যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলে হারিকেন হেলেনের আঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভয়াবহ এই ঘূর্ণিঝড়ে এখন পর্যন্ত ৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং লক্ষাধিক মানুষ বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। ঝড়ের পরবর্তী বন্যা ও ভূমিধসের কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে উদ্ধার তৎপরতা। এর ফলে মানবেতর অবস্থায় দিন পার করছেন হাজার হাজার মানুষ।
গত বৃহস্পতিবার রাতে ফ্লোরিডার বিগ বেন্ড এলাকায় ঘণ্টায় ২২৫ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানে ৪ ক্যাটাগরির এই ঘূর্ণিঝড়। এরপর সেটি জর্জিয়া, ক্যারোলিনা এবং টেনেসির দিকে অগ্রসর হয়। এর প্রভাবে সেসব অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিতে নদী-খাল প্লাবিত হয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়। পশ্চিমাঞ্চলীয় উত্তর ক্যারোলিনায় রাস্তা ও আন্তঃরাজ্য মহাসড়ক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে অঞ্চলটি।
ফ্লোরিডার স্টিনহ্যাচি শহরের বাসিন্দা জানালিয়া ইংল্যান্ড বলেন, আমি এত মানুষকে গৃহহীন হতে কখনো দেখিনি।
জানালিয়া তার বাণিজ্যিক মাছের বাজারকে ত্রাণ সংগ্রহের কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করেছেন, যেখানে স্থানীয় বাসিন্দারা সাহায্যের জন্য ভিড় করছেন।
জর্জিয়ার গভর্নর ব্রায়ান কেম্প বলেছেন, ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি দেখে মনে হচ্ছে এখানে ‘বোমা বিস্ফোরিত’ হয়েছে।
ক্যারোলিনার অ্যাশভিল শহরের একটি অংশ প্লাবিত হওয়ায় হেলিকপ্টারে করে বহু মানুষকে উদ্ধার করা হয়ে। উদ্ধারকাজ এখনো চলছে, বিশেষ করে নর্থ ক্যারোলিনার বানকম্ব কাউন্টিতে।
এই দুর্যোগে ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা এবং ভার্জিনিয়ায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ফ্লোরিডার পিনেলাস কাউন্টিতে নয়জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এসব লোক বাধ্যতামূলকভাবে ঘরত্যাগের নির্দেশ পাওয়া সত্ত্বেও বাড়িতে ছিলেন।
মুডি’স অ্যানালিটিক্সের অনুমান, এই ঘূর্ণিঝড়ে সম্পত্তির ক্ষতির পরিমাণ ১৫০ থেকে ২৬০ কোটি মার্কিন ডলার হতে পারে।
আকুওয়েদারের হিসাবমতে, হারিকেন হেলেনের আঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের মোট আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৯৫০ থেকে ১১শ কোটি ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হেলেনের ধ্বংসযজ্ঞকে ‘অতিমাত্রায় বিধ্বংসী’ বলে অভিহিত করেছেন এবং নর্থ ক্যারোলিনার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন।
উদ্বেগজনক পরিস্থিতি ও পরিবেশগত প্রভাব
বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্রমবর্ধমান ঝুঁকিপূর্ণ ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে অন্যতম হারিকেন হেলেন। উষ্ণ সমুদ্রের কারণে এ ধরনের ঝড় দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করে ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হচ্ছে, যার প্রভাব এখন আরও ব্যাপকভাবে অনুভূত হচ্ছে।
সূত্র: এপি