বিশ্ব ভালোবাসা দিবস নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। বিশ্ব জুড়েই মানুষ মুখিয়ে থাকে দিনটির জন্য। আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। বিশ্বব্যাপী নানা রঙে নানা ঢঙে উদযাপিত হয় দিবসটি। আসুন জেনে নেই বিশ্বের কয়েকটি দেশে কীভাবে উদযাপিত হয় ভালোবাসা দিবস।
শুরুতে বাংলাদেশের ভালোবাসা দিবস উদযাপনের বিষয়টি জেনে নেবো।
বাংলাদেশ:
১৯৯৩ সালের দিকে আমাদের দেশে ভালোবাসা দিবসের আবির্ভাব ঘটেছে। সাংবাদিক ব্যক্তিত্ব শফিক রেহমান পড়াশোনা করেছেন লন্ডনে। পাশ্চাত্যের রীতিনীতিতে তিনি ছিলেন বেশ অভ্যস্ত। দেশে ফিরে তিনিই ভালোবাসা দিবসের সূচনা করেন। এ নিয়ে অনেক ধরনের মতবিরোধ থাকলেও শেষ পর্যন্ত শফিক রেহমানের চিন্তাটি নতুন প্রজন্মকে বেশি আকর্ষণ করে। সেই থেকে আমাদের দেশে এই দিনটি উদযাপন শুরু হয়েছে। এই দিনে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও প্রচুর আয়োজন থাকে। ফুল, কার্ড, বিভিন্ন ধরনের উপহার দিয়ে প্রিয়জনকে ভালোবাসা জানানো হয়। এছাড়া ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে বিশেষ জায়গায় ঘুরে বেড়ানের প্রবণতাও এদিন দেখা যায়। যারা ভালোবাসার মানুষকে এখনও পাননি বা প্রিয় মানুষটিকে ভালোবাসার কথা বলতে পারেননি তারা তো উন্মুখ হয়ে থাকেন এই দিনটির জন্য। তারা প্রতীক্ষা করেন এই দিনটিতে একটা লাল গোলাপ নিয়ে প্রিয়জনকে বলবেন নিজের ভালোবাসার কথা।
ব্রিটেন:
ব্রিটেনে ভালোবাসা দিবসের জন্ম চতুর্দশ থেকে পঞ্চদশ শতাব্দীতে। সেখানে ভালোবাসা দিবস নিয়ে উল্লাস একটু বেশিই থাকে। প্রচলিত ধারণামতে, ভালোবাসা দিবসে ব্রিটেন এবং ইতালির অবিবাহিত মেয়েরা সূর্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে উঠে। তারা বিশ্বাস করে, সূর্যোদয়ের পর প্রথম যে পুরুষকে তারা দেখবে সে অথবা তার মতোই কোনো পুরুষ এক বছরের মধ্যে তাদের জীবনসঙ্গী হবে। এ ছাড়া অবিবাহিত মেয়েরা কাগজে পছন্দের ছেলের নাম লিখে সেই কাগজ মাটির বলে পেঁচিয়ে পানিতে ফেলে দেয়। যে নামের কাগজ সবার আগে ভেসে উঠবে তার সঙ্গেই বিয়ে হবে মেয়েটির।
কানাডা:
কানাডায় ভালোবাসার বিশেষ দিনটি বেশ উৎসাহের সঙ্গেই পালিত হয়। এদিনে সারাদেশে পার্টির আয়োজন করে স্বামী-স্ত্রীকে, স্ত্রী-স্বামীকে, প্রিয়জন-প্রিয়জনকে ভালোবাসার কথা জানায়। এখানে ফুলের মধ্যে গোলাপের প্রাধান্যই বেশি থাকে। এরপর চকলেট, কার্ড, ক্যান্ডি তো থাকেই। শিশুরা বন্ধুদের সঙ্গে কার্ড বিনিময় করে। নিজের হাতে উপহার বানিয়ে শিক্ষক এবং মা-বাবাকে দেয়। দিনটিকে উদযাপন করতে স্কুলের সিনিয়র সেকশনে থাকে ড্যান্স পার্টির আয়োজন।
অস্ট্রেলিয়া:
