মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (মাভাবিপ্রবি) চলছে অর্থনীতি বিভাগের আয়োজনে পিঠা উৎসব। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন এ পিঠা উৎসবে। শিক্ষার্থীদের ভিড়ে জমে উঠেছে এবারের উৎসব।
বুধবার (০৮ জানুয়ারি ) সকাল ১০ উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় একাডেমিক ভবনের সামনে এ পিঠা উৎসবের শুভ উদ্বোধন করেন।
পিঠা উৎসব অনুষ্ঠানের উপাচার্য বলেন,খুব উৎসবমুখর পরিবেশ পিঠা উৎসব চলছে। গ্রাম বাংলার বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী পিঠা খেলাম।বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখলাম এরা নিজেরা পিঠা বানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা উদ্যোক্তার মনোভাব রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ১২ তলার সামনেই জমে উঠেছে পিঠা উৎসব। উৎসবে বিভিন্ন রকম পিঠার সমাহার নিয়ে বসেছে ৬ টি স্টল। স্টলগুলোর মধ্যে রয়েছে পিঠা প্রহর, পিঠা বিলাস, পিঠা উৎসব।
বাহারি নামের পিঠাগুলো খেতে শিক্ষার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। পিঠাগুলোর মধ্যে রয়েছে,বউ পিঠা, মেকাপসুন্দরী পিঠা, দুধপুলি পিঠা, চন্দ্র পুলি, সুজির কাটলি বরফি, জামাই পিঠা, চাঁদ পুলি, পাটি সাপটা, গোলাপ ফুল পিঠা, চিকেন ফ্রাই, লবঙ্গ পিঠা, শামুল পিঠা, রুপালি পিঠা, বুটের বরফি, মোহন ভোগ, ডিম সুন্দরী পিঠা, মাছের পিঠা গাজরের হালুয়াম ডিমপুর, গোলাপ, আরশি নগর, ঝাল-মিষ্টি, হৃদয়হরণ পিঠা, শীম ফুল পিঠা, সূর্যমুখী, পাকোয়ান পিঠা, শামুক পিঠা, লবঙ্গ লতিকা, রসে ভরা সবজি পিঠা, পাটি সাপটা, খিরপুলিসহ প্রায় ১০০ পদের পিঠা পাওয়া যাচ্ছে এ স্টল গুলোতে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন দামে বিক্রি করছেন এসব পিঠা। ১০ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামে বিক্রি করছেন এসব পিঠা।নামের এক স্টল বসা অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা বলেন, আমার স্টলে ১৩-১৪ রকমের পিঠা আছে। ১০ থেকে শুরু করে ৫০ টাকা পর্যন্ত এক একটি পিঠা বিক্রি করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের সাড়া পেয়ে আমাদের ভালো লাগছে।
পিঠা উৎসবে আসা পদার্থ বিজ্ঞানের বিভাগের সাকিব আল হাসান রাব্বি বলেন, এ শীতে মায়ের হাতের পিঠা খুব মিস করছি। ক্যাম্পাসে বসে শীতের পিঠা উৎসবের আয়োজন করার জন্য অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ দিচ্ছি। পিঠার মান খুব ভালো। বিভিন্ন জাতের পিঠা খেয়েছেন বলে তিনি জানান।
খাদ্যপ্রযুক্তি এবং পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান জেরিন, প্রতি বছর জানুয়ারি ফেব্রুয়ারিতে শীতের মৌসুমে ক্যাম্পাসের পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়। সম্মিলিত ভাবে প্রতিটি বিভাগ তাদের নিজ উদ্যোগে এই আয়োজন করে থাকে। এই বছর অর্থনীতি বিভাগের আয়োজনে পিঠা উৎসব শুরু হয়েছে।ক্লাস শেষে বন্ধু বান্ধবী সবাই মিলে পিঠা উৎসবে ঘুরতে আসছি,অনেক ধরনের পিঠা খেলাম যার মধ্যে একটা অন্য ধরনের পিঠা কলা পাতায় মোড়ানো যা কলা পিঠা বাংলায় ঐতিহ্যকে তুলে ধরে। বাসায়ও কখনও একসাথে এত পিঠার আয়োজন করা হয় না। কিন্তু পিঠা উৎসবে এসে আমি অনেক ধরনের পিঠার সাথে পরিচিত হতে পেরেছি।
হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী স্বাধীন খান বলেন, আমরা ক্যাম্পাসে থাকি শীতের সময় বাসায় যাওয়া হয় না। আজ এই পিঠা উৎসবে এসে শীতের আমেজে পিঠা খেতে পেরে খুব ভালো লাগছে। জুনিয়র -সিনিয়র ও শিক্ষকদের সাথে আমাদের উৎসবমুখর সময় কাটল।
পিঠা উৎসবের আয়োজনে থাকা এক শিক্ষার্থী বলেন, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ধারণ এবং সম্প্রীতির মেলবন্ধনকে অটুক রাখতে আমাদের এ আয়োজন। আমরা প্রতিবছর এই ধরনের আয়োজন করি। ভবিষ্যতেও এ আয়োজন করবেন বলে জানান।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক ড. মো. নাজমুস সাদেকীন বলেন, পিঠা উৎসব বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরছে। এটি একটি ভালো উদ্যোগ। এ উৎসবের মধ্যে দিয়ে নিজেদের ভেতর সম্প্রীতি গড়ে ওঠার সুযোগ তৈরি হয়। নানা টানাপোড়েনে বাঙালির জীবন থেকে পিঠা-পুলি উৎসব হারিয়ে যেতে বসেছে। এ উৎসবের মাধ্যমে আমরা একে অপরের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।
অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সঞ্জয় কুমার সাহা বলেন, আমরা প্রতিবছর ন্যায় এবারো পিঠা উৎসবের আয়োজন করেছি। আমাদের পিঠা উৎসব সকাল থেকে শুরু হয়েছে।
আমরা বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছি। আমাদের এই কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সহযোগিতা করে চলেছে। ভবিষ্যতে এই ঐতিহ্যের ধারা অব্যাহত থাকবে।
বিআরইউ