সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার প্রকৃত অপরাধীরা এখনো শনাক্ত না হওয়ায় তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিতে দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
সোমবার (৭ আগস্ট) দুপুরে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
র্যাব কমান্ডার বলেন, ‘সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত আমরা অনেক আন্তরিকতার সঙ্গে গুরুত্ব দিয়ে করছি। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানিতে ডিএনএ স্যাম্পল পাঠিয়েছি। ওখান থেকে আসা প্রতিবেদনে দুজন সাসপেক্ট (সন্দেহভাজন) এর নমুনা পাওয়া গেছে। এই দুজন সাসপেক্টকে আমরা এখনো সনাক্ত করতে পারিনি। তাদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।’
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে আমরা সাংবাদিক দম্পতি সাগর রুনি হত্যা মামলার তদন্ত করছি। আমরা যে তদন্ত প্রতিবেদন দেব এখানে যেন কোনভাবেই নির্দোষ ব্যক্তি ভিকটিমাইজ (ভোগান্তির শিকার) না হয়। এ বিষয়টি আমলে নিয়ে আমরা তদন্ত করে যাচ্ছি। এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও গুরুত্ব দিয়ে করা হচ্ছে। খুব কম হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে এমনটি হয়—যে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিতে আলামত ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। এই মামলার ক্ষেত্রে আমরা আলামতের ডিএনএ পরীক্ষা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানিতে পাঠিয়েছি। এই হত্যা মামলাটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলেই যুক্তরাষ্ট্রে আলামত পাঠিয়েছি। যাদেরকে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করা হয়েছিল ও প্রাথমিকভাবে যাদের র্যাব ও পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল তাদের আলামত কিন্তু পাঠানো হয়েছে।’
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ওই কোম্পানি থেকে পাঠানো প্রতিবেদন আমরা যাচাই-বাছাই করে দুজন সাসপেক্ট (সন্দেহভাজন) পেয়েছি যাদের এখনো শনাক্ত করা যায়নি। আমাদের ধারণা ওই দুজন সম্ভাব্য অপরাধী। এই বিষয়ে আমাদের তদন্তকারী কর্মকর্তারা কাজ করে যাচ্ছেন। এই দুজনকে সনাক্ত করার পর আমরা বলতে পারব যে আর কতদিন লাগবে।’
১০০ বার তদন্ত প্রতিবেদন পিছিয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিক কিনা প্রশ্ন করা হলে খন্দকার মঈন বলেন, ‘এখানে স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক এর বিষয় না। আমাদের মূল উদ্দেশ্য তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করা। কেউ যেন এখানে ভিক্টিমাইজ না হন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় কোনও ব্যক্তি একদম ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না তারপরও আদালতে প্রতিবেদনে তার নাম চলে যায়। আবার অনেকে আছেন যিনি ঘটনার সম্পর্কে কিছুই জানেন না কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে জেলে আছেন। আমরা এই ধরনের বিতর্কে জড়াতে চাচ্ছি না। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্ত শেষ করতে বেশি সময় লাগে।’
সন্দেহভাজন দুজন সম্ভাব্য অপরাধীকে সনাক্ত করতে র্যাবের জন্য অনেক কঠিন হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই ঘটনার পরবর্তীতে আলামত সংগ্রহ করা অনেক কঠিন কাজ ছিল। এই সাংবাদিক দম্পতি অনেক জনপ্রিয় ছিলেন, ঘটনার পর সেখানে অনেক মানুষ গিয়েছিলেন। এখানে আলামতের একটি বিষয় ছিল।’
এখন পর্যন্ত র্যাব ও পুলিশ যতজনকে গ্রেপ্তার করেছে তাদের মধ্যে ওই দুজন সন্দেহভাজন ছিল কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহ হয় আমরা এমন ২৫ জনের আলামত ডিএনএর পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছিলাম। পরীক্ষার প্রতি প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই করে আমরা দুজন সন্দেহভাজন পেয়েছি যাদের সনাক্ত করা যায়নি। তাদের সনাক্ত করা গেলে এ বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যাবে।’
এখন পর্যন্ত যে ২৫ জন গ্রেপ্তার হয়েছে তাদের কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি আরও বলেন, ‘এ পর্যন্ত যে তদন্ত হয়েছে আমাদের তদন্তকারী কর্মকর্তারা সুনিশ্চিত না তাদের সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা।’
এর আগে সোমবার (৭ আগস্ট) মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু এদিন প্রতিবেদন দাখিল করেনি মামলার তদন্ত সংস্থা র্যাব। এজন্য আগামী ১১ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন আদালত। নতুন এ তারিখ ঠিক করেন ঢাকার মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রশিদুল আলমের আদালত।
আদালতের শেরে বাংলা থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা জালাল উদ্দীন বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন।
আলোচিত এ হত্যা মামলায় রুনির বন্ধু তানভীর রহমানসহ মোট আসামি আটজন। অন্য আসামিরা হলেন— বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির, রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ, পলাশ রুদ্র পাল ও আবু সাঈদ। আসামিদের সবাইকে একাধিকবার রিমান্ডে নেওয়া হলেও তাদের কেউই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি নিজেদের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়।
এরপর রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত রুনির ভাই নওশের আলম রোমান। প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন ওই থানার এক এসআই। চার দিন পর চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়।
দুই মাসেরও বেশি সময় তদন্ত করে রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয় ডিবি। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে একই বছরের ১৮ এপ্রিল হত্যা মামলাটির তদন্তভার র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেই থেকে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি সংস্থাটি।
আরএস