চলচ্চিত্র গবেষণায় শিল্পকলা পদক পেলেন অনুপম হায়াৎ

বিনোদন প্রতিবেদক প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২, ০৪:২২ পিএম
চলচ্চিত্র গবেষণায় শিল্পকলা পদক পেলেন অনুপম হায়াৎ

সম্প্রতি শিল্প ও সংস্কৃতিতে নিবেদিত প্রাণ ১৮ গুণী ও দুই সংগঠনকে শিল্পকলা পদক প্রদান হয়। ২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রবর্তন করে শিল্পকলা পদক। মাঝে করোনা মহামারীর কারণে এই পদক প্রদান স্থগিত থাকায় এ বছর একসঙ্গে ২০১৯ ও ২০২০ সালের শিল্পকলা পদক প্রদান করা হলো। দুই বছরে ১৮ গুণীজন ও দুই সাংস্কৃতিক সংগঠন অর্জন করেছে পদক।

গত বৃহস্পতিবার বর্ণিল আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও সংগঠনের পদক তুলে দেয়া হয়। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি অংশ নেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সংস্কৃতি সচিব মোঃ আবুল মনসুর। সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। আলোচনা ও পদক প্রদান শেষে একাডেমির শিল্পীদের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

২০১৯ সালে শিল্পকলা পদকপ্রাপ্তরা হলেন- নাট্যকলায় মাসুদ আলী খান, কণ্ঠ সঙ্গীতে হাসিনা মমতাজ, চারুকলায় আবদুল মান্নান, চলচ্চিত্রে অনুপম হায়াৎ, নৃত্যকলায় লুবনা মারিয়াম, লোকসংস্কৃতিতে শম্ভু আচার্য্য, যন্ত্রসঙ্গীতে মোঃ মনিরুজ্জামান, ফটোগ্রাফিতে এমএ তাহের, আবৃত্তিতে হাসান আরিফ এবং সৃজনশীল সাংস্কৃতিক সংগঠন হিসেবে ছায়ানট। বাচিকশিল্পী হাসান আরিফ প্রয়াত হওয়ায় শিল্পীর পক্ষে পদক গ্রহণ করেন তার বোন রাবেয়া রওশন।

২০২০ সালের পদকপ্রাপ্তরা হলেন- কণ্ঠসঙ্গীতে মাহমুদুর রহমান বেণু, চারুকলায় শহিদ কবীর, যন্ত্রসঙ্গীতে মোঃ সামসুর রহমান, ফটোগ্রাফিতে আ ন ম শফিকুল ইসলাম স্বপন, চলচ্চিত্রে শামীম আখতার, নাট্যকলায় মলয় ভৌমিক, আবৃত্তিতে ডালিয়া আহমেদ, লোকসংস্কৃতিতে শাহ আলম সরকার, নৃত্যকলায় শিবলী মোহাম্মদ এবং সৃজনশীল সাংস্কৃতিক সংগঠন হিসেবে দিনাজপুর নাট্য সমিতি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বছরের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের লালন, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন আমাদের শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীরা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে তারা নিঃস্বার্থভাবে অবদান রেখে চলেছেন।

আলোচনা ও পদক প্রদান শেষে পরিবেশিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সঞ্চালনায় ছিলেন দিলরুবা সাথী ও ইমতিয়াজ আহমেদ।

