ঢাকা মেডিকেলে সেনাবাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় চলছে চিকিৎসা সেবা

আমার সংবাদ ধর্ম ডেস্ক প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৪, ০১:০৭ পিএম
ঢাকা মেডিকেলে সেনাবাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় চলছে চিকিৎসা সেবা

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসককে মারধর এবং জরুরি বিভাগে ভাঙচুর করার প্রতিবাদে চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দিয়েছিলেন ডাক্তাররা। তবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে যৌথভাবে সকল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে নিশ্ছিদ্রভাবে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিতের মধ্যে দিয়ে চলছে রোগীদের চিকিৎসা সেবাদান কার্যক্রম।

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) ঘুরে পর্যাপ্ত পরিমাণে সেনাবাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিতের এমন চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরী বিভাগের সামনে বেড়েছে রোগী ও রোগীর স্বজনদের আনাগোনা। প্রতিদিনের মতন রোগীরা আসছেন চিকিৎসা নিতে। ভিড় বেড়েছে টিকিট কাউন্টারে।

এছাড়াও জরুরি বিভাগের সামনে একটি এপিসি কারসহ সেনা সদস্যরা কঠোর দ্বায়িত্ব পালন করছেন। একই সঙ্গে গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই জরুরি বিভাগের গেটের ভেতরে সেনা সদস্য মোতায়েনের চিত্র দেখা গেছে। সেই সঙ্গে জরুরি বিভাগের ভেতরে পুলিশের অবস্থান ও তথ্য কেন্দ্রের ভেতরে ও বাহিরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)‍‍`র সদস্যদের উপস্থিতি দেখা গেছে। এবং জরুরী বিভাগের সামনে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন র‍্যাব এর উপস্থিতিও দেখা গেছে।

এদিকে আজ সকাল থেকে কর্মবিরতি শেষে সীমিত পরিসরে আউটডোর বা বর্হির বিভাগের সেবা চালু করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক)। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা থেকে এই সেবা চালু করা হয়। যা চলবে দুপুর ১টা পর্যন্ত।

এর আগে গত শনিবার (৩১ আগস্ট) নিউরো সার্জারি বিভাগের তিন চিকিৎসককে মারধরের ঘটনা ঘটে। এতে দোষীদের সিসি টিভি ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে গ্রেফতারের আল্টিমেটাম দেন চিকিৎসকরা। অন্যথায় ২৪ ঘণ্টা পর তারা কর্মবিরতিতে যাবেন বলে ঘোষণা দেন।

ওইদিন মধ্যরাতে খিলগাঁও সিপাহীবাগ এলাকা থেকে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহতরা ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে আসেন। পরে অন্য আরেক গ্রুপ চাপাতিসহ হাসপাতালে জরুরি বিভাগের ভেতরে ঢুকে যায় এবং তাকে কুপিয়ে মৃত্য নিশ্চিত করে। এ সময় হাতেনাতে ৪ জনকে আটক করে সেনাবাহিনীকে দেয় কর্তৃপক্ষ।

পরে অন্য আরেক রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের অনস্টপ ইমারজেন্সি সেন্টারে ভাঙচুর চালায় রোগীর স্বজনরা।

এরপর এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা শঙ্কায় জরুরি বিভাগের কার্যক্রম বন্ধ করে দেন চিকিৎসকরা। দোষীদের শনাক্ত করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের বিচারের দাবি জানান। অন্যথায় কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দেন। পরে আল্টিমেটামের ২৪ ঘণ্টা শেষ হওয়ার আগেই কর্মবিরতিতে যান তারা এবং সব ধরনের চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দেন ও চার দফা দাবি তোলেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতিতে থাকবেন বলেই জানান। এরপর স্বাস্থ্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তারা।

