আদালত যেসব কথা বলেনি, এমন কথা গণমাধ্যমে প্রকাশ না করার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হাইকোর্ট। মিস কোট হলে সংবাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয় বলেও মন্তব্য করেন আদালত।
দুদকের করা একটি মামলার শুনানীকালে বুধবার (৩০ নভেম্বর) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
এসময় আদালত বলেন, আমরা যেটা বলিনা। সেটা মিডিয়ায় প্রচার করা হয়। এটা কেন হয়। আমরা যেটা বলি সেটার কাছাকাছিটা অন্তত প্রচার করা উচিত। আমাদের কোট করে এমন কথা প্রচার করা হয়, যেটা আমরা বলিনি।
জবাবে দুদক আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, এটা এক প্রকার হলুদ সাংবাদিকতা। কিছু কিছু সাংবাদিক সঠিক লিখে। তারা বুঝে লিখে। আর অনেকে না বুঝেই লিখে দেন। এটা এক প্রকার হলুদ সাংবাদিকতা করে। আদালত বলেন, একটা কিন্তু তারা কাটতি বাড়ানোর জন্য লিখেন আরেকটা। এটা কোন সাংবাদিকতার মধ্যে পড়ে না।
এসময় আদালত বলেন, এখন থেকে আমাদের কথাগুলো রেকর্ড করা হবে। আমারা আদালতে যেটা বলবো সেটা সংরক্ষিত থাকবে। এতে যেটা বলি তার বাহিরে প্রকাশ করা সুযোগ থাকবে না।
আদালতে মোহাম্মদ আলীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম আবুল হোসেন। তার সঙ্গে আইনজীবী ছিলেন জোবায়দুর রহমান। দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক তাকে সহযোগীতা করেন সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল আন্না খানম কলি।
এর আগে, গত ২৮ নভেম্বর আলোচিত বেসিক ব্যাংকের অর্থ পাচারের মামলার শুনানিতে দেশের সব ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। আমরা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছি। আদালতের এমন মন্তব্যকে কোট করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার করা হয়।
এদিন ব্যাংকে অর্থ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নে তোলেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, আমরা যেন নাটক দেখছি। হাততালি ছাড়া আর কী আছে, না হয় বসে থাকতে হবে।
বেসিক ব্যাংকের ২ হাজার ৭৭ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় আলামত চেয়ে মালয়েশিয়ায় অনুরোধ পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন, এমনটি জানিয়ে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করে দুদক। এ ঘটনায় করা ৫৬ মামলার মধ্যে ১২ মামলার আসামি, ব্যাংকটির সাবেক কর্মকর্তা মোহম্মদ আলীর জামিন শুনানিতে ৮ নভেম্বর হালনাগাদ তথ্য চেয়েছিল হাইকোর্ট। সে অনুসারে এই প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়।
আত্মসাৎ করা অর্থের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, বেসিক ব্যাংক লিমিডেটের বিভিন্ন শাখা থেকে ২ হাজার ৭৭ কোটি ৩৪ লাখ ২ হাজার ৯৯১ টাকা, যা সুদসহ ২ হাজার ৫৯০ কোটি ৪৯ লাখ ৯১ হাজার ৪৫৩ টাকা আত্মসাতের দায়ে দুর্নীতি দমন কমিশন প্রাথমিক অনুসন্ধান করে মোট ৫৬টি মামলা করেছে।
এতে বলা হয়, মামলার তদন্ত দীর্ঘায়িত হওয়ার অন্যতম কারণ হলো আত্মসাৎ করা অর্থ সম্পূর্ণরূপে নগদে উত্তোলনের মাধ্যমে টাকার অবস্থান গোপন করা হয়েছে। মামলায় গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের শনাক্ত করা ও তাদের জবানবন্দি গ্রহণ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। সব সাক্ষীর কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
এ ছাড়া প্রকৃত আসামিদের শনাক্ত করার প্রক্রিয়াও বেশ জটিল। মামলার প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহের জন্য মালয়েশিয়ায় এমএলএআর করা হয়েছে। সে-সংক্রান্ত প্রতিবেদন ও আলামত এখনও পাওয়া যায়নি। আত্মসাৎ করা অর্থের মধ্যে ১১৫ দশমিক ৭৮ কোটি টাকা উদ্ধার বা ব্যাংকে জমা করা হয়েছে বলেও জানানো হয় প্রতিবেদনে।
টিএইচ