প্রসঙ্গত, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে চলচ্চিত্র গবেষক হিসেবে পুরস্কার প্রদানের কোন ক্যাটাগরি নেই। তবে এবারই প্রথম সরকারি কোন পুরস্কারে যুক্ত হলো চলচ্চিত্র গবেষক ক্যাটাগরি। আর প্রথমবারই চলচ্চিত্র গবেষক হিসেবে শিল্পকলা পদক অর্জন করলেন বরেণ্য সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র গবেষক অনুপম হায়াৎ। ৪৯ বছর ৩ মাস যাবৎ লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত এই মানুষটি। চলচ্চিত্রকে ভালোবেসে নিরলসভাবে গবেষণার কাজটি করে গেছেন তিনি। অনুপম হায়াৎ ১৯৫০ সালের ১ জুন নারায়ণগঞ্জ জন্মগ্রহণ করেন। পিতা সফিউদদীন ভূইয়া ও মাতা শাহেরা বানু। তিনি মনোহরদী প্রাথমিক স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা, পাড়গাও হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা, শেখ বোরহান উদ্দিন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় এম.এ সম্পন্ন করেন। ১৯৭৩ সাল থেকে চলচ্চিত্র বিষয়ক গবেষণা, লেখালেখি, সাংবাদিকতা, গ্রন্থরচনা, তথ্য ও নিদর্শন সংগ্রহ, শিক্ষকতা এবং সংগঠন চর্চায় জড়িত। চলচ্চিত্র বিষয়ক প্রথম লেখা ছাপা হয় ১৯৭৩ সালে সাপ্তাহিক চিত্রালীতে। চলচ্চিত্র বিষয়ক প্রথম গ্রন্থ “চলচ্চিত্রের খোলা জানালায়" ছাপা হয় ১৯৮৩ সালে।

চলচ্চিত্র বিষয়ে বহু লেখা দেশ-বিদেশের পত্র-পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। চলচ্চিত্র, নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, গণমাধ্যম, সংস্কৃতি ও বাঙালি মণীষীদের জীবন ও কর্ম নিয়ে প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা মোট ৫০টি। এরমধ্যে চলচ্চিত্র বিষয়ক গ্রন্থের সংখ্যা ২২।

উল্লেখযোগ্য হলো- সপুংশক অহংকার, ১৯৮০; চলচ্চিত্রের খোলা জানালায়, ১৯৮৩; বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাস, ১৯৮৭; নাট্যকার নজরুল, ১৯৯৭; চলচ্চিত্র বিদ্যা, ২০০৪; জহির রায়হানের চলচ্চিত্র- পটভূমি বিষয় ও বৈশিষ্ট্য, ২০০৭; রবীন্দ্রনাথ ও চলচ্চিত্র, ২০০৮, বঙ্গবন্ধু ও চলচ্চিত্র, ২০২০; চলচ্চিত্র বিচিত্রা, মননে মন্তাজ, ২০২০। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাস গ্রন্থ ও চলচ্চিত্র বিষয়ক পাঠ্যপুস্তকের প্রথম প্রণেতা । গবেষণা, লেখালেখি ও শিক্ষকতার পাশাপাশি তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড, জাতীয় চলচ্চিত্র জুরী বোর্ড, চলচ্চিত্র অনুদান তহবিল, আমদানি ও রপ্তানি সংক্রান্ত কমিটি, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চলচ্চিত্র উৎসবের জুরী বোর্ড, বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ জার্নাল সম্পাদনা পরিষদ ও গবেষণা ফেলো তত্ত¡বধান, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টিভি ইনস্টিটিউট জার্নাল সম্পাদনা পরিষদ, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি ও প্রযোজক সমিতির পুরস্কার কমিটি এবং আন্তর্জাতিক বাংলা চলচ্চিত্র সমালোচক পুরস্কার কমিটির (কলকাতা) সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে চলচ্চিত্র শিক্ষায় অন্যতম অগ্রণী শিক্ষক অনুপম হায়াৎ। চলচ্চিত্র বিষয়ে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, গ্রিন বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র, টিভি ইনস্টিটিউট ও বিভিন্ন চলচ্চিত্র সংসদসমূহের কোর্সে শিক্ষাদান করছেন। এছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বহু সেমিনারে চলচ্চিত্র বিষয়ে প্রবন্ধ পাঠ করেছেন। চলচ্চিত্র ক্ষেত্রে তার অনবদ্য অবদানের জন্য প্রায় ২০টি পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেন।

উল্লেখযোগ্য- নারায়ণগঞ্জ ফিল্ম সোসাইটি পদক, ১৯৮৮; জসিম উদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৮৮; বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতিরর এস.এম পারভেজ স্মৃতি পদক, ১৯৮৭ উল্লেখযোগ্য।

কেএস