জামালপুর জেলার বাগেরহাট উপজেলার একটি দরিদ্র পরিবার। যেখানে ২০১৭ সালে বাবাকে হারানোর পর অসুস্থ মাকে নিয়ে জীবনের নানা সংকট এবং সংগ্রাম চলছে চার বোনের। এই চার বোনের একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাওয়ায় পরিবারটিতে আসে নতুন এক আশার আলো।
এই সংকট-সংগ্রামের মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার স্বপ্ন পূরণে দীর্ঘ এক প্রতিকূল পথ পাড়ি দেওয়ার পর তীরে এসেও যেনো তরী ডুবতে শুরু করেছিলো। মেয়েটি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে পপুলেশন সায়েন্স বিভাগে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করলেও ভর্তির টাকা কোনোভাবেই যোগাড় করতে পারছিলেন না।
এমন সময়ে তার স্বপ্ন পূরণে পাশে দাঁড়ায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। ছাত্রদলের আর্থিক সহায়তায় শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন পূরণ হয় তার।
জানা যায়, তার বাবা ব্রেইনস্ট্রোকে মৃত্যুবরণ করার কিছুদিন পর তার মা ও অসুস্থ হয়ে পড়েন। এমন অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলেও নির্ধারিত সময়ের মাঝে ভর্তির টাকা যোগাড় না করতে পেরে ভর্তির সর্বশেষ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ভর্তির স্বপ্ন ভঙ্গের ভয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন শিক্ষার্থী এবং তার মা।
বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিব এবং ছাত্রদল নেতা তোফায়েল জানতে পেরে শাখা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হিমেল আহমেদকে জানায়। এরপর পরিবারটির সংকটে পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমানের কাছে দরখাস্ত নিয়ে যান এবং উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমের সাথে দেখা করে শিক্ষার্থীর ভর্তি ফি মওকুফের আবেদন জানান। আইনি জটিলতার কারণে ভর্তি ফি মওকুফ করার সুযোগ কিংবা এতো দ্রুত সময়ে আর্থিক সহায়তা প্রদান করার উপায় না থাকায় পরবর্তী সময়ে ওই শিক্ষার্থীকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন উপাচার্য।
এক পর্যায়ে তারা অর্থ ও হিসাব দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. রাজু আহমেদের সাথেও আলোচনা করেও ফল পাননি। ততক্ষণে ভর্তির মাত্র এক ঘণ্টা সময় বাকি।
কিন্তু বিষয়টি এখানেই থেমে থাকেনি, ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা নিজেদের প্রচেষ্টায় অর্থ সংগ্রহের জন্য নানা উদ্যোগ নেন। একসময় ছাত্রদল নেতা তোফায়েলের অবিরাম প্রচেষ্টায় প্রয়োজনীয় টাকা সংগ্রহ করা সম্ভব হয় এবং ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হিমেল আহমেদ জানায়, ভর্তি কার্যক্রম শেষ করার পর ওই শিক্ষার্থীর মায়ের হাসি দেখে মনে হয়েছে আমাদের মা হাসছে, এটাই আমাদের প্রাপ্তি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর একজন শিক্ষার্থীকে আর্থিক সহায়তার সুযোগ থাকলেও ভর্তির আগে সেটির কোনো সুযোগ নেই। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যোগ্যতা অর্জনকারী দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তার হাত আরও বিস্তৃত করতে পদক্ষেপের দাবি জানাই এবং জেলা এসোসিয়েশনগুলোকে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানাই।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ঐ শিক্ষার্থী বলেন, ভর্তির পুরোটা সময় ভাইয়ারা আমাকে সাহস জুগিয়েছেন। তাদের সহযোগিতায় অবশেষে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেরেছি। আমাকে এমন নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য করায়, ভাইয়াদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ইএইচ