স্থায়ী শ্রেণিকক্ষের দাবিতে আমরণ অনশনে ইবির চারুকলা বিভাগ

ইবি প্রতিনিধি প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২৪, ০৬:৪৫ পিএম
স্থায়ী শ্রেণিকক্ষের দাবিতে আমরণ অনশনে ইবির চারুকলা বিভাগ

স্থায়ী শ্রেণিকক্ষের দাবিতে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, চারুকলা এবং ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের ত্রিমুখী আন্দোলনে এখন উত্তাল কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। প্রশাসনিক জটিলতায় দীর্ঘদিন ধরেই চলছে দাবি আদায়ের অদৃশ্যমান এক দৌড় প্রতিযোগিতা। নিজেদের দাবি আদায়ে মানববন্ধন, আন্দোলন, বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেও পায়নি কোনো স্থায়ী সমাধান। বরং প্রশাসন শিক্ষকের ওপর, শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ওপর, এক বিভাগ অন্য বিভাগের ওপর দায় চাপিয়েছে। তাই অবশেষে আমরণ অনশনে বসেছে চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এমনটাই জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (৪ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে শ্রেণিকক্ষের সংকট নিরসন ও তার স্থায়ী সমাধানে বরাদ্দকৃত রুমের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরণ অনশনে বসেছে ইবির চারুকলা’র শিক্ষার্থীরা। এর আগে ৩ নভেম্বর তিন বিভাগে শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি এবং গত ২৩ অক্টোবর বরাদ্দকৃত রুম ফিরে পেতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন  করেছিল চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের ৪র্থ তলায় চারুকলা বিভাগকে কিছু কক্ষ বরাদ্দ করেন সাবেক প্রশাসন। এরপর গত ৮ অক্টোবর কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো: এমতাজ হোসেন লিখিতভাবে এই ভবনের ৪র্থ তলায় চারুকলা বিভাগকে ২৫টি কক্ষ বরাদ্দ দেন। কিন্তু চারুকলা’র  জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষগুলো ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ  এবং ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগ দখলে নেয়। আর এখানেই হয় আন্দোলনের সূত্রপাত। যদিও রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের  ৫ম তলায় ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ  এবং ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের জন্য কক্ষ বরাদ্দ রয়েছে বলে জানা যায়।

ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবনের নিচতলায় তাদের ২টি মাত্র শ্রেণিকক্ষ ছিল। কিন্তু তাতে ক্লাস, পরীক্ষা নেওয়া কষ্টসাধ্য বলে তারা রবীন্দ্র নজরুল কলা ভবনের ৩য় তলায় চলে যায়। তারপর সেখান থেকে যায় ৪র্থ তলায়।

তারা আরও বলেন, আমরা রুম ধরেছি, আমাদের সকল অফিশিয়াল সরঞ্জাম সেটআপ করা আছে। আমাদের শিক্ষার্থী সংখ্যাও বেশি। তাই আমরা ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা ৪র্থ তলায় থাকতে চেয়েছি।

এদিকে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা ৫ বছর ধরে ৬টা ব্যাচ একটি কক্ষে ক্লাস করে আসছি। গত ছয় মাস ধরে সাবেক উপাচার্যের মৌখিক আশ্বাসে আমরা ৪র্থ তলার কক্ষগুলোতে ক্লাস করে আসছি। অক্টোবরের শুরুর দিকে প্রশাসন থেকে রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের ৪র্থ তলায় ২৩টি কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের জন্য যে কক্ষ বরাদ্দ দিয়েছে তা খুবই অপর্যাপ্ত। আমরা অন্যায়ভাবে কক্ষগুলো দখল করেছি বলে যে প্রচারণা চালানো হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। পুরানো বিভাগ হিসেবে আমাদের ক্লাসরুম বেশি দেওয়ার কথা।

এদিকে চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ২০১৯ সালে তাদের বিভাগের যাত্রা শুরু, বর্তমানে ৪টি ব্যাচ চলমান। আরও একটি নবীন ব্যাচ আসতেছে। অথচ, আমাদের নিজস্ব কোনো ক্লাসরুম নেই। বিভাগের নামে রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনে রুম বরাদ্দ হয়েছে বলে নোটিশ দিয়েছে প্রশাসন। সেই বরাদ্দকৃত রুমের বাস্তবায়ন চায় তারা। আর আশ্বাস না, কেবল প্রশাসন লিখিত বিবৃতি দিয়ে রুম বুঝিয়ে দিলেই সমাধান। বাস্তবায়ন ছাড়া কোনো আলোচনাই তারা আর মেনে নিবে না।

এ বিষয়ে চারুকলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যৌক্তিক। কারণ কর্তৃপক্ষ থেকে বিভাগের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষেই তারা উঠতে চাচ্ছে। তবে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির যেন সৃষ্টি না হয়, শিক্ষক ও প্রশাসনের সেদিকেও খেয়াল রাখা প্রয়োজন। কাল উপাচার্যের সাথে বসে প্রথম আলোচনা হবে এই সংকট নিয়ে।

ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি আতিফা কাফি বলেন, উপাচার্য স্যার কক্ষগুলো পুনরায় বণ্টনের জন্য আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা প্রশাসনের বাহিরের কেউ না। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় বসে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খুব দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন উপাচার্য স্যার।

ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি ড. আবু শিবলী মো. ফতেহ আলী চৌধুরী বলেন, আমি যেহেতু প্রশাসনের অধীনে কাজ করছি, প্রশাসন যেখানে বরাদ্দ দেবে সেখানে যাব। কিন্তু বিভাগের শিক্ষার্থীরা এই রুমগুলো ছাড়তে চাচ্ছে না। কাল উপাচার্য সবাইকে নিয়ে বসবেন। আশা করি সমাধান হবে।

এবিষয়ে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন বলেন, আমরা সবগুলো বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে বসে কক্ষ বরাদ্দের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। মীমাংসিত বিষয়টির সমাধান শিক্ষকদের হাতেই রয়েছে বলে আমি মনে করি। উপাচার্যের নির্দেশে আমি ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ ও ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের সভাপতির সঙ্গেও কথা বলেছি। তারপরও নির্দেশ না মেনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হচ্ছে কি-না দেখার বিষয়।

উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক। আমরা আগামীকাল উপাচার্য স্যারের সাথে বসে আলাপ করে সমাধান দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছি শিক্ষার্থীদের।

ইবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ জানান, রবীন্দ্র নজরুল কলা ভবনের রুম বণ্টনের দায়িত্বে ছিলেন কলা অনুষদের ডিন। তিনি বর্তমানে ক্যাম্পাসে নেই। তিনি ফিরলে তিন বিভাগের সভাপতি ও প্রক্টরিয়াল বডির সাথে বসে যৌক্তিক সমাধানের ব্যবস্থা করা হবে।

আরএস