তিমির হননের কবি জীবনাননন্দ দাশের ৬৯তম প্রয়াণবার্ষিকী আজ। ১৯৫৪ সালের ২২ অক্টোবর কলকাতার বালিগঞ্জে শম্ভূনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে দুর্ঘটনা পরবর্তী নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হন ১৪ অক্টোবর। পথ চলতে গিয়ে এক ট্রাম দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। ট্রামের ক্যাচারে আটকে তার শরীর দলিত হয়ে ভেঙে যায় কণ্ঠ, ঊরু ও পাঁজরের হাড়।
যুগস্রষ্টা এই কবির ভারতের কলকাতায় মৃত্যু হলেও তার আদি নিবাস ছিল বরিশালে। যদিও কবির পূর্বপুরুষরা ঢাকা জেলার (বর্তমান মুন্সীগঞ্জ) বিক্রমপুর পরগণার কুমারভোগের গাওপাড়ার বাসিন্দা ছিলেন। গ্রামটি পদ্মায় বিলীন হয়ে যায়। ১৮৮৩ সালের দিকে বিক্রমপুর থেকে বরিশালে চলে আসে দাশ পরিবার।
জন্মসূত্রে দাশ পরিবার ধর্মে সনাতন হলেও পরবর্তীতে ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করেন। বরিশালে ব্রাহ্মসমাজ আন্দোলনের অন্যতম ভূমিকা ছিল এই পরিবারের। জীবনানন্দ দাশের বাবা সত্যানন্দ দাশগুপ্ত বরিশাল ব্রজমোহন স্কুলের শিক্ষক, প্রাবন্ধিক, বরিশাল ব্রাহ্মসমাজের সম্পাদক ও ব্রাহ্মসমাজের মুখপত্র ব্রাহ্মবাদী পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।
তার মা কুসুমকুমারী দাশের কবিতা ‘আদর্শ ছেলে’ (আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে/ কথায় না বড় হয়ে কাজে বড়ো হবে) আজও শ্রেণিপাঠ্য। কবিতাটিকে জাতি গঠনের মানদণ্ড বিবেচনা করা হয়। ছেলেবেলায় জীবনানন্দকে ডাকা হতো ‘মিলু’ নামে।
জীবদ্দশায় প্রচণ্ড অর্থকষ্টের মধ্য দিয়ে দিন পার করতে হয়েছে কবিকে। কবিতা লেখার জন্য অধ্যাপনার চাকরি থেকে রাসটিকেট হয়েছেন। জীবিকার অন্বেষণ করেছেন বরিশাল, বাগেরহাট, কলকাতায়। তবে তার মৃত্যুর পরে আলোচনায় উঠে আসে অমর লেখনী।
সৃষ্টিশীল কবিতা রচনা আর জীবনে দারিদ্র্যের সংঘাত এই দুই প্রায়ই কবিকে স্ত্রী লাবণী দাশের কাছে শুনতে হয়েছে খোঁটা। অথচ জীবনানন্দ দাশের কবিতা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে। তিরিশের দশকের এই কবি একবিংশ শতাব্দীর এই দ্বিতীয় দশকেও সবচেয়ে বেশি চর্চিত হচ্ছেন।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের আগে সপরিবারে বাংলাদেশ ছেড়ে স্থায়ীভাবে কলকাতায় চলে যান। যাওয়ার আগে তিনি বা তার পরিবার এক একরের বেশি জমির বাড়িটি অবিক্রিত রেখে যান। পরবর্তীতে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে বাড়িটি বিক্রি দেখানো হয়েছে। তবে জীবনানন্দ দাশের বাড়িটি পুনরুদ্ধারের দাবি জানিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে কবিপ্রেমী ও সংস্কৃতিকর্মীরা।
এইচআর