ববি ছাত্রলীগের নেতারা লাপাত্তা

বরিশাল ব্যুরো প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০২৪, ০৪:১৭ পিএম
ববি ছাত্রলীগের নেতারা লাপাত্তা

সদ্য সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই গাঁ ঢাকা দিয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ছাত্রলীগ নেতা পরিচয়দানকারী অনেকে।

তবে নিজেরা লাপাত্তা হলেও একে একে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে তাদের নানা অপকর্ম। প্রতিষ্ঠানটিতে ছাত্রলীগের কোন কমিটি না থাকলেও অনেকেই নিজেদের পরিচয় তুলে ধরতো সংগঠনটির সংগঠক হিসেবে। আর এই পরিচয়ে ক্যাম্পাসের আশেপাশের দোকানগুলোতে চলতো চাঁদাবাজির নামে ‍‍`বাকি খাওয়া‍‍`।

জানা গেছে, ২০১৭ সাল থেকে এভাবে বাকি খাওয়ার প্রচলন বাড়তে থাকে। পাওনা টাকা চাইলে নির্যাতনের শিকার হতেন কেউ কেউ। ফলে এসব ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের ভয়ে তটস্থ থাকতে হতো দোকানদারদের। কিন্তু গত ৫ আগস্টের পর থেকে পট পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। বেরিয়ে আসছে ফাস্টফুড, খাবার হোটেল, স্টেশনারি ইত্যাদি নানারকম ছোট ছোট দোকান থেকে কীভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদাবাজি হয়েছিল সেই হিসাব।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের উত্তর দিকে ফরেনের দোকান নামে পরিচিত ফাস্টফুডের দোকান মালিক ফিরোজ আলম মোল্লা আমার সংবাদকে জানান, যখন ছাত্রলীগের যে গ্রুপ ক্যাম্পাসে শক্তিশালী ছিল তখন সে গ্রুপের প্রধান নেতারা বাকির নামে চাঁদাবাজি করেছে৷ একসময় সিফাত-মিষ্টু তারপর রিদম-শান্ত এরকম মিনিমাম ১৫-২০ জন হাজার হাজার টাকা বাকি খেয়েছে।

এদিকে ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী ভোলা রোডের আল্লাহর দান হোটেল মালিক ইউনুছ মল্লিক জানান, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পরিচয় ব্যবহার করে কমপক্ষে ২০ জন আমার দোকানে ৫-৬ বছর যাবৎ বাকি খেয়েছে। এদের মধ্যে রাজীব মণ্ডল, আরাফাত, শান্ত অগ্রগণ্য। আমি ছাড়াও অনেক দোকানদারেরা ভুক্তভোগী কিন্তু ভয়ে এতদিন কেউ কিছু বলতে পারিনি।

একই স্থানের হাওলাদার হোটেলের মালিক মো. আনিছ ক্ষোভের সঙ্গে জানান, বাকির পাওনা টাকা চাওয়ায় একদিন আমার গলায় ছুরি ধরেছিল কয়েকজন ছাত্রলীগ পরিচয়দানকারী নেতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের এমন কোনো দোকান নাই যেখান থেকে ওরা ফাও খায় নি। তবে তুষার, রাজিব, মিষ্টু,আরাফাত, রাকিব, নাহিদসহ চিহ্নিত কয়েকজন যে যন্ত্রণা দিয়েছে তা অবর্ণনীয়।

ক্যাম্পাসের ভিতরে প্রতিষ্ঠিত একমাত্র সেলিম স্টোরও রক্ষা পায়নি তথাকথিত ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের বাকির হাত থেকে।

দোকানটির মালিক মো. সেলিমে আমার সংবাদকে বলেন, আমি কারো পরিচয় প্রকাশ করবো না। তবে ২০১৭ সাল থেকেই বিভিন্ন ছাত্রলীগ নেতা পরিচয়দানকারী আমার দোকান থেকে মূল্য পরিশোধ ছাড়াই হাজার হাজার টাকার পণ্য নিয়ে গেছে।প্রায় ২০ জনের হিসাব আমার বাকির খাতায় আছে। এদের মধ্যে অনেকে লেখাপড়া শেষ করে ক্যাম্পাস ছেড়ে দিয়েছে, অরেকের এখনো লেখাপড়া শেষ হয় নি।

তবে এভাবে নীরব চাঁদাবাজি বন্ধ করে দেয়া হবে বলে জানান, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সুজয় শুভ।

তিনি বলেন, যে মানুষগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে দোকান নিয়ে ব্যবসা করেন তাদের নিরাপত্তার কথাও আমাদের ভাবতে হবে। আমাদের আন্দোলনে তাদের অবদান আছে। তাই তাদের পাওনা টাকা আদায়ে আমরা সহযোগিতা করবো। একইসাথে ভবিষ্যতে কেউ যেন এমনটা না করতে পারে সেটিও দেখবো।

এ ব্যাপারে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার জিহাদুল কবিরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, এটা তো রুচির ব্যাপার। কারো ভিতরে প্রকৃত শিক্ষা থাকলে সে এমন করতে পারে না। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ করলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেবো।

ইএইচ