বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে

দিনভর অবরুদ্ধ ভিসি, বৈঠকেও হয়নি সমাধান

মো. সোহাগ বিশ্বাস প্রকাশিত: জুন ১৩, ২০২৩, ০৫:২৬ পিএম
দিনভর অবরুদ্ধ ভিসি, বৈঠকেও হয়নি সমাধান

মাসিক ভাতা ৫০ হাজার টাকা করা, বকেয়া ভাতা পরিশোধ এবং ভাতা নিয়মিত দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ও এর অধীন পোস্টগ্রাজুয়েট প্রাইভেট প্রশিক্ষণার্থী পাঁচ শতাধিক চিকিৎসক।

মঙ্গলবার (১৩ জুন) বেলা ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সি ব্লকের সামনে জড়ো হতে থাকেন চিকিৎসকরা। এরপর সাড়ে ১১টার দিকে বিএসএমএমইউ উপাচার্যের কার্যালয় ভবনের নিচে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। এতে নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন বিএসএমএমইউ উপাচার্য।

এ সময় চিকিৎসকরা ৫০ হাজার টাকা ভাতা দাবিসহ তিন দফা দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। তারা বলেন, বর্তমান বাজার মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মাসিক ভাতা বৃদ্ধি করতে হবে।

আন্দোলনকারী চিকিৎসক আল আমিন বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশেই এই ভাতার পরিমাণ লাখ টাকা আর সেখানে আমাদের ভাতা মাত্র ২০ হাজার। আমরা  চাই আমাদের এই ভাতা বৃদ্ধি করা হোক। 

এ প্রসঙ্গে চিকিৎসক শাহানা খানম বলেন, এই দাবী আমাদের দীর্ঘ দিনের। আজ আমরা নৈতিক দাবী তুলেছি কিন্তু ভিসি স্যার আমাদের সহযোগিতা না করে উলটো চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের দিয়ে অপমান করছে। এই দাবী না মানা পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাবো না।

আন্দোলনরত  চিকিৎসক মো: সাইফুল্লাহ বলেন, গত অর্থবছরে বাজেটের ৬ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অথচ তাদের ভাতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে না এবং নিয়মিতও প্রদান করা হচ্ছে না। এটি স্বাস্থ্যখাতের জন্য লজ্জার বিষয়। রেসিডেন্টদের মতো নন-রেসিডেন্টদের বরাদ্দের টাকাও দেওয়া হয়নি, এটা প্রতারণা।

এদিকে চিকিৎসকদের এই আন্দোলন ঘিরে বিএসএমএমইউ পুরো দিন ছিলো উত্তপ্ত। সকাল থেকে ১১ টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে আন্দোলন। এসময় অবরুদ্ধ ছিলেন ভিসি। এক পর্যায়ে বিএসএমএমইউর ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারীরা দুপুর ১ টার দিকে ভিসির পক্ষে অবস্থান নিলে চিকিৎসকদের সাথে বিবাদে জড়ান। এসময় পরো বিশ্ববিদ্যালয় ছিল উত্তপ্ত।

চিকিৎসকরা জানান, এ ক্ষেত্রে কেউ কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। এ সময় চিকিৎসকদের শান্ত করার চেষ্টা করা হলে তারা সরাসরি উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে চান। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা অবস্থানের ঘোষণা দেন।

বিকেল ৪টার দিকে রমনা জোনের এডিসির মধ্যস্থতায় ভিসির সাথে আলোচনায় বসে আন্দোলনকারীরা। প্রায় ৩০ মি. আলোচনা শেষে আন্দোলনকারীরা জানান, ভিসির আশ্বাসে সন্তষ্ট নয় তারা। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাথে কথা না বলা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষনা দেন তারা।

আন্দোলনের বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি আমার সংবাদকে বলেন, তারা আমাদের সন্তানের মতো, তাদের আমরা বুঝিয়েছি যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং সচিবের সঙ্গে কথা বলে তাদের দাবি পূরণের চেষ্টা করব। তারপরও যদি তারা কর্মবিরতিতে যায়, তাহলে তারা কোর্স আউট হয়ে যেতে পারে। আমাদের আইনে আছে, কোনো শিক্ষার্থী যদি টানা তিনদিন ক্লাসে উপস্থিত না থাকে, তাহলে তাদের বের করে দেওয়া যাবে।

চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে স্বাস্থ্য সেবায় কোনো প্রভাব পড়বে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, তারা তো ডাক্তার না, তারা আমাদের ছাত্র। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত চিকিৎসক আছেন, রোগী সেবায় তাদের দরকার নেই। তাদের ছাড়াও আমাদের চলবে। আমরা আমাদের সেবা পুরোদমে চালিয়ে যাব।

এদিকে ভিসির এই আশ্বাসেও শান্ত হয়নি আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা। এরপর তারা দাবী না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

আরএস