‍‍`বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ‍‍` যেন নোটিশের মাঝে সীমাবদ্ধ

ববি প্রতিনিধি প্রকাশিত: জানুয়ারি ২২, ২০২৫, ০৭:১১ পিএম
‍‍`বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ‍‍` যেন নোটিশের মাঝে সীমাবদ্ধ

ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে গত ১১ আগস্ট বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ৮৫ তম সিন্ডিকেট সভায় ক্যাম্পাসে ছাত্র সংগঠন ও সকল পেশাজীবী সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়।

এছাড়াও পরবর্তীতে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক সভা, সমাবেশ, মিছিল, মিটিং এবং যেকোনো প্রকার রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে কঠোর নির্দেশনা প্রদান করে গত ৮ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. এ.টি.এম রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক নোটিশ প্রকাশ করা হয়।

তবে, রাজনীতি নিষিদ্ধের এই প্রশাসনিক নির্দেশনা যেন শুধু নোটিশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবে প্রশাসনের ভূমিকা অনেকটাই নীরব দর্শকের মত। প্রশাসনের এই নির্দেশের তোয়াক্কা না করে বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠনের ব্যানারে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

জানা যায়, গত ৮ অক্টোবর ববি শাখা ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে চারটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ক্যাম্পাসে প্রায় বিভিন্ন কর্মসূচি বিচ্ছিন্নভাবে পালন করতে দেখা যাচ্ছে তাদের।

এর মধ্যে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে নবীন শিক্ষার্থীদের কলম,ফুল এবং বিএনপির রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা দাবি সংশ্লিষ্ট লিফলেট বিতরণ, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে চিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভা, বিজয় দিবসের র‍্যালি ও মিছিল, বিভিন্ন ইস্যুতে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে দলটির নেতা-কর্মীরা।

সম্প্রতি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রোববার (১৯ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির দ্বিতীয় তলায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এর ব্যানারে ‍‍`রচনা প্রতিযোগিতা ও চিত্রাঙ্কন‍‍` ও ‍‍`রচনা প্রতিযোগিতা‍‍` শীর্ষক দুইটি পৃথক আয়োজন করে ছাত্রদলের দুটি গ্রুপ।

যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির দ্বিতীয় তলার কক্ষগুলোতে যেকোনো সংগঠনের অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য টিএসসির পরিচালক বরাবর অনুমতি চেয়ে লিখিত আবেদনের প্রয়োজন রয়েছে, যা আয়োজকরা নেয়নি বলে জানিয়েছেন টিএসসির পরিচালক মো. তারিকুল হক।

তিনি জানান, এ আয়োজনের ব্যাপারে তিনি অবগত ছিলেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস টাইমের বাইরে অগোচরে এধরণের আয়োজন করা হয়েছে।  

রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের কর্মসূচি পালনের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও বরিশাল মহানগরের আহ্বায়ক শাহেদুল ইসলাম বলেন, ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার আইন প্রয়োগে প্রশাসন পুরোপুরি ব্যর্থ। কারণ আমরা ইতিপূর্বে দেখেছি ছাত্রদল বারবার তাদের ব্যানারে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে প্রশাসনকে আমরা কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখিনি। এটা ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য উদ্বেগের বিষয়।

রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব আহমেদ বলেন, আইন দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে যেহেতু লেজুরবৃত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তাই সেই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ক্যাম্পাসে লেজুরবৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির কার্যক্রম থেকে বিরত থাকা উচিত সকলের। কিন্তু ছাত্রদল এখনও ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। তা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। যা থেকে বোঝা যাচ্ছে, প্রশাসন তাদের (ছাত্রদল) আইন পালনে বাধ্য করতে ব্যর্থ।

এ বিষয়ে ববি শাখা ছাত্রদলের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির  সাবেক সদস্য আশিক আহমেদ বলেন, যারা ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করিয়েছে, তারা কি সকল শিক্ষার্থীর ম্যান্ডেট নিয়ে সেটা করেছে? আমাদের মতামত কি নেওয়া হয়েছে তখন? আমরাও তো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো গুপ্ত রাজনীতির চর্চা হোক চাই না। আমরা ওপেনেই রাজনীতি করতে চাই। এছাড়াও ঈশা ও গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলও ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির চালু রাখার পক্ষে র‍য়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. এ.টি.এম রফিকুল। ইসলাম বলেন, ক্যাম্পাসে ছাত্র সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রম  নিষিদ্ধের জন্য কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। এছাড়াও যারা ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তাদের মৌখিকভাবে আমি অনেকবার সতর্ক করেছি।

তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং শিক্ষার্থীরা যদি আবারও ছাত্ররাজনীতি চায় সেটা ছাত্রদের মাধ্যমেই আসতে হবে। 

আরএস