মালয়েশিয়া শ্রম বাজার

প্রবাসী শ্রমিকদের মানবেতর জীবনযাপন

মালয়েশিয়া থেকে, আশরাফুল মামুন প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৫, ২০২৩, ০৫:০২ পিএম
প্রবাসী শ্রমিকদের মানবেতর জীবনযাপন

মালয়েশিয়ায় কলিং ভিসায় গত এক বছরে ৪ থেকে ৫ লাখ বাংলাদেশী কর্মীর  নতুন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তবে ইদানীং দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ কর্মীরা দূতাবাসসহ গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে সরাসরি অভিযোগ করে বলছেন তারা অনেকেই চুক্তি অনুযায়ী কাজ ও বেতনসহ অন্যন্যা সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন না।

এজন্য তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তারা পাল্টা পাল্টি অভিযোগ করে বলছেন- শ্রমিকদের পছন্দমত কাজ ও অন্যন্যা সুবিধা না পেলে তারা সংগঠিত হয়ে বিদ্রোহ করে।  এজন্য তাদের এ সংক্রান্ত সমস্যা গুলো চিহ্নিত করে সমাধানের জন্য বাংলাদেশ  দূতাবাস ও দুই দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণা লয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

তবে দূতাবাসের লেবার উইং কর্মকর্তারা বলছেন, কলিং ভিসায় মালয়েশিয়া কাজ না পাওয়া  কর্মীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর সমস্যা সমাধানে তারা আন্তরিক রয়েছে। ইতিমধ্যে সরকার ও নিয়োগকর্তাদের সাথে আলোচনা করে কিছু কিছু কোম্পানির শ্রমিকদের সমস্যা সমাধান করা হয়েছে। দূতাবাস কর্তৃক ব্যবস্থা নেওয়ার পর অনেকেই চাকরি ও বেতনাদি নিয়মিত পাচ্ছেন। এ সংক্রান্ত আরও যে একাধিক সমস্যাগুলো রয়েছে পর্যায়ক্রমে সবার সমস্যা সমাধান করা হচ্ছে।

অনেকেই  কাজ ও বেতন না পাওয়ার ইস্যুতে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে অজ্ঞাত স্থান থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের সমস্যাগুলো তুলে ধরে ভিডিও ছবি পোস্ট করে সহযোগিতা চাচ্ছেন। কুয়ালালামপুরসহ দেশটির বিভিন্ন এলাকায় গোপনে তথ্য সংগ্রহ করে দেখা যাচ্ছে শ্রমিকদের কিছু কিছু অভিযোগের সত্যতা মিলছে। দেখা গেছে তাদের যে বাসস্থানে রাখা হচ্ছে সেখানে ধারণ ক্ষমতার চেয়েও অতিরিক্ত শ্রমিক গাদাগাদি করে রাখা হচ্ছে। প্রতিবাদ করলে মারধরসহ নির্যাতন করা হয়। কেউ কেউ অভিযোগ করে বলছেন- তাদের পর্যাপ্ত খাবার ও পানীয়  দিচ্ছেন না নিয়োগকর্তারা। মালয়েশিয়ার কেমন্ত্রীয়ান কেসিহাটান বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং মানবসম্পদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ঘোষিত নীতিমালা অনুসরণ করা হচ্ছে না। ফলে তারা অস্বাস্থ্যকর ও অনিরাপদ পরিস্থিতিতে জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।

এদিকে এসব অভিযোগের বিষয়ে একাধিক নিয়োগকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলেও তারা কেহই  ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি,  অভিযুক্ত এসব নিয়োগকর্তাদের মধ্যে অধিকাংশই বাংলাদেশী যারা মালয়েশিয়ায় বৈবাহিক সূত্রে অভিবাসী শ্রমিক নিয়োগের লাইসেন্স পেয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব নিয়োগকর্তারা বলেন, কলিং ভিসায় যেসব বাংলাদেশী কর্মী এসেছেন তারা মনে করেন, এখানে এসেই বেতন ভাতাদিসহ কাজ পেয়ে যাবেন, কাজে যোগদান প্রক্রিয়াটি একটি সময়সাপেক্ষ বিষয়, নতুন আগতদের সবাই অদক্ষ শ্রমিক, এখানে শ্রমিকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে পর্যায়ক্রমে সবার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তবে তারা অপেক্ষা করতে চান না।  তাছাড়া তাদের পছন্দসই কাজ না পেলে কোম্পানি থেকে পালিয়ে গিয়ে অবৈধ হয়ে যায়। তারা যেসব অভিযোগ করেন সব সত্য নয়।

এ বিষয়ে কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশের দূতাবাসে নিযুক্ত কাউন্সিলর (শ্রম) সৈয়দ শরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানে অত্যান্ত আন্তরিক, লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা অসংখ্য কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি, ব্যবস্থা নেওয়ার পর কর্মীরা ভালো আছে। এখন নতুন যে অভিযোগ আসলে পর্যায়ক্রমে সব সমস্যা সমাধান করা হবে। কোন নিয়োগকর্তা কর্মীদের সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হলে  মালয়েশিয়া জেটিকের মাধ্যমে তাদের লাইসেন্স ও এজেন্ট বাতিল করা হতে পারে।

এআরএস