সরকার নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদন ও সরবরাহ কেন বন্ধ হবে না জানতে চেয়ে ছয় সপ্তাহের রুল জারি করেছেন বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মাসুদ হোসেন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
রোববারের ওই আদেশে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তর মহাপরিচালক, ঢাকা জেলা প্রশাসক, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ডিএমপি কমিশনার, র্যাবের মহাপরিচালক, র্যাব-২ ও ১০ এর অধিনায়ক, পুলিশের লালবাগের বিভাগের ডিসি, চকবাজার থানার ওসি, লালবাগ থানার ওসি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সরকার নিষিদ্ধ পলিথিন সরবরাহকারি মধুপুর ও রহমানিয়া ট্রান্সপোর্টের মালিক আমিনুল হক মুরাদ ও তার ছোট ভাই মামুনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আব্দুল্লাহ আল মাসুদ ও আমিনুর রহমানের পক্ষে আদালতে রিট আবেদনের শুনানি করে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রিয়াদ উদ্দিন।
তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরেই রাজধানীর চকবাজার ও লালবাগ থানাধীন ইমামগঞ্জ ও ইসলামবাগস্থ এলাকায় কারখানা স্থাপনপূর্বক নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদন অতঃপর মধুপুর এবং রহমানিয়া ট্রান্সপোর্টসহ বেনামি ট্রান্সপোর্টের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে সরবারহকারী হিসেবে বহুল পরিচিত আমিনুল হক মুরাদ ও তার ভাই মামুনসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ এবং স্থাপিত কারখানা ও সরবারহকারী প্রতিষ্ঠান ও ট্রান্সপোর্ট প্রতিষ্ঠানকে আজীবন নিষিদ্ধের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও বেসরকারি টেলিভিশনের প্রতিবেদনের মাধ্যমে আদিষ্ট হইয়া জনস্বার্থে রিটটি করেন তিনি। যাহার নং- ৪৯৬৬/২০২৪। রিটকারীর পক্ষে শুনারী করেন সুপ্রিমকোর্টের ।
তিনি আরও বলেন, পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যাগ নানাভাবে পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। পলিথিন ব্যাগ দেশের পরিবেশ বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ বিধায় সরকার বিগত ২০০২ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশোধন) আইন, ২০০২ আইন প্রণয়নপূর্বক ৬ (ক) ধারার বিধান মোতাবেক সকল ধরনের পলিথিন এবং প্লাস্টিকের ব্যাগ নিষিদ্ধ করে। সরকারের এই নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী জনৈক আমিনুল হক মুরাদ ও তার ভাই মামুন তাদের সহযোগীদের মাধ্যমে লালবাগ থানার ইসলামবাগস্থ এলাকায় নামে বেনামে ৩০০ এর অধিক নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদন কারখানা স্থাপন করেছেন। এমনকি কারখানাগুলো প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরনের ৫০০-৭০০ টন নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদন করে রাত নয়টা থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত রাস্তার লাইট নিভিয়ে বিসমিল্লাহ টাওয়ার ও নুরানী টাওয়ার, ১৪৬-১৪৮ মিটফোর্ড রোড, ইমামগঞ্জ, ঢাকার সামনের পথ আটকিয়ে মধুপুর এবং রহমানিয়া ট্রান্সপোর্টসহ বেনামি ট্রান্সপোর্টের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে সরবরাহ করে আসছেন। এই নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলেই স্থানীয় সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে তাদের হাতÑপা ভেঙে দেয়া হচ্ছে।
তাদের এমন নির্যাতনের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে আইজিপিস কমপ্লেইন্ট সেলে অভিযোগ করলে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। পাশাপাশি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য এলাকাবাসী বিগত ০৬/০২/২০২৪ ইং তারিখে মানববন্ধন করেন। যা দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ পায়। এমতাবস্থায় এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও নিষিদ্ধ পলিথিন বন্ধের লক্ষ্যে এবং বাংলাদেশের পরিবেশ ঝুঁকিমুক্তির জন্য আমিনুল হক মুরাদ ও তার ভাই মামুনসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণসহ স্থাপিত কারখানা ও সরবারহকারী প্রতিষ্ঠান ও ট্রান্সপোর্ট আজীবন নিষিদ্ধের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও নিষিদ্ধ পলিথিন বন্ধের লক্ষ্যে এবং বাংলাদেশের পরিবেশ মুক্তির জন্য আমিনুল হক মুরাদ ও তার ভাই মামুনসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণসহ স্থাপিত কারখানা ও সরবারহকারী প্রতিষ্ঠান ও ট্রান্সপোর্ট আজীবন নিষিদ্ধের জন্য রিটের মাধ্যমে হাইকোর্টের নজরে আনলে বিচারক রোববার ১৪ জনের বিরুদ্ধে রুল জারি করেন। আদেশে আরও বলা হয়, মামলাটি বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির দায়ের করা রিট নং- ১৪৯৪১/২০১৯ এর সাথে একত্রে শুনানি হবে।