তাদের দাবির মধ্যে থেকে দুটি দাবিকে প্রাধান্য দেয়া হয়। বাকি দুটি দাবি হলো স্বাস্থ্য পুলিশের ব্যবস্থা এবং চিকিৎসা সুরক্ষা আইন করা। তবে এই দাবি দুটি একটু সময় সাপেক্ষ বলে অন্য দুটি দাবি যা নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতারের আওতায় আনতে সক্ষম হওয়ায় শর্ত সাপেক্ষে শুধু মাত্র জরুরি বিভাগের সেবা শুরু করেন।

ওইদিনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেন, ‍‍`আমরা আশা করছি আজকের মধ্যেই চিকিৎসকদের যে পূর্ণ কর্মবিরতি সেটা তারা উইথড্র (প্রত্যাহার) করবেন। আমরা তাদেরকে আহ্বান জানিয়েছি তারা বিবেচনা করছেন।‍‍`

আসাদুজ্জামান বলেন, ‍‍`গতকাল রাতেই আপনারা হয়তো দেখেছেন র‍্যাব, আর্মি, পুলিশ, বিজিবি, আনসার সকল বাহিনীর সদস্য এখানে নিয়োজিত ছিল এবং এখনো আছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে যার পরিপ্রেক্ষিতে ডাক্তাররা জরুরি বিভাগের চিকিৎসা সার্ভিস দিচ্ছেন।‍‍`

তিনি বলেন, ‍‍`আপনারা জানেন তাদের যে দুইটা দাবি ছিল একটা ছিল নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সেটা আমরা করেছি। আর আসামিদের ধরার একটা দাবি ছিল সেটাই ইতিমধ্যেই যে ২ নাম্বার আসামি সে কিন্তু ধরা পড়েছে। বাকি আসামিদের ধরার জন্য জোর প্রচেষ্টা চলছে। সকল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী র‍্যাবসহ সবাই কিন্তু চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা আশা করছি আজকের মধ্যে সকল আসামিরা ধরা পড়বে।‍‍`

বহির্বিভাগটা এই মুহূর্তে বন্ধ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‍‍`বহির্বিভাগ ছাড়া বাকি সকল বিভাগ চালু আছে। আমি আশা করছি আজকের মধ্যেই সকল বিভাগ চালু হবে। আমরা উনাদের সাথে নেগোসিয়েশন করছি। উনাদের মূল দাবি ছিল নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সেটা আপনারা দেখতে পাচ্ছেন নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করেছি। আসামিদের মধ্যে একজন ধরা পড়েছে। আর বাকি যে দাবিগুলো ছিল আপনারা জানেন যে স্বাস্থ্য পুলিশের একটা ব্যবস্থা এবং চিকিৎসা সুরক্ষা আইন করা। এটা আসলে একটু সময় সাপেক্ষ।‍‍`

তিনি বলেন, ‍‍`গতকাল উপদেষ্টা মহোদয় এসেছিলেন। উনি বলেছেন এগুলো একটু চিন্তা ভাবনা করতে হবে তবে উনি আশ্বাস দেন নাই। আপনারা জানেন যে এই ধরনের আইন করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে কথাটা সম্ভব সেটা বিবেচনা করার বিষয় আছে।‍‍`

এরপর আন্দোলনকারীরা এক বৈঠক শেষে আজ থেকে সীমিত পরিসরে আউটডোর চালুর ঘোষণা দেন।

নিউরোসার্জারি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. আব্দুল আহাদ বলেন, ‍‍`আগামীকাল থেকে সীমিত পরিসরে অর্থাৎ সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বহির্বিভাগ চালু থাকবে।‍‍`

তিনি বলেন, ‍‍`ইমার্জেন্সি সেবা চালু থাকবে, অফিস সকাল ৮টা থেকে চালু হলেও আগামীকাল থেকে আউটডোর সেবা সীমিত পরিসরে সকাল ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত চলবে। আর সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত আন্দোলনে অবস্থান কর্মসূচী চলবে।‍‍` তবে রোগীদের স্বার্থে প্রাইভেট সেবা চালু থাকবে বলে জানান তিনি।

বিআরইউ