জার্মানিতে বসবাস করা মুসলিমদের নানা দল আছে, আছে মসজিদ কমিউনিটি। তাদের সাথে কর্তৃপক্ষের যোগাযোগ কেমন করে হবে? কিংবা তরুণ মুসলিমরা কীভাবে সমাজে একীভূত হবেন? এই ব্যবধান মেটাতে কাজ করে যাচ্ছেন পরামর্শক হামদান।
জার্মানিতে প্রায় দুই হাজার ৮০০ মসজিদ আছে। প্রায়ই মসজিদগুলোকে নিয়ে আলোচনা বা বিভেদ তৈরি হয়, বিশেষ করে মসজিদগুলোতে যখন উঁচু মিনার তৈরি করা হয়। যদিও সাধারণভাবে নিয়ম প্রয়োগের ক্ষেত্রে চার্চ ও সিনাগগকে আলাদা করা হয় না, তবে তা অনেক সময় স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ওপরও নির্ভর করে।
এই রকম পরিস্থিতিতেই এগিয়ে আসেন ৪৪ বছর বয়সি হুসেইন হামদান। ইসলামিক ও রিলিজিয়াস স্টাডিজের এই গবেষক জার্মানির প্রথম ইসলামিক পরামর্শক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। তার কাজ হলো স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও মুসলিম কমিউনিটির মাঝে বিভেদ মেটানো। গত আট বছর ধরে হামদান জার্মানির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাডেন-ভ্যুর্টেমব্যার্গ রাজ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। আলাপকালে তার প্রথম গুরুত্বপূর্ণ অ্যাসাইনমেন্টের কথা স্মরণ করেন তিনি।
হুসেইন হামদান বলেন, ‘তারিখটা ছিল ২০১৫ সালের ২ জুন। আমাকে একটি সুফি সংগঠনকে মূল্যায়ন করার জন্য ডাকা হয়।’
তবে হামদানের নিয়োগ হয় আরো আগে ২০১২ সালে। ক্যাথলিক চার্চ নিয়োগ দেয় তাকে। অ্যাকাডেমি অফ ডিওসিস অফ রোটেনবুর্গ-স্টুটগার্টে প্রথম মুসলিম হিসেবে যোগ দেন তিনি। এক কোটি ১০ লাখ মানুষের রাজ্য বাডেন ভ্যুর্টেমব্যার্গে আট লাখ মুসলিমের বাস। সেখানে নব্বইয়ের দশকে প্রথম মসজিদ নির্মিত হয়।
প্রথমে হামদানকে ‘ইয়াং মুসলিমস অ্যাজ পার্টনার্স` নামের একটি প্রকল্পের দায়িত্ব দেয়া হয়। তার কাজ ছিল স্থানীয় সরকার ও নীতি নির্ধারকদের পরামর্শ দেয়া। প্রতিদিন তিনি সাধারণত এ ধরনের প্রশ্নের সন্মুখীন হন: এই মিনারটি কি বেশি উঁচু?
মুসলিমদের এতগুলো দলের মধ্যে কে কী দায়িত্বে আছেন, তরুণ মুসলিমদের কেমন করে সমাজে একীভূত করা যায়, সেক্ষেত্রে মসজিদ কমিটি কী ভূমিকা পালন করতে পারে এসব।
তবে অনেক প্রশ্নেরই সাদামাটা উত্তর নেই। যেমন, মিনারের উচ্চতা স্থানীয় বিল্ডিং কোডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে, কিংবা যেসব এলাকা মুসলিম অধ্যুষিত বা সংখ্যা তুলনামূলক বেশি, সেখানকার মুসলিমদের সাথে কর্তৃপক্ষের নিয়মিত যোগাযোগ করা প্রয়োজন। হামদান প্রশাসনিক নিয়ম কানুন সম্পর্কে মুসলিমদেরও তথ্য দেন।
জার্মানির প্রশাসন যেসব ইসলামিক গ্রুপের ওপর উগ্রবাদের জন্য নজরদারি করছে, তার সম্পর্কে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে জানান হামদান। একইসাথে তিনি টার্কিশ-ইসলামিক ইউনিয়ন ফর রিলিজিয়াস অ্যাফেয়ার্স বা সংক্ষেপে ডিটিবের অধীন সব মসজিদকে যেন এক নজরে দেখা না হয়, সে সম্পর্কেও কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেক মসজিদ কমিউনিটিকে আলাদা করে দেখতে হবে। কারণ শহর ভেদে এরা অনেক আলাদা হতে পারে।’
হামদান যোগ করেন, ‘সৎভাবে কোনো আলোচনায় অংশ নেবার অর্থ হলো কখনো কখনো আপনাকে খুব জটিল প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।` স্থানীয় জনগণ ও কর্তৃপক্ষের মধ্যকার মেলবন্ধন জোরদার করার কথা বলেন তিনি। সূত্র : ডয়চে ভেলে
এইচআর