বাংলাদেশি জাহাজ ডাকাতি

নাবিকসহ জাহাজ সোমালিয়া উপকূলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে জলদস্যুরা

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: মার্চ ১২, ২০২৪, ০৮:৫৬ পিএম
নাবিকসহ জাহাজ সোমালিয়া উপকূলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে জলদস্যুরা

ভারত মহাসাগরে জলদস্যুরা বাংলাদেশের পতাকাবাহী ‘এম ভি আবদুল্লাহ’ নামের জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সোমালিয়া উপকূলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। পণ্যবাহী জাহাজটির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। মঙ্গলবার (মার্চ ১২) দুপুর ১টার দিকে জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়ার খবর জানতে পারে বাংলাদেশের অন্যতম শিল্পগোষ্ঠীটির কর্তৃপক্ষ।

জিম্মি এক নাবিক জানিয়েছেন জাহাজটিকে সোমালিয়া উপকূলের দিকে নেয়া হচ্ছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সোমালিয়ান উপকূল থেকে জাহাজটি ৫০০ নটিক্যাল মাইল দূরে রয়েছে।  

জাহাজে থাকা ওই নাবিক আরও জানান, প্রায় শতাধিক সশস্ত্র জলদস্যু দ্রুতগতির ছোট ছোট বোটে করে প্রথমে জাহাজটিকে ঘিরে ফেলে। পরে তারা জাহাজে উঠে নিয়ন্ত্রণ নেয়। এ সময় নাবিক ও ক্রুদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে জলদস্যুরা কোনো নাবিকের ওপর হামলা চালায়নি বলে জানান ওই নাবিক।

জাহাজটিকে সোমালিয়া উপকূলে নেয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশি নাবিকদের একটি কেবিনে আটকে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে, ক্যাপ্টেন আব্দুর রশিদকে দিয়ে জাহাজটিকে সোমালিয়ার উপকূলের দিকে নেয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত জলদস্যুরা কোনো ধরনের মুক্তিপণ দাবি করেনি বলেও জানান জিম্মি ওই নাবিক।

এ বিষয়ে কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহেরুল করিম সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, জাহাজটি আফ্রিকার মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়ে। জাহাজের ২৩ জন নাবিক নিরাপদে আছেন।

ঘটনাটি জানার পর নাবিকদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে বলে জানান ওই শীর্ষ কর্মকর্তা। তবে যোগাযোগ না করেই কীভাবে  নাবিকদের অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন সে প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনি।

‘গোল্ডেন হক’ নামের জাহাজটি কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং করপোরেশনের বহরে যুক্ত হওয়ার পরে এর নাম হয় ‘এম ভি আবদুল্লাহ’। ২০১৬ সালে তৈরি ১৯০ মিটার লম্বা এই জাহাজটি গত বছর এসআর শিপিংয়ের বহরে যুক্ত হয়। এরপর সাধারণ পণ্য পরিবহন করে আসছিল জাহাজটি।

বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং ২০০৪ সালে তাদের প্রথম জাহাজ কেনে। ‘এমভি ফাতেমা জাহান’ ছিল তাদের প্রথম জাহাজ। দেশে এখন নিবন্ধিত সমুদ্রগামী জাহাজের সংখ্যা ৫২। এগুলোর মধ্যে ২৩টি কেএসআরএম গ্রুপের। আর এক দশকেই সরকারি ও বেসরকারি খাতের মধ্যে জাহাজ পরিচালনা ব্যবসায় নেতৃত্ব দিচ্ছে গ্রুপটি। কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের আরেকটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে কেএসআরএম।

এদিকে, ভারত মহাসাগরে কয়েক দশক ধরে বেশ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। এ কারণে এ জলপথ ব্যবহার করে পরিচালিত পণ্য পরিবহন ব্যবসা হুমকির মুখে পড়েছে। তবে জলদস্যুদের কাছে বিষয়টি যতটা না ছিনতাই, তার চেয়ে বড় ধরনের আয়ের উৎস হিসেবে বিষয়টিকে দেখছে তারা। বিভিন্ন সময় দস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পাওয়া নাবিকেরা এমনটাই জানিয়েছে।

এর আগে, ২০১১ সালের মার্চে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হয় বাংলাদেশি ২৬ নাবিকসহ বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি জাহান মনি। তিন মাস পর মুক্ত হয়ে জাহাজটি সোমালিয়া থেকে ওমানের সালালা বন্দরে যায়। একটি ছোট উড়োজাহাজে করে সোমালিয়ার জলদস্যুদের মুক্তিপণের টাকা পৌঁছে দেয়া হয়। মুক্তি পাওয়ার পর তা টেলিফোনে জানান জাহাজটির ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফরিদ।

আরএস