবং রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এস এম এক্রাম উল্লাহ, ইংলিশ এন্ড আদার ল্যাংগুয়েজ ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন। কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইন্সটিটিউটের প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
আরএস