বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার রায় প্রসঙ্গে আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করার ঘটনায় দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমকে এক মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে তাকে লাখ টাকা জরিমানা করেছেন সর্বোচ্চ আদালত।
আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তাকে দিনাজপুরের আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে। অন্যাথায় তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে দিনাজপুর পৌর মেয়রের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
এর আগে, গত ২৪ আগস্ট বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার রায় প্রসঙ্গে আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করার ঘটনায় আপিল বিভাগে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। ওই ঘটনায় তাকে ব্যক্তিগত হাজিরা ও অভিযোগ থেকে অব্যাহতি না দিয়ে শুনানির জন্য আজকের দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ।
গত ১৭ আগস্ট খালেদা জিয়ার রায় প্রসঙ্গে আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করায় দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে তলব করেন আপিল বিভাগ।
একইসঙ্গে আপিল বিভাগে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় তার বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার দায়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, এই মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেন সর্ব্বোচ আদালত। এছাড়া বিচারপতিকে নিয়ে মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে অপসারণ করতে বলা হয়।
গত ৩ আগস্ট বিএনপির ঘোষিত কর্মসূচি পালনকালে বক্তব্য রাখেন পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। বক্তব্যে খালেদা জিয়ার মামলায় হাইকোর্টে রায়দানকারী বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন তিনি। শুধু বিরূপ মন্তব্য করেই থেমে থাকেননি। বিচারের রায় নিয়েও অবমাননাকর মন্তব্য করেন জাহাঙ্গীর আলম।
মেয়রের এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়। বিষয়টি নজরে আসায় তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সমিতির সদস্য শফিক রায়হান শাওন ও মাহফুজুর রহমান রোমানসহ চার আইনজীবী। আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক।
আবেদনটি শুনানির জন্য উত্থাপন করেন আইনজী শাহ মঞ্জুরুল হক। তিনি বলেন, এভাবে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের একজন বিচারপতি ও মামলার রায় নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য ধৃষ্টতা ছাড়া কিছুই নয়। এটা আপনাদের বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেন, ইনায়েতুর রহিম আপিল বিভাগের বিচারক। একজন বিচারপতি সম্পর্কে মেয়র যে ভাষায় গালিগালাজ করেছেন, তাতে কোর্টের ইমেজ ক্ষুণ্ণ হয়েছে।
তিনি বলেন, রায় হয়েছে এবং তাতে আপিলের সুযোগ রয়েছে। তাই বলে এভাবে বিরূপ মন্তব্য করা যায় না। যদি এ ধরনের ধৃষ্টতার বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে আদালতের প্রতি জনমনে আস্থার ঘাটতি দেখা দেবে।
মেয়রের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, পাবলিক মিটিংয়ে তিনি এই বক্তব্য রেখেছেন। তিনি তার বক্তব্য সম্পর্কে জ্ঞাত। তিনি এটা কনটেস্ট করতে চান না। এমনকি বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে, শুনানি শেষে মেয়রকে তলব করার নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে অপসারণ করতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন আদালত।
এইচআর