মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার ওপর শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছেন। যদিও তিনি ইউক্রেনের চেয়ে আক্রমণকারী দেশ রাশিয়াকে বেশি পছন্দ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
গতকাল শুক্রবার (৭ মার্চ) নিজের ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের নিন্দা জানানোর বিষয়টি এড়িয়ে যান। যদিও জাতিসংঘ সনদের অধীনে এই আগ্রাসনকে অযৌক্তিক ও অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে পশ্চিমা বিশ্ব। তবে ট্রাম্প রাশিয়ার সর্বশেষ বোমাবর্ষণের বিষয়টি উল্লেখ করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সঙ্গে সামরিক গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি সাময়িকভাবে বন্ধ করার ঘোষণা দেওয়ার কয়েকদিন পরেই এ হামলা চালানো হয়। খবর আলজাজিরার।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওই পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, “যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়া এই মুহূর্তে ইউক্রেনকে পুরোপুরি ‘আক্রমণ’ করছে, এই সত্যের ভিত্তিতে আমি যুদ্ধবিরতি না হওয়া পর্যন্ত রাশিয়ার ওপর বৃহৎ আকারের ব্যাংকিং নিষেধাজ্ঞা, নিষেধাজ্ঞা ও শুল্ক আরোপের কথা দৃঢ়ভাবে বিবেচনা করছি। শান্তির বিষয়ে চূড়ান্ত মীমাংসার চুক্তিতে পৌঁছানো গেছে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের উদ্দেশে বলছি, এখনই আলোচনার টেবিলে বসুন, অনেক দেরি হওয়ার আগেই। ধন্যবাদ!”
ট্রাম্প বারবার রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী’ এবং ‘মধ্যস্থতাকারী’ হিসেবে কাজ করার ক্ষেত্রে তার লক্ষ্যের কথা বলেছেন। তবে ট্রাম্প ক্রমাগত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সমালোচনা করেছেন, একইসঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি অনুরাগ প্রকাশ করছেন।
সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প ইউক্রেনের চেয়ে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনাকে ‘সহজ’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে, ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনা করা আমার কাছে বেশি কঠিন মনে হচ্ছে এবং তাদের কাছে কোনো কার্ড নেই। কিন্তু রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করা হয়তো আরও সহজ হবে।’
এর আগে শুক্রবার ভোরে রাশিয়া ইউক্রেনের জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেন জানিয়েছে, রাশিয়ার ড্রোনগুলোকে তারা আটকাতে সক্ষম হয়েছেন। তবে তারা আঘাত করার আগে ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে ধ্বংস করতে কমই সফল হয়েছেন।
এই হামলার পরই ট্রাম্প নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিলেন। শুক্রবার ওভাল অফিস থেকে ট্রাম্প বলেন, ‘ওরা (রাশিয়া) এখনও বোমাবর্ষণ করে ওদের (ইউক্রেন) ওপর হামলা চালাচ্ছে। ওটা করতে পারো। তুমি ওটা করতে পারো না। আমরা তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করছি এবং ইউক্রেনকে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে এবং কাজটি সম্পন্ন করতে হবে।’
সাংবাদিকরা ট্রাম্পের কাছে জানতে চান, ইউক্রেনের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি বন্ধের সিদ্ধান্ত পুতিনকে সুযোগ করে দিয়েছে কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে পুতিনের প্রসঙ্গ টেনে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি, তিনি এটি বন্ধ করে মীমাংসা করতে চান। আমি মনে করি, তিনি তাদের (ইউক্রেন) ওপর আগের চেয়েও বেশি আঘাত করছেন।’
‘আর আমার মনে হয়, কেউই সম্ভবত সেই অবস্থানে থেকে এটা করবে। তিনি (পুতিন) এটা শেষ করতে চান। আর আমার মনে হয়, ইউক্রেনও এটা শেষ করতে চায়, কিন্তু আমি (তেমন কিছু) দেখতে পাচ্ছি না—এটা পাগলামি। তারা প্রচণ্ড শাস্তি ভোগ করছে। আমি ঠিক বুঝতে পারছি না!’, যোগ করেন ট্রাম্প।
এই ধরনের হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেনকে আরও সহায়তা দেওয়া উচিত কিনা জানতে চাইলে ট্রাম্প আবারও ইউক্রেনকে শান্তি আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানানোর অভিযোগ করেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমাকে জানতে হবে যে, তারা মীমাংসা করতে চায়। আমি জানি না যে, তারা মীমাংসা করতে চায়। যদি তারা মীমাংসা করতে না চায়, তাহলে আমরা এটি থেকে বেরিয়ে যাব।’
বিআরইউ