নাশকতার অভিযোগে বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা মামলায় আলোচিত দুই শিশুর মা হাফসা আক্তারের জামিন মেলেনি উচ্চ আদালতের অবকাশকালীন বেঞ্চে।
আগামী ২২ এপ্রিল ফুলকোর্টে এই মামলার জামিন শুনানি হবে। ফলে মা কে ‘ছাড়াই’ চার বয়সী শিশু নুরজাহান নূরী ও ৭ বছরের শিশু আকলিমার ঈদ কাটবে এবার।
আজ ৩ এপ্রিল বুধবার হাইকোর্টের দেয়া জামিন স্থগিতাদেশ তুলে নিতে আপিল বিভাগের অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি মো: আশফাকুল ইসলামের আদালত শিশুর মা হাফসা আক্তারের জামিন আবেদনে সাড়া দেননি। জামিন স্থগিতাদেশ তুলে নিতে তার আবেদনের ওপর আগামী ২২ এপ্রিল আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন।
উচ্চ আদালতে জামিন নামঞ্জুর প্রসঙ্গে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল
বলেন, "রাষ্ট্র এখন সাধারণ নিপীড়নের পাশাপাশি নারী ও শিশু নিপিড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই দুই শিশু নূরী ও আকলিমার মা হাফসা আক্তার ৩০ বা ৩২ বছরের একজন নারী। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। তার শিশু নূরী কে নিপীড়ন করছে এই রাষ্ট্র। হাইকোর্ট হাফসাকে জামিন দিয়েছিল। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে জামিন স্থগিত করা হয়েছ। জামিন স্থগিতাদেশ তুলে নেয়ার আবেদন রাষ্ট্রপক্ষে বিরোধীতার কারণে আবার পিছিয়েছে। আমাদের সিনিয়র কাউন্সেল আদালতে বলেছেন, এই নারীটাকে চার মাস ধরে আটক রাখা হয়েছে। অথচ তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। তাকে আটক রেখে রাষ্ট্রের কী লাভ।
শুনানিতে সিনিয়র আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ঈদের আগে দুই শিশুর মা হাফসাকে জামিন দেওয়ার আবেদন জানান। তিনি বলেন, আরো এক মাস তাকে জেলে রেখে রাষ্ট্রের কী লাভ হবে। তখন চেম্বার আদালত বলেন, গত ১০ মার্চ আমরা যে আদেশ দিয়েছিলাম। তা দেখে শুনে দেওয়া হয়। আগামী ২২ এপ্রিল আপিল বিভাগে শুনানির তারিখ দিয়ে দিই। এ সময় আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী হাফসার দুই শিশুকেও জেলে দেওয়ার কথা বলেন।
এরপর আদালত বলেন , আগে ৮ সপ্তাহ স্থগিতাদেশ ছিল। ২২ এপ্রিল আপিল বিভাগে শুনানির জন্য নির্ধারণ করে দিলাম।আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানিতে রয়েছেন সিনিয়র আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। সাথে ছিল আইনজীবী মো: মাকসুদ উল্লাহ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনির।
এর আগে গত ১০ মার্চ হাফসা আক্তারকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশ স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত।
গত ৬ মার্চ বিচারপতি মো: রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ হাফসার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।
ওইদিন আদালতের তার দুই শিশু যথাক্রমে চার বছর বয়সী নূরজাহান নূরী ও তার সাত বছর বয়সী বড় বোন আকলিমা উপস্থিত ছিল। এর আগে গত ৪ মার্চ মায়ের জামিন আবেদনের শুনানি থাকায় দাদা এবং দাদির হাত ধরে হাইকোর্টে আসে চার বছর বয়সী নূরজাহান নূরী।
ওইদিন শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগসংক্রান্ত ফুটেজ রাষ্ট্রপক্ষকে আদালতে দাখিল করতে বলেছেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে আদালতে উপস্থিত হতে বলতে বলা হয়েছিল।
এ মামলায় গ্রেফতারের পর গত বছরের ২৭ নভেম্বর থেকে কারাগারে আছেন হাফসা। এ মামলায় ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়। এরপর জামিন পেতে হাইকোর্টে আবেদন করেন।
গত ২৯ নভেম্বর রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একটি মানববন্ধন হয়েছিল। সেদিন নূরজাহান ও আকলিমার মতো মানববন্ধনে এসেছিল আরো কিছু শিশু। মানববন্ধনের ব্যানারে আয়োজক হিসেবে লেখা ছিল, ‘রাজবন্দীদের স্বজন’।
দুই শিশুর বাবা আবদুল হামিদ ভুঁইয়া বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত। দুই শিশুর দাদা আবদুল হাই ভূঁইয়া ২৯ নভেম্বরের মানববন্ধনে অভিযোগ করে বলেছিলেন, তার বড় ছেলে হামিদকে পুলিশ খুঁজছে। তাকে না পেয়ে ছেলের স্ত্রী হাফসাকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। তাকে কোতোয়ালি থানার একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তিন দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। অথচ হাফসা রাজনীতির সাথে জড়িত নন।
বিআরইউ