কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যজুড়ে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও মহান শহীদ দিবস। এ উপলক্ষে মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) কলকাতা বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সকালে উপহাইকমিশন প্রাঙ্গণে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হয়েছে।
এরপর কলকাতার সোহরাওয়ার্দী এভিনিউয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ গ্রন্থাগার ও তথ্যকেন্দ্রের সামনে থেকে এক সুদৃশ্য প্রভাতফেরি বের হয়। হাতে নানা রঙের পোস্টার, ফুলের মালা নিয়ে হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি প্রভাতফেরিতে অংশ নেয় অসংখ্য মানুষ। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ ধ্বনিকে সামনে রেখে প্রভাতফেরিটি কলকাতার পার্ক সার্কাস সেভেন পয়েন্ট ক্রসিং, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড ধরে পৌঁছায় উপহাইকমিশন প্রাঙ্গণে।
এরপরে মিশন প্রাঙ্গণে অবস্থিত শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক দিয়ে সালাম-বরকত-জব্বারদের স্মৃতির উদ্দেশে শ্রদ্ধা জানান উপহাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস, প্রথম সচিব (প্রেস) রঞ্জন সেন, প্রথম সচিব (বাণিজ্য) শামসুল আরিফসহ অন্য কর্মকর্তারা। সেই সঙ্গে, মিশন প্রাঙ্গণে ‘মুজিব মঞ্চে’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতেও মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান দূতাবাসের কর্মকর্তারা।
এছাড়া আলাদাভাবে শহীদ বেদীতে ফুল দিয় ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো হয় ইন্দো-বাংলা প্রেস ক্লাব, কলকাতা প্রেস ক্লাব, ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সমিতি, বাংলাদেশ বিমান, সোনালী ব্যাংকের পক্ষ থেকে।
পরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রীর পাঠানো বাণী পাঠ করে শোনানো হয় এবং এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এদিন বিকেলে মিশন প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যেখানে উপস্থিত থাকবেন কলকাতাস্থ বিদেশি দূতাবাসের কর্মকর্তারা।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী এক বিবৃতিতে বলেছেন, মাতৃভাষা আমাদের আত্মার শরিক, প্রাণের স্পন্দন। নিজের ভাষার গৌরব ও অধিকার রক্ষায় যারা প্রাণ দিয়েছেন. তাদের জানাই সশ্রদ্ধ প্রণাম। মাতৃভাষাকে ভালোবেসে সব ভাষাকেই জানাই সম্মান।
রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের উদ্যোগে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা একাডেমির সভাঘরে ২১-২৩ ফেব্রুয়ারি তিন দিনব্যাপী ভাষা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে থাকছে কবিতা পাঠ ও আলোচনামূলক অনুষ্ঠান।
মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের উদ্যোগে উদযাপন করা হবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। সেখানে উপস্থিত থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতাসহ রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী, সচিব, বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সোমবার সারা রাত অনুষ্ঠান করেছে ‘ভাষা ও চেতনা সমিতি’ নামে একটি সংগঠন। সোমবার বিকেল থেকেই কলকাতার রবীন্দ্রসদন লাগোয়া একাডেমি অব ফাইন আর্টসের সামনে রাণুছায়া মঞ্চে শুরু হয় বাংলা ভাষা উৎসবের নাটক, বাউলগান, লোক উৎসব। সকালে প্রভাতফেরির মধ্য দিয়ে শেষ হয় সেই অনুষ্ঠান।
এছাড়া, ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তের অন্যতম স্থলবন্দর পেট্রাপোল-বেনাপোলের জিরো পয়েন্টে পেট্রাপোল বন্দর সংলগ্ন এলাকায় ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে শহীদদের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করবেন দু’দেশের প্রতিনিধিরা৷
শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণেও ভারত-বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা সমবেতকণ্ঠে বাংলা গান গেয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করেছেন।
দিনটিকে মাথায় রেখে পশ্চিমবঙ্গের জেলা ও মহুকুমাগুলোতেও আয়োজন করা হয়েছে নানা অনুষ্ঠান। এছাড়া রাজ্যের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ক্লাব, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে বিশেষ মর্যাদায় দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে।
আরএস