যতবার মন খারাপ হয়, অশ্রু ঝরে গোপনে- খুঁজলে পাবেন তার অন্তরালে আপন মানুষ, প্রিয় মানুষ কারণে নয় বরং অকারণেই দাঁড়িয়ে আছে। কথায় কথায় আঘাত করে, বুকের ঘরে ব্যথা দিয়ে কী সুখ মেলে তা বাতিকগ্রস্ত অসুখীরাই ভালো জানে!
বিশ্বাস ভেঙে যারা ঠোঁট চেপে হাসে, বিপদ দেখে যারা সুযোগে সটকে পড়ে তারা কাছের মানুষ, অতি প্রিয় ঘিরে রাখা মানুষ! যারা নিন্দা করে, যারা দুর্নাম রটায় তারা কারা? ঘরের মানুষ, কাছের মানুষ! আমাদের নিত্যদিনের জীবনাচারের অত্যন্ত বিশ্বস্তজন। অথচ বিশ্বাসের পরীক্ষায় বারবার ব্যর্থ হয় এবং ক্ষতির সমীক্ষায় প্রত্যেকবার দায়ী! যে মানুষ দূরের মানুষ সে মানুষ প্রিয় মানুষ, প্রাণের মানুষ হয়ে ওঠে না! কাজেই তাদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা কম! আমরা প্রত্যাশা করি, উপকার না হোক অন্তত ক্ষতি যাতে না হয়। অথচ বারবার চাওয়ার উল্টো দিকটাই পাওয়া হয়!
অবহেলা জমতে জমতে হৃদয়ের আকাশে যে কালমেঘে বর্ষা নামে তার ভাষা মান- অভিমান বুঝতে না পারা মানুষের হৃদয় পর্যন্ত বিশ্বাসমাখা ভালোবাসার আবেদন পৌঁছে না। ভুল মানুষ অবলীলায় সম্পর্ক খুন করতে পারে! হাসতে হাসতে পড়াতে পারি ফাঁসি! যারে শতবার বলেছিলে ভালোবাসি সেই কী এখন তোমার বর্তমান কিংবা নিশ্চিত আগামী? অথচ তখন কত প্রলোভন ছিল, বাক্য-কথার ছন্দে ছন্দে ছিলে সুখের আগমন! আজ কোথায় হারিয়ে গেছে? কার দোষে? এটা তো সেই জীবনে যেখানে ভুল মানুষের ভুল ঠিকানায় জীবন বাঁধা পড়ে! এখানে ভালো লাগা যে গতিতে খারাপ লাগায় বদলে যায়, অনুরূপ গতিতে মন্দ লাগা ভালো লাগায় বদলায় না। এখনো বিশ্বাস গড়ে শম্বুক গতিতে, অথচ বিশ্বাস ভাঙে ঘোড়ার রেসে!
জীবন ফুলের চেয়ে ভুলের দেখা পায় বেশি! সুখ পায় তবে তার চারিদিকে অসুখ ঘেরা! একটু অসাবধানেই পা হরকে যায়, জীবন চলে বিপথে! কোমল হৃদয় ভেঙে যায় টুট্ টুট্ করে! যে আয়োজন তা বিশ্বাসের পিরামিড গড়ার চেয়ে বরফের পাহাড় গলানোর উষ্ণায়ন তৈরিতে ব্যস্ত। সৃষ্টি নয় এখানে ধ্বংসই সিদ্ধহস্তের সিদ্ধান্ত!
আজকাল প্রিয় মানুষগুলো দায় নেয় না! ছদ্মবেশীরা বিষাক্ত ছোঁয়া দিতে দিতে একসময় প্রিয়জনের প্রয়োজন মিটে গেলে তারাও স্বরূপে আবির্ভূত হয়! আসল চেহারা দেখায়! তা যে কত কুৎসিত তা যে দেখেছে সে জেনেছ! তখন বুক দেখানোর
কৌশল বদলে পিষ্ট প্রদর্শন করে নিরেট বাস্তবতা জানায়। সমস্ত জীবনের স্বপ্ন-প্রেম হুড়মুড়িয়ে নিমিষেই ধ্বংসস্তূপের পাহাড় জমায়! আশারা হারায়।
দীর্ঘশ্বাসের পরতে পরতে এককালে বিশ্বস্ত মানুষের অবিশ্বাস্য কদাচার জমে থাকে। যারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে, যারা বিশ্বাস মাড়িয়ে চলে কিংবা যারা মুখোশে নিজেকে খুব রকমে আড়াল করে তারা পরিচিত মানুষ। অথচ তাদের এই অপরিচিত আচরণ মনঃকষ্টের নিত্য কারণ হয়। বারবার এ কারণ রিফিল হয়! দীর্ঘশ্বাসের রসদ দেয়। মানুষকেই এখন বেশি ভয়! যে আঘাত পেয়েছে একবার, যার বিশ্বাসের ঘরে হয়েছে ডাকাতি কিংবা যে কথা রাখেনি- সেই তিক্ত অভিজ্ঞতায় মানুষ মানুষকে সাপ ভাবে! মানুষের ছোবল থেকে রক্ষা পেতে নিজেকে নানাভাবে গুটিয়ে রাখে! তখন কথায় স্বাচ্ছন্দ্য থাকে না কিংবা বিশ্বাসের ভিত আর শক্তভাবে গড়ে না।
তবুও শক্ত হয়ে দাঁড়াতে হয়। মেরুদন্ড সোজা করে সীমান্ত বিস্তৃত আঙিনয় ফেলতে হয় দৃষ্টি।নতুন সৃষ্টির আশায় আবারও স্বপ্ন বুনতে হয়। সকল চড়াই-উতরাই পেরিয়ে জীবনকে সঠিক বন্দরে পৌঁছাতে দেখাতে হয় দৃঢ়তা।
ভুল মানুষ, ভুল সময় জীবনের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেয় তবুও স্বপ্নই মানুষকে চলতে, বলতে এবং করতে প্রেরণা দেয়। কথার আঘাতে, আচরণীয় অনৈচিত্যে কিংবা বিধ্বস্ত বিশ্বাসের আঙিনা পেরিয়েও আবার আশায় বুক বাঁধতে হবে। জীবন যতদিন সুখ-শান্তি, দুঃখ-অশান্তি ঠিক ততদিনের আবর্তনের পরিবর্তিত পরিবর্তন সাধন করবে। কাজেই মানুষ চিনে, ওয়াক্ত বুঝে নিজের নিজের কাছে বিশ্বস্ত রাখতে হবে। তবেই দুঃখ, মান-অভিমান কিংবা অভিযোগ-অনুযোগের কমতি হবে! বাড়তি সুখের আশায় কমতি হোক লোভ, অপরের নামে কেবল অভিযোগ!
বিআরইউ