দেশে প্রথম মেরুদণ্ড জোড়া লাগানো দুই শিশুকে আলাদা করা হবে কাল

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: নভেম্বর ৩০, ২০২২, ০৮:২১ পিএম
দেশে প্রথম মেরুদণ্ড জোড়া লাগানো দুই শিশুকে আলাদা করা হবে কাল

বঙ্গবন্ধু শেখ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) প্রথম বারের মত আলাদা হচ্ছে মেরুদণ্ড জোড়া লাগা দুই শিশু। যা দেশের ইতিহাসেও প্রথম মেরুদণ্ড আলাদা করার ইতিহাস হতে যাচ্ছে। বুধবার (৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ আমার সংবাদকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) শহীদ ডা. মিল্টন হলে প্রথমবারের মত মেরুদণ্ড জোড়া লাগা দুই শিশু আলাদা করার জন্য মেডিক্যাল বোর্ড বসবে। এরপর মেরুদণ্ড আলাদা করার প্রক্রিয়া শুরু হবে। 

৪ থেকে ৫টি অপারেশনের মাধ্যমে সাত মাস ১৩ দিনের নুহা ও নাবা, দুই বোনকে আলাদা করা হবে। এই অপারেশন করতে প্রায় এক থেকে দুই মাস সময় লেগে যেতে পারে। আগামীকাল মেডিকেল বোর্ডের বৈঠকে এসব বিষয় নিয়েই পরিকল্পনা করা হবে।

নুহা ও নাবা নামের এ যমজ শিশু বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দেশে কোনো মেরুদণ্ড জোড়ালাগা শিশুর অস্ত্রোপচারে, এটাই প্রথম। জটিল, কঠিন ও অত্যন্ত স্পর্শকাতর এ অস্ত্রোপচারের নেতৃত্বে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক এবং সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন।

কুড়িগ্রামের  আলমগীর রানা, পেশায় পরিবহন শ্রমিক। প্রায় সাড়ে সাত মাস আগে রানার স্ত্রী নাসরিন ফুটফুটে দুই যমজ কন্যাসন্তানের জন্য দেন। তবে যমজ শিশু দুটির মেরুদণ্ড ও স্পাইন জন্মগতভাবে জোড়ালাগা। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় যাকে কনজয়েন্ড টুইন বলে। দরিদ্র পিতা-মাতার পক্ষে এ ব্যয়বহুল অস্ত্রোপচারের ব্যয়ভার বহন করা অসম্ভব। তাই এখন পর্যন্ত তাদের চিকিৎসার সব ব্যয় বহন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ে এ যমজ শিশুর চিকিৎসা সংক্রান্ত একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ মেরুদণ্ড জোড়ালাগা যমজ শিশুর চিকিৎসায় ১৯ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে দিয়েছেন। অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে বোর্ডে পেডিয়াট্রিক সার্জারি, না। পেডিয়াটিক মেডিসিন, ভাসকুলা সার্জারি, অ্যানেসথেশিয়া, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক রয়েছেন।

অধ্যাপক ডা. মোহাম্মাদ হোসেন বলেন, প্রায় পাঁচ মাস আগের কথা। তিনি চিকিৎসকদের একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে কুড়িগ্রাম যান। সেখানে চিকিৎসকরা মেরুদণ্ড জোড়ালাগা এ নবজাতকের বিষয়টি তাকে জানান। তিনি এ শিশুদের দেখতে যান এবং উন্নত চিকিৎসায় তাদের ঢাকাতে আসতে অনুরোধ করেন। 

অধ্যাপক হোসেন বলেন, ৫ মাস ধরে এ মেরুদণ্ড ও স্পাইন জোড়া লাগা শিশুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসার্জারি বিভাগে তার অধীনে চিকিৎসাধীন। বয়স কম থাকায় তখনই অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়নি। দুধাপে অস্ত্রোপচার হবে।

সব ঠিক থাকলে এ মাসের শেষ সপ্তাহে প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচার করা হবে। এক মাস পর দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত অস্ত্রোপচার হবে। দুধাপের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হওয়ার পর আরও কয়েকমাস তাদের হাসপাতালে থাকতে হতে পারে। তিনি বলেন, মেরুদণ্ড ও স্পাইন জোড়ালাগা শিশুর অস্ত্রোপচার অত্যন্ত জটিল স্পর্শকাতর। তবে আমরা আশাবাদী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসার্জারি বিভাগ জানায়, শিশু নুহা ও নাবার বয়স ৭ মাস ১৩ দিন। শিশুদের মায়ের অতীতে তার কোনো খারাপ প্রসূতি ইতিহাস ছিল না, অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা ছিল না, কোনো পরিচিত অসুস্থতা ছিল না, এমনকি বিকিরণের সংস্পর্শে আসার কোনো ইতিহাস ছিল তিনি কখনো কোনো টেরাটোজেনিক ড্রাগ গ্রহণ করেননি।

জন্মগত অসঙ্গতির কোনো পারিবারিক ইতিহাসও নেই। প্রসবপূর্ব ২০ সপ্তাহে গর্ভাবস্থায় যমজ দেখা যায়। তবে গর্ভাবস্থার ২৬ সপ্তাহে করা অ্যানোমলি স্ক্যানে কোনো জন্মগত অসঙ্গতি দেখা যায়নি। গর্ভাবস্থার বাকি সময়টা ছিল অস্বাভাবিক। গর্ভাবস্থার ৩৫ সপ্তাহে সিজারের মাধ্যমে বাচ্চাদের প্রসব করা হয়।

জন্মের পরপরই তারা কেঁদে ওঠে। এ সময় তাদের জন্মের ওজন ছিল 8 দশমিক ৫ কেজি। শিশুরা সুস্থ এবং কৌতুকপূর্ণ, তবে মূত্রনালী পৃথক হলেও তাদের মলদ্বার সংযুক্ত। শিশুরা শব্দ ও স্পর্শে সংবেদনশীল। তাদের যকৃত, গলব্লাডার, প্লীহা, অগ্ন্যাশয়, কিডনি এবং ইউরেটার্স স্বাভাবিক রয়েছে।

টিএইচ