দেশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি উঠেছে। সেই সাথে সুষ্ঠু ধারার রাজনৈতিক চর্চায় ক্যাম্পাসভিত্তিক নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি তুলছেন শিক্ষার্থীরা।
ব্যতিক্রম নেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ও। ছাত্ররাজনীতি বন্ধ ও ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি তুলেছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে মৌখিকভাবে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক হুমায়ুন কবির চৌধুরী। এছাড়া শিক্ষার্থীদের ঘোষিত আল্টিমেটাম অনুযায়ী ছাত্র সংসদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে একটি কমিটিও গঠনের কথা বলেছেন তিনি।
তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ গঠন ও নির্বাচনের সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে দেখা হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের কোথাও ছাত্র সংসদ গঠন ও নির্বাচনের বিধি নেই। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ গঠন করতে আগে আইন সংশোধন বা নতুন বিধিমালা প্রণয়নের প্রয়োজন রয়েছে।
এর আগে ২০১৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ গঠন ও নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা সেসময় শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের খসড়া বিধিও প্রণয়ন করা হয়। তবে কোভিড মহামারিতে তা আর আলোর মুখ দেখেনি।
শিক্ষার্থীদের দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনগত জটিলতা কাটিয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। এ বিষয়ে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, ছাত্ররাজনীতি চর্চার সবচেয়ে বড় জায়গা হচ্ছে ছাত্র সংসদ। জকসুর মাধ্যমে ক্যাম্পাসে গণতন্ত্র চর্চার একটা বড় সুযোগ তৈরি হবে পাশাপাশি ছাত্রদের মধ্য থেকে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব উঠে আসবে।
তিনি আরো বলেন, যেহেতু আমাদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ আইন নেই। অতি দ্রুত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এই আইন নীতি নির্ধারকদের কাছ থেকে পাস করানো উচিত। ছাত্রদের কল্যাণে জকসু আইন শিক্ষার্থীদের মুক্ত রাজনীতির পথ খুলে দিবে।
আরেক শিক্ষার্থী বলেন নাঈম আক্তার রিতা বলেন, ক্যাম্পাসগুলোতে দলীয় ছাত্ররাজনীতির নেতিবাচকতা ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি। তাই সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করতেই হবে। সেক্ষেত্রে ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কথা বলার জন্য থাকতে হবে ছাত্র সংসদ।
তিনি আরো বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগের পরপরই জকসু আইন ও গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করে এক মাসের মধ্যে জকসু নির্বাচন সম্ভব, সেজন্য অবশ্য সদিচ্ছা প্রয়োজন প্রশাসনের।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য আইন সংশোধন কমিটির আহ্বায়ক হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে অধ্যাপক ড. সরকার আলী আক্কাস।
আইনগত জটিলতার বিষয়ে এ অধ্যাপক বলেন, জকসু নির্বাচন দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো আইনগত তেমন সমস্যা না। আলাদা একটা বিধি তৈরি করে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের যে রুলস আছে এর সাথে এলাইন করে নেয়া যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক হুমায়ুন কবির চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থীর দাবি যৌক্তিক। আমাদের এখন উপাচার্য নেই। উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হলে বিষয়টি নিয়ে আমরা কার্যক্রম শুরু করব।
বিআরইউ