চলতি বছরের শুরু থেকেই ভালো যাচ্ছে না পরীমনি-শরীফুল রাজের সংসার। এর মধ্যে রাজের ফেসবুক থেকে অভিনেত্রী তানজিন তিশা, নাজিফা তুষি ও সুনেরাহ বিনতে কামালের কিছু ছবি ও ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর রাজের সঙ্গে পরীমনির মতপার্থক্য প্রকাশ্যে আসে। সেই ঘটনার পর গত রোববার একটা লাইভ অনুষ্ঠানে পরিষ্কার করেন নিজের অবস্থান।
অনেক সমস্যার পরও রাজের সঙ্গে সংসার টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলে জানান পরীমনি। তিনি বলেন, ‘নানুভাই সব সময় আমার সঙ্গে থাকত। তিনি আমাদের বাসায় থাকায় আমার মনে হয়েছে রাজের সমস্যা হচ্ছে, তখন আমি নানুভাইকে গ্রামে পাঠিয়ে দিই।’ এ কথা বলতে গিয়ে পরীমনি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানে কেঁদেও ফেলেন তিনি। এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকবার আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তে দেখা যায় তাঁকে। কেঁদেছেন বারবার।
পরীমনি বলেন, সংসার জীবনের এ অশান্তি এবং এই ব্লেম গেম থেকে পরিত্রাণ চান তিনি।
পরীমনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘আজ থেকে আমি রাজের বউ নই। আমি এই সম্পর্ক টেনে নিতে চাই না।’ রাজের উদ্দেশে বলেন, যত দ্রুত সম্ভব তিনি যেন তাঁকে ডিভোর্স দেন। সামনাসামনি বসে তাঁদের সম্পর্কের সুন্দর পরিসমাপ্তি চান, পরীমনি চান না লাইভে এসে তাঁকে এসব কথা বলতে হয়।
২৯ মে মধ্যরাতের সেই বিতর্ক যেন থামছেই না। ‘পরাণ’খ্যাত শরিফুল রাজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে সেদিন কিছু ছবি ও ভিডিও ক্লিপস ফাঁস হয়। যার স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ১৮ মিনিট। এতে শুধু রাজ-পরীমনি দম্পতি নয়, আরও জড়িয়ে রয়েছেন তিন নায়িকা। কে এই ভিডিও ফাঁস করেছে তা এখনো জানা যায়নি। তিন নায়িকার উদ্দেশে পরীমনি বলেন, ‘মামলার হুমকি না দিয়ে মামলা করো। কে ভিডিও ফাঁস করেছে তা তো জানতে পাঁচ মিনিট লাগবে। তবু কেন বের করা হচ্ছে না।’ এরপর তিনি জানান, রাজের সঙ্গে সেই তিন নায়িকার সম্পর্ক শুধু বন্ধুত্বের নয়, এর চেয়ে বেশি। এর প্রমাণও রয়েছে তাঁর কাছে।
পরীমনি জানান, এই ভিডিও রাজের ভাই ফাঁস করতে পারেন। কেননা তাঁর কাছে রাজের ফোনের এক্সেস আছে। পরীমনি জানান, রাজের ভাই তাঁকে অসম্মান করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন।
এরআগে গত ৪ মার্চ রাতে এ অনুষ্ঠানে পরীমনির উদ্দেশে রাজ বলেন, ‘বেবি, আই লাভ ইউ। যা-ই হোক না কেন, আনন্দে থেকো। আমরা আমাদের সন্তানকে ভালো রাখব।’ তিনি আরও বলেন, আমি আমার সন্তানের মাকে সম্মান করি। এ ছাড়া আরও ছবি, ভিডিও ফাঁস করা নিয়ে কথা বলেন তিনি এবং পরীমনিকে বিভিন্ন ব্লেম দেন।
রাজের বক্তব্যের জবাব দেন পরীমনি। সেখানে তিনি রাজের উদ্দেশে বলেন, ‘সন্তানের মাকে সম্মান করি। এ কথা গণমাধ্যমে এসে বললেই হয় না, কাজ করে দেখাতে হয়।’
রাজ বলেছিলেন ২৯ মে রাতে ভিডিও ফাঁস হওয়ার আগে পরীমনির সঙ্গে তাঁর কথা হয় এবং তিনি রাজ্যকে দেখতে চান। কিন্তু তখন তিনি বলেননি ফোনে কী কথা হয়। এ প্রসঙ্গে পরীমনি জানান, কল তিনি দিয়েছেন, রাজ নয়। কল দেওয়ার কারণ, অনেকে তাঁকে জানায়, মধ্যরাতে বিভিন্ন জায়গায় রাজকে দেখা যায়। অনেকে পরীর কাছে জানতে চায়, তাঁদের ডিভোর্স হয়েছে কি না। এ বিষয় জানতে ফোন করেছিলেন তিনি। এরপরই রাজ রাজ্যকে দেখতে চায়। তখন পরীমনি রাজ কোথায় আছেন জানতে চান যাতে সন্তান নিয়ে সেখানে আসতে পারেন। এরপরই রাজের কল কেটে যায়, রাজের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর ঘটে ভিডিও ফাঁসের ঘটনা।
প্রথমে ছবি, ভিডিও ফাঁস হওয়ার ঘটনায় সুনেরাহকে দায়ী করেছেন পরীমনি।
পরীমনি আরও বলেন, ‘আমি মেয়েটা অন্যরকম। সাপের লেজে পা দিলে যেমন সে ছেড়ে দেয় না, তেমনি আমিও আমার লেজে পা দিলে চুপ থাকব না।’ তিনি বলেন, ‘রাজের ১০ বছরের বন্ধুরা আমার কাছের হওয়ার কথা। কিন্তু তারা যে রাজের বন্ধু, আমি জানতামই না।
আরও সময় দিলে তাঁদের সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে পরী জানান, সেটা আর সম্ভব নয়। তিনি পাঁচ মাস সময় দিয়েছেন। এর মধ্যে যখন হয়নি, তখন তাঁদের সম্পর্কের কার্যত ইতি ঘটেছে বলে তিনি মনে করেন।
এক ঘণ্টার বেশি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানে মাঝেমধ্যে ভাষার প্রয়োগে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারান তিনি। এ জন্য অবশ্য দর্শকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন ঢাকাই ছবির এই নায়িকা। একপর্যায়ের আপ্লুত হয়ে রাজের উদ্দেশে পরীমনি বলেন, ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমি ডিভোর্স চাই। আমি আর আপনার সঙ্গে থাকতে চাই না। আর পারছি না।
সোহাগ/আরএস