মালয়েশিয়ায় যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী নানা বর্ণিল আয়োজনে মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে।
দিবস উপলক্ষ্যে শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দেশটির বাংলাদেশ হাইকমিশনের উদ্যোগে কুয়ালালামপুর অ্যান্ড সেলেনগর চাইনিজ এসেম্বলি হলে আলোচনা সভা, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এতে বাংলাদেশসহ ১৩টি দেশের শিল্পী ও নাগরিকেরা অংশগ্রহণ করেন।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিক, জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, কম্যুনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এখন সারা বিশ্বে ভাষাগত বৈচিত্র্য উদযাপনের দিনে পরিণত হয়েছে। ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছে এবং স্বাধীনতার পথ দেখিয়েছে।
তিনি উন্নত দেশ গঠনে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে মালয়েশিয়ায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের একযোগে কাজ করার উদাত্ত আহ্বান জানান। মালয়েশিয়ায় একটি বাংলা স্কুল এবং শহীদ মিনার স্থাপনের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠানের গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি রাষ্ট্রদূত কেনেডি মেয়ং অনন। তিনি তার বক্তব্যে ভাষাগত বৈচিত্র্যের গুরুত্ব তুলে ধরেন ও বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
এ পর্বে ইউনেস্কো আঞ্চলিক অফিস, জাকার্তা এর কান্ট্রি ডিরেক্টর মিসেস মাকি কাতসুনো-হায়াশিকাওয়ার ধারণকৃত বক্তব্য প্রচারিত হয়। তিনি বহুভাষিকতা রক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। শিক্ষায় মাতৃভাষার ব্যবহার এবং ভাষা সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করেন।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সেন্টার ফর অল্টারনেটিভসের পরিচালক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ, ডেপুটি কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ লেইলা নাগমানোভা, ইউএনএইচসিআর এবং মালয়েশিয়ার সিটি ইউনিভার্সিটির সিনিয়র লেকচারার ড. রামিন হাজিনাফার্ড। এসময় তারা তাদের বক্তব্যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনে সব ভাষাভাষীর ঐক্যের চেতনার কথা বলেন। এ দিবসকে তারা ঐক্যের একটি শক্তিশালী ও অনুপ্রেরণামূলক বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বর্ণনা করেন।
প্যানেল আলোচনার মডারেটর ছিলেন ডেপুটি হাইকমিশনার মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খাস্তগীর। মিনিস্টার (রাজনৈতিক) ফারহানা আহমেদ চৌধুরীর উপস্থাপনা করেন।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে ১৩টি দেশের শিল্পীদের সমন্বয়ে একটি বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। এতে অংশ নেয় মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, নাইজেরিয়া, রাশিয়ান ফেডারেশন, সুদান, তানজানিয়া, নেপাল, জাম্বিয়া, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, কিরগিজিস্তান, মেক্সিকো এবং বাংলাদেশ হাই কমিশন পরিবারের সদস্যগণ।
একই মঞ্চে বিভিন্ন দেশের শিল্পীদের বর্ণিল পরিবেশনা এক অনন্য সাংস্কৃতিক সম্প্রীতির বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। উক্ত অনুষ্ঠানে হাইকমিশনার এর সহধর্মিণী পেন্ডোরা চৌধুরী, কর্মকর্তাগণ এবং তাদের পরিবারবর্গ, বিভিন্ন দূতাবাসের কূটনীতিকগণ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীগণ, সাংবাদিকবৃন্দ এবং বিপুলসংখ্যক প্রবাসী সদস্যগণ তাদের পরিবারসহ উপস্থিত ছিলেন।
আরএস