ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের প্রয়াত ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের (৮৮) শেষকৃত্য শনিবার অনুষ্ঠিত হবে। স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার সামনের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে হবে এই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া। তাকে শেষবার সম্মান জানাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে শুরু করে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কিসহ বিশ্বনেতারা ভ্যাটিকানে উপস্থিত থাকবেন।
রোমান ক্যাথলিক চার্চের প্রথম লাতিন আমেরিকান নেতা পোপ ফ্রান্সিস গত সোমবার মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণে মারা যান। এর আগে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পাঁচ সপ্তাহ হাসপাতালে ছিলেন তিনি।
চার্চের সর্বোচ্চ ধর্মীয় ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে এ অনুষ্ঠানের নেতৃত্ব দেবেন ক্যাথলিক চার্চের কার্ডিনাল কলেজের ডিন জিওভান্নি বাত্তিস্তা রে। শেষকৃত্যের শেষে তিনি ‘চূড়ান্ত সমর্পণ প্রার্থনা’ পাঠ করবেন, যার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে পোপকে ঈশ্বরের হাতে সমর্পণ করা হবে। এর পর পোপের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে রোমের সান্তা মারিয়া মেজিওর ব্যাসিলিকায়, যেখানে তাকে সমাহিত করা হবে।
ক্যাথলিক রীতি অনুযায়ী, কোনো পোপের মৃত্যু হলে সাধারণত চার থেকে ছয় দিনের মধ্যে সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। তবে পোপ ফ্রান্সিস তার জীবদ্দশায় একাধিকবার বলে গেছেন, তিনি চান তার শেষকৃত্য যেন আড়ম্বরপূর্ণ না হয়। তাই তিনি হবেন গত এক শতাব্দীর মধ্যে প্রথম সর্বোচ্চ ক্যাথলিক ধর্মগুরু, যিনি ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার নিচে শায়িত না হয়ে রোমের সান্তা মারিয়া মেজিওর ব্যাসিলিকায় সমাধিস্থ হবেন।
সমাধিস্থ হওয়ার ক্ষেত্রেও জাঁকজমক এড়িয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস। একটি সাধারণ কাঠের কফিনে সমাহিত হতে চেয়েছেন তিনি। যেখানে অতীতের পোপরা সাইপ্রাস, সিসা এবং ওক কাঠের তিন স্তরের কফিনে সমাধিস্থ হতেন।
পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যে অংশ নিতে রোমে পৌঁছেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতা ও রাজপরিবারের সদস্যরা। ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারের এই অনুষ্ঠানে ১৩০টি দেশের প্রতিনিধিত্বকারী ৫০ জন রাষ্ট্রপ্রধান ও ১০ জন রাজা-রানীর উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছে। এদের মধ্যে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভা, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, স্পেন ও বেলজিয়ামের রাজা-রানী, ব্রিটেনের প্রিন্স উইলিয়ামসহ আরও অনেকে।
এদিকে পরবর্তী পোপ নির্বাচনের জন্য গত মঙ্গলবার ধর্মগুরুদের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শতাব্দী প্রাচীন এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তিন সপ্তাহের মধ্যে পরবর্তী পোপ নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ২০১৩ সালে তৎকালীন পোপ ষোড়শ বেনেডিক্টের পদত্যাগের পর দায়িত্ব নেওয়া পোপ ফ্রান্সিসের প্রতি পুরো বিশ্ব থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। তার মাতৃভূমি আর্জেন্টিনায় সাত দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে।
জানা গেছে, কলেজ অব কার্ডিনালের ডিন কার্ডিনাল জিওভান্নি ব্যাতিস্তা মাস বা গণপ্রার্থনার পৌরোহিত্য করবেন। সেই প্রার্থনায় হাজির থাকবেন গোটা বিশ্বের বৃদ্ধ সন্ন্যাসী, কার্ডিনাল, আর্চবিশপ, বিশপ ও ফাদাররা। তার পরই শুরু হবে প্রয়াত পোপের আত্মার শান্তি কামনায় ৯ দিনের শোক পালন।
বিআরইউ