কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে রাজধানীর কবি নজরুল কলেজের তিন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) পুরান ঢাকার লক্ষ্মী বাজার ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় পৃথক দুটি ঘটনায় তারা নিহত হন।
নিহত শিক্ষার্থীরা হলেন ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ইকরাম হোসাইন কাউসার, একই শিক্ষাবর্ষের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী জিহাদ এবং ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ওমর ফারুক।
জানা যায়, শুক্রবার বিকেল পাঁচটার দিকে তারা তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। কাউসার এবং জিহাদ গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। কাউসার পুরান ঢাকার পাতলা খান লেন এলাকায় মারা যান এবং জিহাদ যাত্রাবাড়ী এলাকায় মারা যান।
অন্যদিকে ওমর ফারুক সোহরাওয়ার্দী কলেজ সংলগ্ন এলাকায় গুলিবিদ্ধ হলে তার সহপাঠীরা তাকে আজগর আলী হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে কবি নজরুল কলেজে। তাদের মৃত্যুতে পরিবার ও বন্ধুমহল শোকস্তব্ধ। তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা বলেন, একটা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে দুষ্কৃতিকারীদের উসকানিতে তিন মেধাবী শিক্ষার্থী সহ অসংখ্য শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে যা কখনোই কাম্য ছিল না।
মৃত ওমর ফারুকের বন্ধু ও সহপাঠী মিরাজ উদ্দিন বলেন, আমার বন্ধু ছিল অত্যন্ত পরোপকারী। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সে জড়িত ছিল না। সবার বিপদে সে পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতো। সে একটা ব্লাড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিল। সেখানে সে ৫৪৯ ব্যাগ ব্লাড সংগ্রহ করে বিনামূল্যে মানুষকে দিয়েছে। তাঁর মৃত্যুতে আমি বাকরুদ্ধ।
মৃত জিহাদের বন্ধু ও সহপাঠী আবির বলেন, আমার বন্ধুকে পুলিশ নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করেছে। আমি সহ আমার আরো কয়েকজন বন্ধু গুলিবিদ্ধ হয়েছি। আমাদের শূন্য হাতে পুলিশ অমানবিক ভাবে বুকে ও মাথায় গুলি চালিয়েছে। আমরা এর বিচার চাই। আল্লাহ যেন আমার বন্ধু জিহাদকে শহীদ হিসেবে কবুল করে নেন সেই দোয়া করি।
মৃত ইকরাম হোসাইন কাউসার এর বন্ধু আজমীর বলেন, আমি এটাকে মৃত্যু বলবো না এটা হত্যা। যে দেশে মানুষ ঠিকমতো তার অধিকারের কথাও বলতে পারে না সেটা কোন গণতান্ত্রিক দেশ হতে পারে না। আজ অধিকারের জন্য মাঠে নামায় আমার বন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। আমি শুধু এই হত্যা না কোটা সংস্কার কে কেন্দ্র করে যত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে তার সঠিক তদন্ত করে বিচার চাই।
উল্লেখ্য, তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন কবি নজরুল সরকারি কলেজের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং কলেজের শিক্ষকরা।
আরএস