সহকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে ক্যারিবিয়ান রাষ্ট্র হাইতিতে বিদ্রোহী পুলিশ কর্মকর্তারা রাস্তায় নেমেছেন। এ সময় তারা তাণ্ডব চালান এবং কার্যত দাঙ্গা সৃষ্টি করেন। চলতি মাসে অপরাধী চক্রের হাতে এক ডজনেরও বেশি পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। এর পরই তারা এই দাঙ্গা সৃষ্টি করে।
বৃহস্পতিবার হাইতির রাজধানী পোর্ট-অব-প্রিন্সে এ ঘটনা ঘটে। দাঙ্গাবাজ কর্মকর্তারা (সহকর্মীদের হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে) ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য সরকারকে দায়ী করেন।
বৃহস্পতিবার ১০০ জনের বেশি বিক্ষোভকারী হাইতির রাজধানী পোর্ট-অব-প্রিন্সে রাস্তা অবরোধ করেন, টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদের পাশাপাশি নিরাপত্তা ক্যামেরা ভেঙে দেন এবং যানবাহন ভাঙচুর ও ক্ষতিগ্রস্ত করেন।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের গেট ভেঙে ফেলেন এবং পরে হাইতির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবেশের চেষ্টা করেন।
বিবিসি বলছে, ক্যারিবিয়ান এই দেশটির পুলিশ স্টেশনে বিভিন্ন গ্যাং হামলায় চলতি বছরের শুরু থেকে ১৪ কর্মকর্তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হাইতির ন্যাশনাল পুলিশ জানিয়েছে, শুধু বুধবারই বন্দুকযুদ্ধে সাতজন অফিসার নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় হাইতিয়ান মিডিয়া আউটলেট ভ্যান্ট বেফ ইনফোর তথ্য অনুসারে, বৃহস্পতিবার রাজধানী পোর্ট-অব-প্রিন্স এবং গোনাইভস শহরে পুলিশ কর্মকর্তারা ‘ক্রোধে’ রাস্তায় নেমেছিলেন এবং জ্বলন্ত ব্যারিকেড তৈরি করেন।
ভ্যান্ট বেফ ইনফো আরও জানিয়েছে, ‘ক্রোধে’ রাস্তায় নামা দাঙ্গাবাজ এসব পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েকজন প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরির সরকারি বাসভবনে গিয়েছিলেন বলেও জানা গেছে।
বিবিসি বলছে, এরিয়েল হেনরির সরকারি বাসভবন খালি অবস্থায় দেখতে পেয়ে তারা রাজধানী পোর্ট-অব-প্রিন্স বিমানবন্দরের দিকে রওনা হয়। প্রধানমন্ত্রী হেনরি আর্জেন্টিনায় একটি শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ শেষে সেখানে সবেমাত্র অবতরণ করেছিলেন।
বিক্ষোভকারীরা বিমানবন্দরের জানালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে হেনরি সেখান থেকে সরে যেতে সক্ষম হন বলে হাইতির রেডিও টেলি মেট্রোনোম জানিয়েছে। এই বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার দেশটির অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও স্কুল বন্ধ ছিল।
ন্যাশনাল নেটওয়ার্ক অব দ্য ডিফেন্স অব হিউম্যান রাইটস নামে হাইতিয়ান এক মানবাধিকার গোষ্ঠী জানিয়েছে, এরিয়েল হেনরি ২০২১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশটিতে ৭৮ পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে।
ক্যারিবিয়ান এই রাষ্ট্রটিতে একাধিক অপরাধী গ্যাং সক্রিয় রয়েছে এবং তাদের সংখ্যা ও অস্ত্র অনেক বেশি হওয়ায় হাইতির পুলিশ তাদের সহিংসতা থামাতে পারেনি। গত সেপ্টেম্বরে, গ্যাংয়ের সদস্যরা পোর্ট-অব-প্রিন্স বন্দরে একটি বড় জ্বালানি ডিপো দখল করে নেয়। সেই সময় তারা আমদানি করা জ্বালানি সরবরাহে এবং খাদ্য ও ওষুধ বিতরণে বাধা সৃষ্টি করে।
হাইতিতে নিযুক্ত জাতিসংঘের দূত হেলেন লা লাইম বুধবার বলেছেন, ‘হাইতির পরিস্থিতি গুরুতর। এখানকার গ্যাং সহিংসতা নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। ২০২২ সালে গড়ে প্রতি ছয় ঘণ্টায় একটি অপহরণের মুখোমুখি হয়েছেন মানুষ।’
তিনি আরও বলেন, ‘উল্লেখযোগ্য মাত্রার অতিরিক্ত সহায়তা ছাড়া আমরা এই লড়াইয়ে জিততে পারব না।’
উল্লেখ্য, ১৮০৪ সালে লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের প্রথম স্বাধীন দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয় হাইতি। দেশটি প্রথমে স্পেনীয় ও পরে ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল। ফরাসি ঔপনিবেশিকদের উৎখাত করে বিশ্বে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নেতৃত্বাধীন সরকার গঠিত হয় দেশটিতে।
স্বাধীন হলেও বিগত দুই শতাব্দী ধরে দেশটি একের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা, সহিংসতা, আগ্রাসন আর দমনপীড়নের মধ্য দিয়ে গেছে। এর মধ্যে স্বৈরতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদী শাসনের শিকারও হয়েছেন দেশটির মানুষ।
সূত্র: বিবিসি।
আরএস