যুদ্ধবিরতি না মানলে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্টের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: মার্চ ২৬, ২০২৪, ১২:২৩ পিএম
যুদ্ধবিরতি না মানলে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্টের

ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা প্রায় ছয় মাস ধরে চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। বর্বর এই আগ্রাসনের জেরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে ক্ষোভ।

এই অবস্থায় গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে। আর এরপরই যুদ্ধবিরতি না মানলে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট।

মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা সংক্রান্ত যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব যদি ইসরায়েল মেনে চলতে ব্যর্থ হয় তাহলে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো। যুদ্ধবিরতির এই প্রস্তাবটি সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত হয়।

জাতিসংঘে ভোটের মাধ্যমে প্রস্তাব পাসের পর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো বলেন, ‘অবশেষে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে পাস হয়েছে। ইসরায়েল এই যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করলে আমি বিশ্বের দেশগুলোকে (ইসরায়েলের সঙ্গে) কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’

এর আগে সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ইসলামিক পবিত্র মাস রমজানে গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে একটি প্রস্তাব পাস করে। পবিত্র এই মাসটি মধ্যপ্রাচ্যে গত ১১ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে এবং আগামী ৯ এপ্রিল শেষ হতে পারে।

কাউন্সিলের ১০ জন নির্বাচিত সদস্যের উপস্থাপিত এই রেজোলিউশনের পক্ষে ১৪টি দেশ ভোট দিয়েছে। অন্যদিকে সেখানে একমাত্র দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ভোটদান থেকে বিরত ছিল। এছাড়া প্রস্তাবটির বিপক্ষে কোনো যুক্তি উপস্থাপন বা ভেটো ক্ষমতারও প্রয়োগ করেনি পরাশক্তি এই দেশটি।

আনাদোলু বলছে, জাতিসংঘের এই রেজোলিউশনে ‘পবিত্র রমজান মাসের জন্য সকল পক্ষকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়েছে। যা পরে একটি স্থায়ী টেকসই যুদ্ধবিরতির দিকে পরিচালিত হবে।’

এই প্রস্তাবে ‘সমস্ত বন্দির অবিলম্বে এবং নিঃশর্ত মুক্তির পাশাপাশি তাদের চিকিৎসা এবং অন্যান্য মানবিক চাহিদা পূরণের জন্য মানবিক সহায়তার প্রবেশ নিশ্চিত করার’ দাবিও করা হয়েছে।

বার্তাসংস্থাটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ভেটো না দেওয়ায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এবারই প্রথমবারের মতো যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাল। যার অর্থ যুক্তরাষ্ট্র তার আগের অবস্থানে পরিবর্তন এনেছে। যদিও হোয়াইট হাউস বলেছে, ভেটো না দেওয়া বা ভোটদান থেকে বিরত থাকার মানে এই নয় যে, যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে পরিবর্তন এসেছে।

তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বের অবস্থান থেকে সরে আসা বা প্রস্থান বলে অভিহিত করেছেন।

নেতানিয়াহুর কার্যালয়য় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রেজুলেশন পাসের অনুমতি দেওয়ার মার্কিন এই সিদ্ধান্ত ‘যুদ্ধের শুরু থেকে নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের ধারাবাহিক অবস্থান থেকে স্পষ্ট পশ্চাদপসরণ।’

এদিকে এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সরকার বলেছে, এই সপ্তাহে ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি প্রতিনিধিদলের সফর এবং মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে একটি বৈঠক বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরায়েল। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বন্দি মুক্তির প্রচেষ্টাকে দুর্বল করার অভিযোগও করেছে ইসরায়েল।

গত বছরের ৭ অক্টোবর আগ্রাসন শুরু করার পর থেকে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় ইতোমধ্যেই ৩২ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন। ইসরায়েলের বর্বর এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো বরাবরই জোরালো অবস্থান নিয়েছেন এবং বিভিন্ন সময়ে ইসরায়েলের কঠোর সমালোচনাও করেছেন।

প্রেসিডেন্ট পেট্রো বারবারই নেতানিয়াহুর সরকারকে গণহত্যার জন্য অভিযুক্ত করেছেন এবং নেতানিয়াহু সরকারকে নাৎসি শাসনের সাথে তুলনা করেছেন। এমনকি গাজায় আগ্রাসনের প্রতিবাদে ইসরায়েলের কাছ থেকে অস্ত্র ক্রয় স্থগিত করারও সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

আরএস