সরকার যখন খরচ বাঁচাতে প্রকল্পভিত্তিক ব্যয় বরাদ্দ বিবেচনা করছে তখন বড় প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন, অগ্রগতি এবং ঋণের চাপ কতটা? দেশের চলমান বড় প্রকল্প, ব্যয়, নিজস্ব ব্যয় ও বৈদেশিক ঋণ কতটুকু?
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, যেটা নির্মাণে ব্যয় হবে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি টাকা। এরমধ্যে ৯১ হাজার ৩৯ কোটি টাকা অর্থাৎ ৮০ ভাগই বৈদেশিক ঋণ। ২০২৫ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৩৭.৭ ভাগ।
মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প
অগ্রাধীকার ভিত্তিতে আরেকটি বড় প্রকল্প হলো মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, যার ৯১ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা নির্মাণ ব্যয়ের ৮৭ ভাগই বিদেশী ঋণ। প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়েছে ২০১৪ সালে শেষ হওয়ার কথা ২০২৬ সালে এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৩২.০৬ ভাগ।
ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্প
ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্প যেটা উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০.১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে প্রকল্পটির ব্যয় ২৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। যার ৭০ ভাগেরও বেশি বৈদেশিক ঋণ। ১২ বছর মেয়াদী এই প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২৪ সালে এখন পর্যন্ত এম আর টি লাইন সিক্সের সার্বিক কাজের অগ্রগতি ৬৫ ভাগ। যদিও চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে দিয়াবড়ি-আগারগাঁও অংশে বাণিজ্যিক রেল চলাচল শুরু করতে চাই সরকার।
এমআরটি লাইন-১
এমআরটি লাইন ১ প্রকল্পটির আওতায় বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত রেলপথ হবে মাটির নিচে। নতুনবাজার থেকে সংযুক্ত হয়ে এর একটি অংশ যাবে পুর্বাচলে। ৩১ কি.মি এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদিশিক ঋণ ৩৯ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা, এখন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি মাত্র দেড় ভাগ।
এমআরটি লাইন-৫
গাবতলী থেকে শুরু হয়ে আফতাবনগর হয়ে পলিরপাম গিয়ে পোঁছাবে এমআরটি লাইন-৫। এর দৈর্ঘ্য ২৫ কি. মি। এ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৪১ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা। প্রকল্পটির ৭০ ভাগ ব্যয় আসবে বৈদেশিক ঋণ থেকে। বাস্তবায়নের মেয়াদ ২০২৮ সাল পর্যন্ত, এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৩.১১ ভাগ।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে পদ্মাসেতু রেলসংযোগ প্রকল্প নামে আলাদা একটি প্রকল্পের কাজ চলমান। ঢাকা থেকে মওয়া হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কি.মি দীর্ঘ এই রেলসংযোগ নির্মাণে ব্যয় হবে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা, এর মধ্যে ২১ হাজার ৩৫ কোটি টাকা অর্থাৎ অর্ধেকের বেশি বৈদেশিক ঋণ। ৮ বছর মেয়াদী প্রকল্পটির কাজ ২০২৪ সালে শেষ হওয়ার কথা অথচ এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হার ৪৬.০৬ ভাগ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মজিব রেলসেতু
যমুনা নদীর ওপর তৈরি হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতু যেটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা, ব্যয়ের ৭২ ভাগ আসবে বৈদেশিক ঋণ থেকে। আগামী বছরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য থাকলেও এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি প্রায় ২৩ ভাগ।
এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর চারলেন বিশিষ্ট মহাসড়ক
পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের জন্য গুরুত্বপুর্ণএকটি প্রকল্প হলো, এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর চারলেন বিশিষ্ট মহাসড়ক । এ প্রকল্পের জন্য ১১ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ। নিজস্ব অর্থায়ন ৫ হাজার কোটি টাকার মত, প্রায় ৭০ ভাগ বৈদেশিক ঋণে নির্মিত মহাসড়কটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো ২০২৬ সালে, এখন পর্যন্ত এর ১/৪ অংশ বাস্তবায়ন হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল
কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল, যেটা চট্টগ্রামের পতেঙ্গাকে যুক্ত করবে আনোয়ারা উপজেলার সাথে। তথ্য বলছে, এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা, যার ৫৭ ভাগই বৈদেশিক ঋণ।
তবে ডলারের দাম বৃদ্ধি এবং নতুন করে কিছু বিষয় যুক্ত হওয়ায় এ প্রকল্পের ব্যয় ৭শ কোটি বাড়ানো হচ্ছে। চলতি বছরের মধ্যে কর্ণফুলী ট্যানেলের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও সর্বশেষ তথ্য বলছে, এর অগ্রগতি এখন পর্যন্ত ৮৭ ভাগ।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ৩য় টার্মিনাল
সক্ষমতা বাড়াতে ৩য় টার্মিনাল তৈরি করা হচ্ছে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে, প্রকল্পটির ১ম অংশের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা, যার ৭৫ ভাগই বিদেশী ঋণ। ২০২৪ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য থাকলেও এখন পর্যন্ত এ কাজের অগ্রগতি ২৫ ভাগেরও কম।
সিপিডির গবেষণা বলছে, প্রধান ২০টি প্রকল্প নির্মাণে ৪২.৮৬ বিলিয়ন ডলার বিদেশী ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ। স্থানীয় মুদ্রায় যা ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৪০টি প্যকেজের আওতায় এই ঋণ নেয়া হয়েছে। ২০২৪ সাল নাগাদ ১৩টি প্যাকেজের আওতায় নেয়া ৩২ বিলিয়ন ডলার ঋণের সুদ পরিশোধ হওয়ার কথা।
ইএফ