চাঁদপুরের পারভীন হত্যা মামলায় সিরিয়াল কিলার রসু খাঁকে বিচারিক (নিম্ন) আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে একই মামলায় অপর দুই আসামি রসু খাঁর ভাগনে জহিরুল ইসলাম (৩৫) ও তার সহযোগী মো. ইউনুছকে (৩৮) মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
চাঁদপুরের পারভীন হত্যা মামলায় সিরিয়াল কিলার রসু খাঁসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (৯ জুলাই) হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ মো. জিয়াউল করিম ও বিচারপতি কে এম ইমরুল কায়েসের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। গণমাধ্যমকে রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মনিরুল ইসলাম।
মনিরুল ইসলাম বলেন, গত ৪ জুলাই রসু খাঁসহ তিনজনের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষ করে রায় ঘোষণার জন্য আজকে দিন ধার্য করেন আদালত। তারই ধারাবাহিকতায় এ রায় ঘোষণা করা হয়।
চাঁদপুর সদর উপজেলার মদনা গ্রামের ছিঁচকে চোর রসু খাঁ। মসজিদের ফ্যান চুরির ঘটনায় কমিউনিটি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে একে একে বেরিয়ে আসে লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের তথ্য। এ সময় নিজের মুখে স্বীকার করেন ১১ নারীকে ধর্ষণ ও হত্যার কথা। ভালোবাসায় ব্যর্থ হয়ে একসময় সিরিয়াল কিলারে পরিণত হন রসু খাঁ। টার্গেট ছিল ১০১টি হত্যাকাণ্ড ঘটানোর। আটকের আড়াই মাস আগে পারভীনকে হত্যা করেন রসু খাঁ। রসু যাদের হত্যা করের তারা সবাই ছিলেন গার্মেন্টসকর্মী। পরে তাকে এবং তার দুই সহযোগীকে পারভীন হত্যা মামলায় আসামি করা হয়।
ওই হত্যা মামলায় সিরিয়াল কিলার রসু খাঁসহ (৪৫) তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন আদালত। অপর দুইজন হলেন, রসু খাঁর ভাগনে জহিরুল ইসলাম (৩৫) ও তার সহযোগী মো. ইউনুছ (৩৮)।
২০১৮ সালের ৬ মার্চ চাঁদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবদুল মান্নান এ রায় দেন। এরপর মামলার নথিসহ ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। একই সঙ্গে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন আসামিরা।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রসু খাঁ চাঁদপুর সদর উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের মদনা গ্রামের মুন খাঁ ওরফে আবু খাঁর ছেলে। জহিরুল পার্শ্ববর্তী ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের সৈয়াল বাড়ির মো. মোস্তাফার ছেলে। আর ইউনুস একই গ্রামের মৃত মিসির আলীর ছেলে।
হত্যার শিকার পারভীন আক্তার ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা ইউনিয়নের পালতালুক গ্রামের আবুল কালামের স্ত্রী। তার বাবার নাম মৃত কাজল খান।
মামলার বিবরণে বলা হয়, ২০০৯ সালের ২০ জুলাই রাতে রসু খাঁ ও অপর আসামিরা ফরিদগঞ্জ উপজেলার মধ্য হাঁসা গ্রামের মাঠে পারভীন আক্তারকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। এ ঘটনার পরদিন স্থানীয়দের সংবাদের ভিত্তিতে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।
ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ওই সময়ে পারভীনের পরিচয় না জানায় তৎকালীন ফরিদগঞ্জ থানার এসআই মীর কাশেম আলী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তৎকালীন এসআই মোশফিকুর রহমান ঘটনার তদন্ত শেষে একই বছরের ১৩ ডিসেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
সে সময় চাঁদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হাবিবুল ইসলাম তালুকদার জানান, মামলাটি দীর্ঘ ৯ বছর চলমান থাকা অবস্থায় আদালত ১৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। পাশাপাশি আসামিরা তাদের অপরাধ স্বীকার করায় আদালত এ রায় দেন। রসু খাঁর বিরুদ্ধে এ মামলা ছাড়াও আদালতে আরও সাতটি মামলা রয়েছে।
আরএস