অস্ট্রেলিয়ায় ভালোবাসা দিবসে এসএমএস, ই-মেইল মিডিয়া ব্যাপক ব্যবহৃত হয়ে থাকে। জরিপে দেখা গেছে, অস্ট্রেলিয়ার ছেলেরা ভালোবাসার ক্ষেত্রে মেয়েদের চেয়ে অনেক বেশি উদার। এ দিন উপলক্ষেও ছেলেরা মেয়েদের তুলনায় অনেক বেশি উপহার কেনেন। আর তা প্রিয়জনকে দিয়ে ভালোবাসার কথা জানান।
যুক্তরাষ্ট্র:
বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে কীভাবে এলো ভালোবাসা দিবস? চলুন একটু পেছনে ফিরে তাকাই। ১৯ শতাব্দীতে এক ব্রিটিশ অধিবাসী প্রথম উত্তর আমেরিকায় ভ্যালেন্টাইনস ডে’র ধারণা নিয়ে আসেন। ১৮৪৭ সালের দিকে ভ্যালেন্টাইন’স ডে ছড়িয়ে যায় পুরো আমেরিকায়। বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে গিফট কার্ড আদান-প্রদানের রীতির প্রচলন হয়। সে সময় কার্ড এবং গোলাপ ছিল ভ্যালেন্টাইন’স ডের মূল উপহার। ১৯৮০ সালের দিকে ডায়মন্ড কোম্পানিগুলো ভ্যালেন্টাইন’স ডে প্রমোট করা শুরু করে। সেই থেকে জুয়েলারি চলে আসে প্রচলিত গিফটের তালিকায়। ভালোবাসা দিবসে সবচেয়ে বেশি কার্ড ও উপহার বিক্রি হয় আমেরিকায়। এই দিনকে ঘিরে ব্যবসায়ীরা নানা আয়োজন করেন। এ দিন মূলত কার্ড, চকোলেট, ফুল বিনিময় করা হয়। দেশটিতে নানা জায়গায় ভ্যালেন্টাইনস ডিনার, ডান্স পার্টির ব্যবস্থা থাকে। অনেকে বাসায়ও পার্টির আয়োজন করে। শিশুদেরও থাকে অনেক ব্যস্ততা। স্কুলগুলোতে আয়োজিত হয় গান, নাচ, নাটক।
ভারত:
এদিন আবেগের আদান-প্রদান করতে প্রেমিকরা মূলত ভিড় জমায় রেস্টুরেন্ট, সিনেমা হলগুলোতে, পাব অথবা পিৎজা পার্লারে। শুধু প্রেমিক নয় বাবা-মা, ভাইবোন, বন্ধুদেরও ভালোবাসা জানায় ভারতীয়রা। এদিনটিতে তরুণ-তরুণীদের একসঙ্গে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। যারা এখনও সিঙ্গেল তারা পছন্দের মানুষকে ভালোবাসার কথা বলার জন্য এই দিন উন্মুখ হয়ে থাকেন। কার্ড বা ফুল দিয়ে ভালোবাসার শুভেচ্ছা জানায় একে অপরকে।
চীন:
চীনাদের নিজস্ব সংস্কৃতিতে ভালোবাসার জন্য আলাদা একটি দিন আছে। চায়নিজ ক্যালেন্ডারে সপ্তম চান্দ্র মাসের সপ্তম দিনে থাকে এই বিশেষ দিনটি। দিনটিকে বলা হয় কী জি। অথবা ‘দ্য নাইট অব সেভেনস’। গতানুগতিক ভ্যালেন্টাইনস ডে থেকে দিনটি অনেক আলাদা। নির্দিষ্ট কিছু রীতি রয়েছে দিনটিকে কেন্দ্র করে। এ ছাড়া ফুল, চকলেট, কার্ড আদান-প্রদানও চলে। চীনারা অন্যদের চেয়ে একটু আলাদাভাবেই তাদের ভালোবাসার দিনটি উদযাপন করে।
দক্ষিণ আফ্রিকা:
সাধারণত রোমান্টিক জুটি একান্তে সময় কাটায় দিনটিতে। অনেকে প্রিয়জনকে মনের কথা জানায় বিশেষ দিনটিতে। এ ছাড়াও কোনো কোনো জায়গায় পালিত হয় ‘লিউপারক্যালিয়া’ নামে রোমান ফেস্টিভ্যাল। এখানে যার যার পোশাকে তাদের প্রেমিক-প্রেমিকার নাম প্রিন্ট করা থাকে। এ ছাড়াও আয়োজন থাকে পাব ও রেস্টুরেন্টে। ড্যান্স পার্টি তো থাকেই।এছাড়াও বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে নিজস্ব সাংস্কৃতিক আবহে উদযাপিত হয় ভালোবাসা দিবস।
সাহিদুল/ইএইচ