দেশে ৫০টির বেশি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৪০টির বেশি এখন অভিভাবকহীন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্য, উপ–উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষসহ অনেক প্রশাসনিক পদ খালি রয়েছে। পূর্বে পদগুলো দলীয়করণ করা হয়েছিলো কিন্তু বর্তমানে শূন্যপদগুলো পূরণের জন্য কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না।
সরকার পতনের পর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবি) ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) উপাচার্য পদত্যাগ করেন। এরপর থেকে এই দুই পদ শূন্য রয়েছে।
শিক্ষকরা বলছেন, কাউকে দায়িত্ব না দেওয়া পর্যন্ত হল খুলে দেওয়া, প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু , ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যত দ্রুত সম্ভব উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।
জানা যায়, আগামী সপ্তাহে শাবি ও সিকৃবিতে নতুন উপাচার্য নিয়োগ হতে পারে। দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হওয়ার যোগ্য ১২ শিক্ষকের নাম শোনা যাচ্ছে। তারা বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতির সাথে যুক্ত বলে জানা যায়।
ক্যাম্পাসে গুঞ্জন, দুটি বিশ্ববিদ্যালয় বাইরে থেকে উপাচার্য নিয়োগ হতে পারে। কিন্তু শিক্ষক বলছেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হোক।
গত ১০ আগস্ট ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন শাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তারপর থেকে বন্ধ শাবির সকল কার্যক্রম।
উপাচার্য পদে পাঁচ শিক্ষকের নাম শোনা যাচ্ছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টি টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. ও বিভাগীয় প্রধান মোজাম্মেল হক। তিনি বিএনপি-জামায়াতপন্থি প্যানেল থেকে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।
আলোচনায় থাকা অন্যজন হলেন, গণিত বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. সাজেদুল করিম। তিনি ডিন, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক, প্রক্টরসহ নানা পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি বিএনপির শিক্ষক প্যানেলে নেতৃত্ব রয়েছেন।
বাকিরা হলেন– ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ইকবাল, বন ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এ জেড এম মঞ্জুর রশিদ ও গণিত বিভাগের অধ্যাপক আশরাফ উদ্দিন। তাদের মধ্যে মঞ্জুর রশিদ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন।
গত ২১ আগস্ট পদত্যাগ করেন সিকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. জামাল উদ্দিন ভূঞা। এরপর ডিন কাউন্সিলের সভায় ভেটেরিনারি অ্যানিম্যাল ও বায়োমেডিকেল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. ছিদ্দিকুল ইসলামকে সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি বিএনপিপন্থি হিসেবে পরিচিত। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রেজিস্ট্রার বদরুল ইসলাম সোয়েবকে ওএসডিসহ আরও কিছু দপ্তরে পরিবর্তন নিয়ে আসেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সরকারি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উপসচিব শাহীনুল ইসলাম জানিয়েছেন, অধ্যাপক ছিদ্দিকুল ইসলাম আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করছেন। সিকৃবিতে এখনও উপাচার্যের দায়িত্ব কাউকে দেওয়া হয়নি।
সিকৃবির নতুন উপাচার্য হওয়ার আলোচনায় আছেন জামায়াতপন্থি শিক্ষক মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের অধ্যাপক এটিএম মাহাবুব ইলাহী। বিএনপিপন্থিদের মধ্যে আছেন প্রাণী পুষ্টি বিভাগের অধ্যাপক এমদাদুল হক, পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এম রাশেদ হাসনাত ও প্যাথলজি বিভাগের ড. মাসুদুর রহমান।
এছাড়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রাখা সার্জারি ও থেরিওজেনোলজি বিভাগের অধ্যাপক নাসরিন সুলতানা এবং কৃষি সম্প্রসারণ শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক আসাদুজ্জামান সরকারের নামও শোনা যাচ্ছে।
বিআরইউ