সারা দেশের মানুষ বেশ কয়েক দিন ধরে তীব্র গরমে কুপোকাত। একটু স্বস্তি পেতে এসিং কিংবা ফ্যানের উপর নির্ভর হয়ে উঠছে সবাই। অবশ্যই গরমের তীব্রতা এতোই বেশি যে ফ্যানের বাতাসও মানুষকে শীতল করতে পারছে না। তাই তো শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের পেছনেই ছুটছে মানুষ।
তবে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে এসি। এছাড়া এর অনেক অনেক বিদ্যুৎ বিল মেটানোর সাধ্যই বা আছে কয় জনের। এদিকে এসির আছে অনেকগুলো খারাপ দিক। যেমন এসি বিস্ফোরণ, অতিরিক্ত বিদ্যুত অপচয় এবং পরিবেশের ক্ষতি।
আজ জেনে নেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা এসি ছাড়াই ঘর শীতল রাখার কয়েকটি সহজ উপায়।
ঘরের তাপমাত্র নিয়ন্ত্রণে রাখতে জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি হলো বরফ পদ্ধতি। ফ্যানের নিচে বাটিতে বরফের টুকরা রাখলে এটি গরম তাপ শুষে নিয়ে গলতে শুরু করবে। এতে ঘর ঠাণ্ডা রাখা যায়।
সিলিং ফ্যানের ঘূর্ণন পদ্ধতি
গ্রীষ্মকাল ও শীতকাল, এই দুই মৌসুমে সিলিং ফ্যান দুইভাবে সেট করতে হবে। গ্রীষ্মকালে ফ্যান সেট করতে হবে ঘড়ির কাটার বিপরীত দিকে। আর শীতকালে ফ্যান সেট করতে হবে ঘড়ির কাটা যে দিকে ঘুরে সেদিকে। গরমের সময় এমন ঘূর্ণনের ফলে ফ্যান গরম বাতাস দ্রুত অপসারণ করতে পারে।
মোটা বা ডাবল গ্লাসযুক্ত জানালার ব্যবহার
মোটা কিংবা দুই স্তর বিশিষ্ট গ্লাস জানালায় ব্যবহার করা যেতে পারে। ডাবল গ্লাসযুক্ত জানালার কাঁচের স্তর ৩ থেকে ১০ মিলিমিটার পুরু হয়ে থাকে। এসব কাঁচের মধ্যকার জায়গা গ্যাস দিয়ে পূর্ণ করা হয় এবং গ্যাস যেন বেড়িয়ে যেতে না পারে তাই সিল করে দেওয়া হয়। কাঁচের দুই স্তরের মধ্যে শূন্যস্থান সিল করা থাকে বলে ডাবল গ্লাসযুক্ত জানালা সাধারণ জানালার থেকে অনেক ভাল তাপ নিরোধক হিসেবে কাজ করে।
মোটা এবং গাঢ় রঙের পর্দা ব্যবহার
গরম কমাতে মোটা কাপড়ের এবং গাঢ় রঙ যেমন কালো, বেগুনী, নীল, খয়েরী এমন রঙগুলো বাছাই করতে পারেন। কারণ এগুলোর তাপ শোষণ ক্ষমতা বেশি, তাপ বিকিরণ ক্ষমতা কম থাকে৷
প্রাচীন মিশরীয় পদ্ধতি
এই পদ্ধতিতে সাধারণ একটি নিয়ম ছিল শীতল জলাবদ্ধতা তৈরি করা। জানালা-দরজায় বা রোদ প্রবেশের স্থানে ভেজা চট বা মাদুর রেখে দিত মিশরীয়রা। রোদের তাপ ভেজা মাদুর বা ভেজা চটের পানি শুকিয়ে ঘরের ভেতরের তাপমাত্রা তেমন একটা বাড়ানোর সুযোগ পেতো না।
তাপ প্রবেশ রোধ করা
জানালার মাধ্যমে প্রায় ২৫ শতাংশ তাপ ঘরে প্রবেশ করতে পারে। ঘর ঠাণ্ডা রাখতে দিনের বেলা বা দিনের যে সময় সবচেয়ে বেশি রোদ্রৌজ্জ্বল থাকে তখন তাপ প্রবেশ করার পথ বন্ধ করে দিলে উত্তাপ কম থাকবে।
রাতে ঘরে বাতাস প্রবেশ করতে দেয়া
রাতে ঘুমাবার আগে জানালা খুলে শীতল বাতাস প্রবেশ করতে দিতে হবে। এতে করে ভেতরের গরম বাতাস বাইরে বের হয়ে ঘরকে শীতল করবে। দিনের বেলা নতুন ভাবে রোদ না ঢুকলে এই শীতল বাতাস প্রশান্তি দেবে।
প্রয়োজন ছাড়া বৈদ্যুতিক যন্ত্র চালু না করা
যেকোনো সক্রিয় ডিভাইস চালু থাকলে তা নির্দিষ্ট কাজের পাশাপাশি কিছু শক্তি তাপ উৎপাদনে ব্যয় করে। এতে ঘর গরম হয়। তাই অব্যবহৃত যে কোনো কিছু বন্ধ করা উচিত। কম্পিউটার, টেলিভিশন, ওভেন, কিংবা এমন ডিভাইস যা প্রচুর তাপ উৎপন্ন করে তা বন্ধ রাখতে হবে। ঘরে ব্যবহৃত বাল্বগুলোও তাপের উৎস। তাই সব লাইট বন্ধ করা সবসময় সম্ভব না হলেও আলো যতটা সম্ভব কম রাখতে পারেন।
উত্তাপ কমাতে ঘরে গাছ রাখা
বেশ কিছু গাছ আছে যা তাপমাত্রা ঠাণ্ডা রাখতে সক্ষম। যেমন, অ্যালোভেরা, অ্যারিকা পাম, গোল্ডেন পোথোস বা সাদা-সবুজ মিশেলের মানি প্ল্যান্ট, স্নেক প্ল্যান্ট বা ফণিমনসা, ফার্ন ইত্যাদি। এছাড়াও আইভি, দ্রুত বর্ধনশীল লতা এবং আলংকারিক গৃহস্থালির উদ্ভিদ দেয়াল বা জানালায় ব্যবহার করা যেতে পারে। সৌন্দর্য বর্ধনের পাশাপাশি তাপ আর রোদ প্রবেশ নিরোধক হিসেবেও এটি কাজ করবে।
এইচআর