বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের হতাশা, পূরণ হচ্ছে না প্রত্যাশা

ববি প্রতিনিধি: প্রকাশিত: অক্টোবর ১৩, ২০২৪, ০৪:১৬ পিএম
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের হতাশা, পূরণ হচ্ছে না প্রত্যাশা

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) নিয়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংকট নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি সময়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ অ্যান্ড হায়ার এডুকেশন সোসাইটি কর্তৃক পরিচালিত একটি জরিপের ফলাফলে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।

জানা যায়, গত ১ অক্টোবর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত ববি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমসাময়িক বিভিন্ন সংকট নিয়ে ‘স্টুডেন্ট ভয়েস: অ্যাড্রেসিং ইস্যুজ’-শীর্ষক একটি গবেষণা জরিপে বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ ব্যাচ থেকে শুরু করে দ্বাদশ ব্যাচ পর্যন্ত মোট ৫০০ শিক্ষার্থী অংশ নেয়।

এতে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষা ও গবেষণার মান ও সুযোগ-সুবিধা, শিক্ষকদের সাথে শিক্ষার্থীদের সুসম্পর্ক, লাইব্রেরির সুযোগ সুবিধা, শ্রেণীকক্ষ, আবাসন ব্যবস্থা, ইন্টারনেট পরিষেবা, চিকিৎসা সেবা, পরিবহণ ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতুলতা ও মান, মানসিক স্বাস্থ্য সেবার প্রয়োজনীয়তা সহ আরো নানান দিক নিয়ে জরিপ চালানো হয়।

বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ২৩ টি বিষয়ে জরিপে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে অর্ধশতাংশের বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীরাই এইসব বিষয়ে নেতিবাচক মত প্রকাশ করেন। অর্থাৎ, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ বিষয়গুলোর সম্পর্কে হতাশ ও অসন্তুষ্ট। অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের দাবি, পূরণ হচ্ছে না তাদের প্রত্যাশার জায়গাগুলো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তাসমিয়া তাবাসসুম বলেন, সময়ের সাথে সাথে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আশার জায়গাটি যেমন বড় হচ্ছে একইভাবে হতাশাও বাড়ছে সমানুপাতিক হারে। সেশনজট, প্রশাসনের উদাসীনতা, শিক্ষা ও অবকাঠামোর অভাবসহ নানা ধরনের সমস্যায় জর্জরিত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার ১৩ বছর পরেও এখনো কাটেনি ভবনের সংকট। ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে সঠিক শিক্ষা পরিবেশ। এছাড়া বিভিন্ন বিভাগের সেশন জটের প্রভাব শিক্ষার্থীদের অন্যতম  হতাশার কারণ।

নাম মাত্র কয়েকটি বিভাগ এগিয়ে থাকলেও সেশন জটের ফাঁদে আটকে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বিভাগ যা শিক্ষার্থীদের উপর বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ ও হতাশার সৃষ্টি করছে এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল কাইয়ুম বলেন, আমরা যখন কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসি তখন এক বুক স্বপ্ন প্রত্যাশা থাকে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় এসে তা গুড়ে বালিতে পরিণত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নানানমুখী সংকটে। বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমাদের যে প্রত্যাশা তার প্রতিফলন ঘটেনা বাস্তবে।

শিক্ষার মান পরিবেশ সুযোগ সুবিধাসহ নানাবিধ সংকটে নিমজ্জিত হয়ে স্রোতের সাথে তাল মিলিয়ে চলে যেতে হয়। আমাদের মেধা ও মননের আশানুরূপ পরিস্ফুটন আর ঘটে না। সময় যাচ্ছে কিন্তু সংকট যেন কাটছেই না আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের।

জরিপটির বিষয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ অ্যান্ড হায়ার এডুকেশন সোসাইটির সহ-সভাপতি হাসিবুল হাসান শোভন বলেন, ক্যাম্পাসের সার্বিক দিকগুলো তুলে ধরার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যাতে অবহিত করা যায় সেই আকাঙ্ক্ষা থেকেই জরিপটি করা। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল প্রকৃতপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের যে মনোভাব তা বের করা আনা ও তুলে ধরা। তবে দুঃখজনক ব্যাপার হলো প্রায় সবগুলোতেই আমরা নেতিবাচক ফলাফল পেয়েছি, যা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের হতাশার বহিঃপ্রকাশ।

জরিপকারী সংগঠনটি জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের  আশা-হতাশার জায়গাটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট তুলে ধরেছেন। যাতে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের এই হতাশা এবং সংকটের জায়গা গুলো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কাজ করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তাদের জরিপের ফলাফল নিয়ে তৈরি করা রিপোর্টটি গ্রহণ করে তাদেরকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এবং সংকট গুলো নিয়ে কাজ করার আশা ব্যক্ত করেছেন।

বিআরইউ