কিছু ভুল ছাড়া ইসরায়েলে হামলা ছিল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ : হামাস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: জানুয়ারি ২২, ২০২৪, ১১:৪৯ এএম
কিছু ভুল ছাড়া ইসরায়েলে হামলা ছিল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ : হামাস

দুই হাজার তেইশ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলে চালানো নজিরবিহীন হামলাটি ‘প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ’ ছিল বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এছাড়া ইসরায়েলে হামলার সময় ‘কিছু ত্রুটির’ কথাও স্বীকার করেছে গোষ্ঠীটি। সোমবার (২২ জানুয়ারি) এক প্রতিবদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস বলেছে, গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে পরিচালিত হামলায় কিছু ‘ত্রুটি’ ছিল। তবে হামাস যোদ্ধারা কেবল ইসরায়েলি সৈন্য এবং অস্ত্র বহনকারী লোকদের লক্ষ্যবস্তু করেছে বলেও দাবি করেছে গোষ্ঠীটি।

মুসলিমদের তৃতীয় পবিত্র ধর্মীয় স্থান আল-আকসা মসজিদের পবিত্রতা লঙ্ঘন এবং অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের অত্যাচারের জবাব দিতে গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে একটি অভিযান চালায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। 

হামাসের এই হামলায় নিহত হন কমপক্ষে ১২০০ ইসরায়েলি। নিহতদের প্রায় ৩০০ জন সেনাসদস্যও ছিলেন। এছাড়া সেনা কর্মকর্তা ও সৈনিকসহ আরও দুই শতাধিক মানুষকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস।

হামাসের হাতে আটক বিপুল এসব বন্দির মুক্তি দাবি করেছে ইসরায়েল। আর এ লক্ষ্যে গত ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় ব্যাপক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দেশটি।

এরপর থেকে ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা সাড়ে তিন মাস ধরে চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ২৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

এমন অবস্থায় গত অক্টোবরের সেই ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামের অভিযানের পটভূমি ও নৈতিক ভিত্তি ‘স্পষ্ট করতে’ রোববার হামাস ‘আওয়ার ন্যারেটিভ’ শিরোনামে ১৬-পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

সত্তর জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে ৫ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব হামাসের

বিস্ময়কর সেই হামলার পর প্রকাশিত প্রথম এই পাবলিক রিপোর্টে হামাস বলেছে, ‘ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সমস্ত ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করার জন্য সেই হামলা ছিল একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এবং একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া’।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ হামলার সময় হামাস যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে নির্যাতন, ধর্ষণ ও অঙ্গহানিসহ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনেছে। তবে হামাস দৃঢ়ভাবে যৌন সহিংসতা এবং অঙ্গচ্ছেদের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।

‘হয়তো কিছু ভুল হয়েছে’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাস ইসরায়েলি সামরিক স্থানগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করার এবং সৈন্যদের বন্দি করার পরিকল্পনা করেছিল। আর এটিকে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়ার জন্য ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে চাপ দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র এই গোষ্ঠীটি বলেছে, হামলা বা সংঘাতের সময় বেসামরিক লোকদের ক্ষতি না করার বিষয়ে হামাসের সশস্ত্র শাখা তথা কাসাম ব্রিগেডের যোদ্ধাদের ধর্মীয় এবং নৈতিক প্রতিশ্রুতি রয়েছে।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘যদি বেসামরিক লোকদের টার্গেট করার কোনও ঘটনা ঘটে থাকে; এটা ঘটনাক্রমে ঘটেছে এবং দখলদার বাহিনীর সাথে সংঘর্ষের সময় ঘটেছে।’

এতে আরও বলা হয়েছে, ইসরায়েলি নিরাপত্তা ও সামরিক ব্যবস্থার দ্রুত পতনের কারণে এবং গাজার নিকটবর্তী অঞ্চলে বিশৃঙ্খলার কারণে আক্রমণের সময় ‘সম্ভবত কিছু ত্রুটি ঘটেছে’। অনেক ইসরায়েলি তাদের বিভ্রান্তির কারণে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এবং পুলিশের হাতে নিহত হয়েছে।

তবে হামাসের সেই হামলার পর ১৭ বছর ধরে ইসরায়েলি অবরোধের অধীনে থাকা গাজায় ব্যাপক বোমাবর্ষণ করে ইসরায়েল জবাব দিয়েছে। যার ফলে ২৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মতে, নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা ও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো গাজায় ইসরায়েলের হামলায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনেছে।

এদিকে হামাসের প্রতিবেদনে যুদ্ধোত্তর গাজার ইস্যুটিও সামনে আনা হয়েছে। এর একদিন আগেই অবশ্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রত্বের বিরোধিতায় সরব হয়েছিলেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আমরা জোর দিয়ে জানাচ্ছি- ফিলিস্তিনি জনগণের তাদের নিজেদের ভবিষ্যত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এবং নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো নিজেদের মতো করে সাজানোর ক্ষমতা রয়েছে। বিশ্বের কোন পক্ষেরই তাদের (ফিলিস্তিনিদের) পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার নেই।’

ইসরায়েলের বসতি নির্মাণের প্রচারণা এবং অধিকৃত পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমে ফিলিস্তিনি ভূমির ইহুদিকরণ এবং ২০০০ সাল থেকে এই বছর পর্যন্ত হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকের হত্যার কথা উল্লেখ করে সেগুলোকেও এই প্রতিবেদনে হামলার কারণ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

এইচআর