সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রতিবাদে লংমার্চ ও মানববন্ধনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী কানিজ ফাতিমা বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে হয়েও চাই না কোটা থাকুক। কোটার মাধ্যমে অনেক মেধাবীরা অঙ্কুরেই ঝরে যায়।
মঙ্গলবার (০৯ জুলাই) সকাল ১০:৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার চত্বরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। পরে লংমার্চ করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন হলের গেইটে গিয়ে বক্তব্য ও স্লোগানের মাধ্যমে সবাইকে এ আন্দোলনে শরীক হওয়ার আহ্বান জানান।
কানিজ ফাতিমা বলেন, সৃষ্টিকর্তা আমাকে দুটো হাত-পা দিয়েছেন। তাহলে কেন আমি কোটা ব্যবহার করে মেধার অপমান করবো? মুক্তিযোদ্ধা কোটা যারা দাবি করেন তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, আপনারা কি ভিক্ষা চান? অনেককে দেখেছি হলে পড়াশোনা করছেন কিন্তু কোটা বহাল থাকলে তো আপনারা চাকরিই পাবেন না। তাই আসুন এ আন্দোলনে শরীক হয়ে একাত্মতা পোষণ করেন।
রাজনীতি-বিজ্ঞানের বিভাগের শিক্ষার্থী রিতু আকতার বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার নাতনি হয়েও চাই কোটাপদ্ধতি বাতিল হোক। আমাদের মেরুদণ্ড আছে।মেধা দিয়ে দেখিয়ে দিবো যে আমরা মেধা দিয়ে টিকতে পারি। বৈষম্যমূলক কোটাপদ্ধতি অনতিবিলম্বে বাতিল হয়ে মেধাবৃত্তিক বাংলাদেশের বিনির্মাণ হোক।
মানববন্ধন ও লংমার্চ`র সময় শিক্ষার্থীরা কোটা না মেধা-মেধা মেধা, আপোশ না সংগ্রাম-সংগ্রাম সংগ্রাম, আঠারোর পরিপত্র-পুনর্বহাল করতে হবে, কোটাপ্রথা নিপাত যাক মেধাবীরা মুক্তি পাক, সারা বাংলায় খবর দে কোটাপ্রথার কবর দে, আমার সোনার বাংলায়-বৈষম্যের ঠাঁই নাই, জেগেছে রে জেগেছে ছাত্রসমাজ জেগেছে, এসো বোন এসো ভাই রাজপথে ভয় নাই,— ইত্যাদি স্লোগান দেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। এ কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে সব ধরনের কোটা ১০ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার দাবিতে ওই বছর আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে ওই আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের মুখে সেই বছরের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে সব ধরনের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটাব্যবস্থাই বাতিল করে সরকার।
ওই সময় ৩০ শতাংশ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তান-নাতি-নাতনি কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, ১০ শতাংশ জেলা কোটা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কোটা ও ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা চালু ছিল সরকারি চাকরিতে। ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-১ শাখা থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে নবম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি নিয়োগে সব ধরনের কোটা বাতিল করা হয়।
ওই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা ২০২১ সালের জুন মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। রিটের শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেন। রুলে সরকারি চাকরিতে ৯ম গ্রেড থেকে ১৩ম গ্রেড পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও তাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত বাতিল করে জারি করা পরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
রিটের শুনানি নিয়ে ৫ জুন ঘোষণা করা রায়ে হাইকোর্ট পরিপত্রের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা বাতিলের অংশটি অবৈধ ঘোষণা করেন। এরপরই শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা আবার ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’র ব্যানারে নতুন করে কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে এ আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে গেছে এবং সামনে দাবি আদায় না হওয়া অবধি চলবে বলেও ঘোষণা শিক্ষার্থীরা।
বিআরইউ