জীবন খাতার সত্তরে রুনা লায়লা

বিনোদন প্রতিবেদক প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২২, ০২:৫১ এএম
জীবন খাতার সত্তরে রুনা লায়লা

উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী, সুরস্রষ্টা রুনা লায়লা বাংলাদেশের গর্ব। ‘স্বরলিপি’ সিনেমায় গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা ও সুবল দাসের সুরে ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে বলো কী হবে’ গান দিয়েই প্রথম বাংলা ভাষা-ভাষী শ্রোতা দর্শকের মন জয় করে নিয়েছিলেন। এই গানের একটি কথা ছিল। ‘জীবন খাতার ছিন্ন পাতা শুধু বেহিসাবে ভরে রবে’।

সেই রুনা লায়লা তার জীবন খাতার সত্তরে পা রাখছেন অর্থাৎ আজ তিনি সত্তর বছরে পা রাখছেন। তাই এবারের জন্মদিন তার ফেলে আসা জীবনের অনেক জন্মদিনের চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আজকের এই দিনটি অনেক বিশেষ বিশেষ একটি দিন। যে কারণে দিনটিতে তিনি তার পরিবারের সঙ্গেই উদযাপন করবেন বলে জানিয়েছেন।

রুনা লায়লা জানান, গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় তিনি অনন্যা রুমা প্রযোজিত বর্ণাঢ্য ‘তারকা কথন’ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন। এবারের অনুষ্ঠানটি বিশেষায়িত করে তোলার জন্য চ্যানেল আইও বেশ আয়োজন করেই দর্শকের সামনে তারকা কথন তুলে ধরার চেষ্টা করছে। একই অনুষ্ঠানে কোনাল, ঝিলিক, তরিক মৃধা ও মেজবাহ বাপ্পীর রুনা লায়লাকে নিয়ে গাওয়া একটি বিশেষ গানও প্রচার করা হবে।

গানটি লিখেছেন হাসনাত করিম পিন্টু ও সুর করেছেন মনোয়োর হোসেন টুটুল। এবারের জন্মদিন প্রসঙ্গে রুনা লায়লা বলেন, ‘সত্যি বলতে কী, এবারের জন্মদিনটি কেন যেন মনে হচ্ছে একটু বেশিই বিশেষ। অনেক আগে থেকেই এই দিনটিকে ঘিরে চলছে নানান আয়োজন। পারিবারিকভাবেও দিনটিকে উদযাপনের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আমরা পরিবারের সদস্যরাই থাকছি। এছাড়া চ্যানেল আইতে থাকছে বিশেষ আয়োজন।

তবে জীবনের এই বিশেষ দিনে বাবা-মায়ের কথা বিশেষভাবে মনে পড়ছে। বড় বোন দীনা আপার কথা মনে পড়ছে। হয়তো সবাই থাকলে জীবনের এই দিনটি আরো বিশেষায়িত হতো। তারপরও যারা আছেন সবসময় পাশে তাদের নিয়েই ভালো থাকাটাও জরুরি। আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি সুস্থ আছি। সবাই দোয়া করবেন যেন আগামী দিনেও আল্লাহ ভালো রাখেন, সুস্থ রাখেন।’ রুনা লায়লার স্বামী আলমগীর বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব।

তিনি একাধারে নায়ক, চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক। রুনা লায়লা প্রথমবারের মতো সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন আলমগীর পরিচালিত ‘একটি সিনেমার গল্প’ চলচ্চিত্রে। আর প্রথম গান সুর করেই তিনি সুরকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।  গানটি লিখেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার এবং গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন আঁখি আলমগীর। গানের কথা হচ্ছে ‘গল্পকথার ওই কল্পলোকে জানি , একদিন চলে যাবো’।

২০১৫ সালে রুনা লায়লা তার সঙ্গীত জীবনের ৫০ বছর পূর্ণ করেছেন। ১৯৭৭ সালে আব্দুল লতিফ বাচ্চু পরিচালিত ‘জাদুর বাঁশি’ চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এরপর তিনি একই সম্মাননায় ভূষিত হন ‘এক্সিডেন্ট’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘তুমি আসবে বলে’, ‘দেবদাস’ ও ‘প্রিয়া তুমি সুখী’ হও চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করে। কয়েক বছর আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে রুনা লায়লা ‘ডিস্টিনগুইস সেলিব্রেটি লিজেন্ড অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন। সঙ্গীতে অসাধারণ অবদান এবং নিজের দেশের পাশাপাশি এশিয়া ও বিশ্বব্যাপী নারীদের সৃজনশীলতা উন্নয়নে দৃষ্টান্তমূলক অবদানের জন্য রুনা লায়লাকে এই সম্মাননা দেয়া হয়। রুনা লায়লার একমাত্র মেয়ে তানি লায়লা লন্ডনে থাকেন।

আগামী ১৯ নভেম্বর বিকেলে রুনা লায়লা প্রধান থেকে স্টারপ্লাস কমিউনিকেশন আয়োজিত অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে সম্মাননা দেবেন। রুনা লায়লার অভিনয় জীবনের কথা বিশেষভাবে বলতে গেলে বলতে হয় যে তিনি চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘শিল্পী’ সিনেমাতে অভিনয় করেছিলেন।  এতে তার বিপরীতে ছিলেন চিত্রনায়ক আলমগীর।

এরপর তাকে আর কখনো অভিনয়ে দেখা যায়নি।  আর কখনো কী অভিনয়ে দেখা যাবে আপনাকে? এমন প্রশ্নের জবাবে রুনা লায়লা বলেন,‘ না, না, আর না। একবারই নিজের ভালোলাগা থেকে অভিনয় করেছি। সত্যি বলতে কী অভিনয় অনেক কঠিন বিষয়। যেহেতু নিজের জীবনের উপর ছিলো ‘শিল্পী’ সিনেমার বিষয়বস্তু।

তাই শ্রদ্ধেয় চাষী নজরুল ইসলামের অনুপ্রেরণায় সিনেমাটিতে অভিনয় করেছিলাম। আর এই দু:সাহস করতে চাইনা। আমি সঙ্গীতশিল্পী, এটাই আমার বড় পরিচয়, ভীষণ ভালোলাগার।’ রুনা লায়লা ধ্রুব মিউজিক স্টেশনের কর্ণধার ধ্রুব গুহ’র উদ্যোগে পাঁচটি গানের সুর করেছিলেন।

গানগুলো লিখেছিলেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার, কবির বকুল। সঙ্গীতায়োজন করেছিলেন রাজা কাশেফ। এরপর তিনি সর্বশেষ ‘লেজেন্ড ফর এভার’ অ্যালবাম প্রকাশ করেন তারই সুরে। এতে গান গেয়েছিলেন আশা ভোসলে, হরিহরণ, আদনান সামী, রাহাত ফতেহ আলী খান ও রুনা লায়লা নিজে।