মালয়েশিয়ায় বসবাসরত ১৫ লাখ প্রবাসীর ভোগান্তি মুক্ত পাসপোর্টসহ অন্যন্যা সেবা নিশ্চিত করতে কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস এক জরুরি নির্দেশনা জারি করে এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।
গতকাল বিকালে এ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ হাইকমিশন কুয়ালালামপুর সম্মানিত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সেবা প্রদানে সর্বদা সচেষ্ট আছে। প্রবাসীদের পরামর্শ কিংবা তাদের অভিযোগের বিষয়গুলো আমলে নিয়ে হাইকমিশন প্রবাসীদের জন্য সরকারি পরিষেবা নিশ্চিতকল্পে বিভিন্ন কর্মকৌশল গ্রহণ করেছে।
প্রবাসীদের হয়রানি, দীর্ঘসূত্রতা, সেবা প্রত্যাশীদের সাথে অসদাচারণের মতো বিষয়গুলো হাইকমিশন অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে তা লাঘবে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাসহ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছে।
কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের বিদ্যমান জনবল দিয়ে প্রায় ১৫ লক্ষ বাংলাদেশি প্রবাসীকে বহুবিধ সেবা প্রদান সম্পন্ন করা সর্বদাই একটি বড় চ্যালেঞ্জ অন্যকথায় একটি দুরূহ কাজ। এসব সেবার মধ্যে অন্যতম একটি সেবা হচ্ছে পাসপোর্ট সেবা। হাইকমিশন হতে প্রদত্ত পাসপোর্ট সেবায় দীর্ঘসূত্রতা এবং অনিয়ম নির্মূল করার অভিপ্রায় নিয়ে হাইকমিশন বিগত ৩ বছরে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এসব কার্যক্রমের কিছু কিছু ইতঃপূর্বে সম্মানিত প্রবাসীদের অবহিত করা হয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুনরায় পাসপোর্ট সেবা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তসমূহ অবহিত করা হচ্ছে।
প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে হাইকমিশন ই-পাসপোর্ট সেবা চালু করার জন্য স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক অনুমোদন সাপেক্ষে বিগত ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ তারিখে আউট সোর্সিং কোম্পানি ESKL-এর সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করে। হাইকমিশনের সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তার উপস্থিতিতে একাধিক আনুষ্ঠানিক বৈঠকের মাধ্যমে যথাযথ আলোচনার মাধ্যমে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির পর আধুনিকায়নের মাধ্যমে উন্নতমানের সেবা নিশ্চিত করেছে আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান ইএসকেএল।
হাইকমিশন স্টেকহোল্ডার অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে অনুধাবন করে যে, পাসপোর্টের আবেদনপত্র পূরণের মাধ্যমেই দালাল বা মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের সম্পৃক্ততার সৃযোগ সৃষ্টি হয়। তাই দালালমুক্ত পাসপোর্ট পরিষেবা নিশ্চিতকল্পে ই-পাসপোর্টের আবেদন ফরম পূরণ, পাসপোর্ট ফি জমাকরণ, ছবি তোলা, বায়োমেট্রিক গ্রহণসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক অনুমোদনের আগ পর্যন্ত সকল কার্যক্রম আউট সোর্সিং কোম্পানি (ESKL) সম্পন্ন করবে মর্মে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
চুক্তি অনুযায়ী বর্ণিত সেবাসমূহ (আবেদন ফরমপূ রণ, পাসপোর্ট ফি ব্যাংকে জমাকরণ, ছবি তোলা, বায়েমেট্রিক ইত্যাদি) গ্রহণের বিনিময়ে সেবাগ্রহীতাকে ন্যূনতম অর্থ মালয়েশিয়ান মুদ্রায় ৩২ রিঙ্গিত বা (৭.৩৪ মার্কিন ডলার) সার্ভিস চার্জ প্রদান করতে হবে। এখানে উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে পাসপোর্ট অধিদপ্তর মালয়েশিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে এমআরপি প্রদানের বিষয়ে প্রতিটি এমআরপি ইস্যুর জন্য ঠিকাদারকে সার্ভিস চার্জ ৭৮.৪৮ রিঙ্গিত বা ১৮ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করেছিল।
বর্তমান চুক্তি অনুযায়ী প্রতিটি লেনদেন হবে দেশটির রাষ্ট্রীয় ব্যাংক Maybank এর মাধ্যমে। আউটসোর্সিং সার্ভিস চার্জ এবং সরকারি ফি প্রতিটি পাসপোর্টের অনুকূলে আলাদা-আলাদা হিসাবে জমা নেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি স্বতন্ত্র এন্ট্রি হচ্ছে যা ডিজিটালি এবং ম্যানুয়ালি মটিরিং বা যাচাইয়ের ব্যবস্থো রয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতির কোনো সুযোগ নেই, বরং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের কারণে অধিকতর উন্নত ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় প্রবাসীদের অতি প্রয়োজনীয় সেবাসমূহ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে।
প্রবাসীদের পাসপোর্ট পরিষেবা হাইকমিশন ও আউটসোর্সিং কোম্পানির মধ্যে যে চুক্তি স্বাক্ষরিত করা হয়েছে তা যথাযথ বাস্তবায়ন ও তদারকির জন্য হাইকমিশন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে। এ টাস্কফোর্স যে কোনো অভিযোগ পেলেই মান্যবর হাইকমিশনারের অনুমোদন সাপেক্ষ ব্যবস্থা নিচ্ছে। ইতিমধ্যে কিছু ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজেনে টাস্কফোর্স সদস্যরা নিয়মিত এসব নিয়মিত মনিটরিংয়ের জন্য সরেজমিনে ইএসকেএল এর স্থাপনা পরিদর্শন করেন। তবে আশার কথা হচ্ছে, ই-পাসপোর্ট সেবা প্রদানে এখন পর্যন্ত তেমন অভিযোগ-অনুযোগ পাওয়া যাচ্ছে না।
মহামারি কোভিড-১৯ চলাকালে বিশেষ ব্যবস্থায় মালয়েশিয়ায় পোস্ট অফিসের মাধ্যমে পাসপোর্ট আবেদন গ্রহণ করে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে পাসপোর্ট বিতরণ করা হত। এ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়ায় প্রক্রিয়াটি বন্ধ করে এখন সরাসরি পাসপোর্ট বিতরণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পাসপোর্টের আবেদন ফরমপূরণ, ব্যাংকে টাকা জমাসহ পাসপোর্ট প্রাপ্তির পূর্ণাঙ্গ প্রক্রিয়ায় দালাল বা মধ্যস্বত্ত্বভোগীর হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। ‘আগে আসলে আগে পাবেন’, এটাই হবে পাসপোর্ট প্রাপ্তির একমাত্র প্রক্রিয়া। সেবাপ্রার্থীদের যাতে অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে না হয় সে কারণে আউটসোর্সিং কোম্পানি ৪৫ টি কান্টারের মাধ্যমে সুবিশাল অবকাঠামোতে সেবা দিচ্ছে । যেখানে লাইনে ধাক্কাধাক্কি না করে কম্পিউটার সিস্টেমে টিকিট সংগ্রহ করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হলরুমে অপেক্ষার পর দ্রুত সার্ভিস পাচ্ছে প্রবাসীরা। এছাড়া ১২ ঘণ্টা কল সেন্টারের মাধ্যমে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
ইএইচ